রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি।
পুলিশের জাতীয় সেবা ৯৯৯ থেকে কল পেয়ে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেকে কচুরিপানায় আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধার করেছে রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ। মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর ২০২১) রাঙ্গামাটিতে বড়াতে এসে কাপ্তাই হ্রদে টুরিস্ট বোট নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে কচুরিপানায় আটকে পড়ে ৮জন পর্যটক। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থেকে এস.এম. রিয়াদ জিলানী সহ আট জনের দলটি ভ্রমণে আসে।
পুলিশ জানায়, কাপ্তাই লেকের অনিন্দ্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে স্থানীয় একটি ভাড়া টুরিস্ট বোট নিয়ে শুভলং ঝর্ণায় রওনা দেয়। শুভলং ঝর্ণার অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করে রাঙ্গামাটি শহরে পৌঁছানোর উদ্দেশ্য দুপুর ১২টায় রওনা করে পর্যটক দল। কিন্তু পথেই ঘটে বিপত্তি, এরই মধ্যে কাপ্তাই লেকে সুবিশাল কচুরিপানার একটি ঝাঁক পর্যটকদের বোটকে আটকে ধরে। শত চেষ্টা করেও বোট চালক এই কচুরিপানার ঝাঁক অতিক্রম করতে পারেনি। বোট চালকের প্রাণপণ চেষ্টার একপর্যায়ে বোটের পাখা নষ্ট হয়ে যায়। দুপুর ১২টা থেকে বিকাল চার টা পর্যন্ত কচুরিপানা পরিষ্কার করে নিজেদের উদ্ধারে চেষ্টা করে পর্যটক দল। দীর্ঘ ভ্রমণ করে সারাদিন কিছু না খাওয়ার ফলে সবাই শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যায়।
এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে দেখে পর্যটকদের মনে ভয় জাগতে শুরু করে। উপায়ন্তর না দেখে, বাংলাদেশ পুলিশের জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল দেয় তাদেরই একজন। ৯৯৯ থেকে রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ কন্ট্রোল রুম কল পেয়ে পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেন এর নির্দেশনায় ঘটনাস্থলের কাছে পুলিশ ক্যাম্পে খবর পৌঁছায় পুলিশ কন্ট্রোল রুম এবং পর্যটকদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে। পুলিশ কন্ট্রোল রুমের নির্দেশনা পেয়ে জারুলছড়ি ক্যাম্পের চৌকস পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে নেমে পড়ে। পুলিশ সদস্যরা নিজেদের জীবনের মায়া তুচ্ছ করে কাপ্তাই লেকে সাঁতার কেটে কচুরিপানার ঝাঁকের কাছে পৌঁছায়। কচুরিপানার কাছাকাছি গিয়ে দা, শাবাল দিয়ে কচুরিপানা কাটতে কাটতে সামনের দিকে এগুতে থাকে। দীর্ঘ ০১ ঘন্টা কচুরিপানা পরিষ্কার করে পর্যটকদলের কাছে পৌঁছে পুলিশ সদস্যরা। উদ্ধার করে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের বিস্কুট, পানি প্রভৃতি দিয়ে পর্যটকদের ক্ষুধা নিবারণ করে। পুলিশের এ সহমর্মিতা দেখে পর্যটকরা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে। এতদিন পুলিশ সম্পর্কে মানুষের কাছে নেতিবাচক কথা শুনে এসেছে, বাস্তবে এসে আজকে আসল পুলিশ সদস্যকে দেখেছে।
জারুলছড়ি পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা রাত নয় টার সময় জেলা পুলিশের পলওয়েল পার্কে পর্যটকদের নিয়ে আসে। এসময়, বাংলাদেশ পুলিশ, জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ ও রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পর্যটকরা বলেন, “চারদিকে যখন ঘোর অন্ধকার দেখতে ছিলাম তখনই আলোর পথ দেখিয়ে নিজেদের নতুন জীবন দান করলো বাংলাদেশ পুলিশ । তাই বাংলাদেশ পুলিশ তথা রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ।”
Leave a Reply