২৫শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।১০ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।বৃহস্পতিবার

চীন জুড়ে করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ে গভীর উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

চীনে নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মারাত্মক সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তিন শ’র বেশি সংক্রমণ গত দশ দিনে শনাক্ত করা হয়েছে।

চীনের যে নগরী হতে করোনাভাইরাস প্রথম ছড়িয়েছিল, সেই উহান নগরীতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ধরা পড়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, উহানে মোট সাতজনের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে।

এই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে চীন খুব ঝুঁকির মধ্যে আছে কীনা তা নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে এখন আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।

চীনের গণমাধ্যমে এখন এই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবই শিরোনাম দখল করে আছে। দেশটির শীর্ষস্থানীয় একজন বিশেষজ্ঞ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার বিভিন্ন শহরে নতুন করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং কোটি কোটি মানুষকে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

চীনে কত মানুষ পুরোপুরি টিকা পেয়েছে তা স্পষ্ট নয়, তবে চীনা কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, এ পর্যন্ত ১৬০ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।

এখন চীনের মোট ১৫টি প্রদেশ এবং পৌর এলাকায় কোভিডের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ টি এলাকার সংক্রমণই চীনের পূর্বাঞ্চলীয় জিয়াংশু প্রদেশের নানজিং এর সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করা হচ্ছে।

চীনে নতুন করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য কর্তৃপক্ষ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এবং সেখানকার পর্যটন মৌসুমকে দায়ী করছে।

চীনে শনাক্ত হওয়া সংক্রমণ অন্য দেশের তুলনায় এখনো বেশ কম। কিন্তু গত বছর প্রথম সেদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সফলভাবে নিয়ন্ত্রণে আনার পর এই প্রথম এত বেশি সংখ্যায় এবং এত বেশি এলাকায় সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই দফায় প্রথম কোভিডের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল নানজিং বিমানবন্দরে। রাশিয়া থেকে আসা একটি উড়োজাহাজ পরিষ্কারের কাজ করেছিলেন যে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা, তারাই প্রথম আক্রান্ত হন।

এরপরই চীনা কর্তৃপক্ষ অতিদ্রুত শহরটির ৯২ লাখ মানুষের সবাইকে পরীক্ষা করেন এবং স্থানীয়ভাবে লকডাউন জারি করেন।

কিন্তু এই সপ্তাহান্তে চীনের হুনান প্রদেশের জাংজিয়াজি শহরে বেশ কিছু সংক্রমণ ধরা পড়ে।

মনে করা হয়, নানজিং এর কিছু মানুষ সেখানে গিয়েছিলেন এবং তাদের মাধ্যমেই সেখানে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এখন শহরের একটি থিয়েটারে যে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ গিয়েছিলেন, তাদের সবাইকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। একটি রিপোর্টে বলা হচ্ছে, এই থিয়েটারে এক দিনের প্রদর্শনীতেই প্রায় দুই হাজার মানুষ যোগ দিয়েছিলেন।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, নগরীর আকর্ষণীয় স্থানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং পর্যটকদের নগরী ছাড়ার আগে কোভিড টেস্ট করতে বলা হয়েছে।

জাংজিয়াজি নগরীকে এখন চীনের করোনাভাইরাসের নতুন ‘গ্রাউন্ড জিরো’ বলে বর্ণনা করেছেন চীনের শীর্ষ এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঝং নানশান।

নতুন দফা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন বেইজিং পর্যন্ত পৌঁছেছে। সেখানে স্থানীয়ভাবেও কিছু সংক্রমণ ঘটেছে।

যেসব এলাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, সেসব এলাকার সাথে বেইজিং এর সবধরণের বিমান, বাস এবং অন্যান্য ভ্রমণের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাজধানীতে সব ধরণের পর্যটকদের বেইজিং এ ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেবল জরুরী কাজের বেলাতেই কোভিড টেস্ট নেগেটিভ হলে শহরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে।

উত্তরের হেনান প্রদেশের জাংজু শহরেও সংক্রমণ ঠেকাতে জোর চেষ্টা চলছে। এই শহরে মারাত্মক বন্যার পাশাপাশি করোনাভাইরাসও ছড়িয়েছে।

চীনের গ্লোবাল টাইমস পত্রিকায় এবারের সংক্রমণকে উহানের পর সবচেয়ে মারাত্মক বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। এক পৃথক সম্পাদকীয়কে এ পত্রিকায় বলা হয়েছে, কোভিড প্রতিরোধের ব্যবস্থায় মারাত্মক ত্রুটি ছিল।

সম্পাদকীয়তে বলা হয়, কেবল একটি ত্রুটির কারণে যদি দেশজুড়ে এতগুলো প্রদেশ এবং অঞ্চল আক্রান্ত হয়, তাহলে সেটা বেশ উদ্বেগজনক… এ থেকে বোঝা যায় মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের যে ধারাবাহিক অগ্রগতি, সেটা আরো জোরদার করতে হবে।

এই নতুন দফা সংক্রমণের কারণে টিকা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কারণ টিকা নিয়েছে এমন অনেক মানুষও আক্রান্ত হয়েছে।

চীনে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশনের গবেষক শাও ইমিং সাংবাদিকদের বলেছেন, টিকা নেয়া লোকজনের মধ্যেও সংক্রমণ হতে পারে, এটা প্রত্যাশিত।

চীনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত দুটি টিকা হচ্ছে সাইনোভ্যাক এবং সাইনোফার্মের। বিশ্ব জুড়ে অনেক ক্লিনিকাল পরীক্ষায় এই দুটি টিকা কোভিডের সংক্রমণ ঠেকাতে যথাক্রমে ৫০ শতাংশ এবং ৭৯ শতাংশ কার্যকর বলে দেখা গেছে।

তবে মৃত্যু বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো অসুস্থতা ঠেকাতে এই দুটি টিকা খুবই কার্যকর বলে দেখা গেছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনাঃ

খুলনার কয়রায় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৬ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খুলনা জেলার আয়োজনে ও কয়রা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় এ সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সচেতনতামূলক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম মোহসিন রেজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আলম।
এসময় আরও উপস্হিত ছিলেন, কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানি, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল, মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী, বাঙ্গালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী, আমাদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জুয়েল সহ সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ।

নিরাপদ খাদ্যের মূল প্রবন্ধ উপস্হাপন করেন খুলনা জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোঃ মোকলেছুর রহমান।

কয়রায় নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত।

মুক্তাগাছা প্রতিনিধি:

মুক্তাগাছায় চাচা শ্বশুরের দায়ের কোপে ভাতিজা বউ শিউলী আক্তার খুন হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার সকাল ৭টার দিকে উপজেলার বাঁশাটি ইউনিয়নের গোয়ারী উত্তর পাড়া গ্রামে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানাযায়, উপজেলার গোয়ারী উত্তর পাড়া গ্রামের বাসিন্দা সিএনজি চালক শরিফুল ইসলামের স্ত্রী শিউলী আক্তার (৩০) স্বপরিবারে ঘুমাচ্ছিল। এ সময় তার চাচা শ্বশুর মৃত নেওয়াজ আলীর পুত্র সোলায়মান মিয়া তাদেরকে ডাকা ডাকি করে ঘর থেকে বের হতে বলে। দরজা খুলে শরিফুল ও তার স্ত্রী শিউলী ঘর থেকে বের হলে সোলায়মান তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালজ করে। এক পর্যায়ে সোলায়মানের হাতে থাকা দা দিয়ে এলোপাতারি কোপাতে শুরু করে। সোলায়মান দা’ দিয়ে শিউলীর ঘাড়ে কোপ দিলে শিউলী ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে সোলায়মান দা নিয়ে শরিফুলকে ধাওয়া দিলে শরিফ প্রাণ বাঁচাতে পুকুরে লাফ দিয়ে প্রণে বাঁচায়। পরে প্রতিবেশীরা এসে তাকে উদ্ধার করে।
নিহত শিউলী একই উপজেলার মুজাটি গ্রামের মৃত হামেদ আলীর মেয়ে। গত ১২ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। শিউলর ৫ মাসের মেয়ে শিশুসহ ৩ কন্যা সন্তান রয়েছে।
উল্লেখ্য গত শুক্রবার বিকেলে শিউলীর ৬ বছরের মেয়ে লামিয়া এর সাথে সোলায়মানের পুত্রের তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ঝগড়া হয়। সেই ঝগড়ার জেরেই সকালে নিহতের বাড়িতে এসে তাদের ঘুম থেকে ডেকে এ খুনের ঘটনা ঘটান।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মুক্তাগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) জহিরুল ইসলাম মুন্না জানান, শনিবার সকালে উপজেলার গোয়ারী উত্তর গ্রামে হত্যার ঘটনা ঘটে। থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পাঠায়। মামলার প্রস্তুতি চলছে। এঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

মুক্তাগাছায় চাচা শ্বশুড়ের দায়ের কোপে ৩ সন্তানের জননী খুন।