রিয়াজুল হক সাগর রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
রংপুর মেট্রো পলিটন পুলিশের ৩বছর পূর্তি ও ৪র্থ বছরে পদার্পণ উপলক্ষ্যে সাফল্যগাঁথা কথা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করলেন কমিশনার আব্দুল আলীম মাহমুদ। নবগঠিত রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশকে আধুনিকায়নসহ নতুন সাজে ও পরিকল্পিত নিরাপত্তা পরিবেষ্টনীতে রংপুর মেট্রোপলিটন। নাগরিক সেবা যথাযথ হিসেবে পৌছাতে শাসক নয়-সেবক হিসেবেই জনতার প্রকৃত বন্ধুরুপে কাজ করে নাগরিকগণের আস্থায় পরিণত ইতিমধ্যেই হয়েছে। এটিকে ধরে রাখতে আরও নবকৌশলে মেট্রোপুলিশকে নাগরিকগণের অন্যতম আস্থায় ধরে রাখতে মেট্রো পুলিশের নিজস্ব ভবনের তিলোত্তমা মিলনায়তনে গত ১৬সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত হয় সংবাদ সম্মেলন।
উপস্থিত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকর্মীগণের সামনে প্রধান অতিথি কমিশনার আব্দুল আলীম মাহমুদ বিগত ৩বছরের ও সর্বশেষ ১ বছরের বিভিন্ন কর্মকান্ডে নাগরিকগণের নিরাপত্তাসহ মেট্রোপুলিশের যাবতীয় কর্মকান্ড তুলে ধরে বলেন, আমি শুরু থেকেই এই মেট্রোতে আছি। আমার সাথে রয়েছেন চৌকস পুলিশ সহযোদ্ধানগণ। মেট্রোকে ৩টি জোনে ৬টি থানায় মোট ১৭৪৪টি মামলা রুজু হয়েছে গত ১বছরে। ১৪৩৮টি মামলার তদন্ত সমাপ্ত করে নিষ্পত্তি করাসহ ১৮৩০জন আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আমরা অপরাধ দমনে সক্রিয় ভূমিকার পাশাপশি অপরাধ তদন্ত, চাঞ্চল্যকর অপহরণ ও হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি। চুরি রহস্য, চোরাই মাল উদ্ধার, নকল ব্যন্ডরোল বিড়ি উদ্ধার, ব্যান্ডরোল ছাপানোর মেশিন উদ্ধার, নারীশিশু নির্যাতন, বাল্য বিয়ে ঠেকানো, উগ্রপন্থিদের গ্রেফতার, চেতনানাশাক সিন্ডিকেট গ্রেফতার, প্রেমের ফাঁদে প্রতারনা, অপহরণ , অশ্লীল ছবির ধারণ করে মুক্তিপণ আদায়কারীদের সনাক্তকরণ ও গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেছি।
মোটর সাইকেল চুরি, ব্যাটারী চালিত অটো চুরির পর উদ্ধার, চোরদের গ্রেফতার, যা দৃশ্যমান সাফল্য রংপুর মেট্রোপুলিশের। আইজিপি মহোদয়ের মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স নির্দেশনা বাস্তবায়নে যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থায় প্রশংশনীয় পদক্ষেপ গ্রহনে বদ্ধ পরিকর আছি । ক্রাইম ডিভিশন ও গোয়েন্দা বিভাগ কর্তৃক গত এক বছরে অর্ধকোটি টাকার মুল্যমানের মাদক আটক উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। মেট্রো থানাগুলোর ঐকান্তিক কার্যক্রমের কারনে নগরবাসীর কাছে পুলিশের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। কোর্ট পুলিশেরও আন্তরিকতার কারনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনেকাংশ মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে। সরকার বিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন দল গোষ্ঠিকে প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে। পুলিশ টহল জোরদার থাকায় অনাকাঙ্খিত অসংখ্য অপরাধ শুরুতেই থামিয়ে দিতে সামর্থ হয়েছি।
ট্রাফিক বিভাগঃ- ২টি জোনের অধীন প্রায় ৩৫ হাজার মামলায় প্রায় কেটি টাকা সরকারী কোষাগারে জমা করতে সক্ষম হয়েছি। যানবাহনের মালিক যাতে হয়রানীর শিকার না হন সে জন্য ই-প্রসিকিউশন মেট্রো পুলিশের কার্যক্রম চালু থেকেই চলমান। ট্রাফিক পুলিশের জবাবদিহিতার জন্য বডি অন ক্যামেরা চালু করা হয়েছে। নগরীতে অবৈধ স্থাপনা বসতে না দেয়া ও উচ্ছেদ, ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়েছে। যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ করে নির্দ্রিষ্ট পার্কিং করার মধ্য দিয়ে যানজন নিরসন প্রশংসনীয় অবস্থানে রয়েছে। পরিবহন চলাচলে গোপনে প্রকাশ্যে কোনভাবেই যেন চাঁদাবাজি না হয় সে জন্য যথাযথ নজরদারী অব্যাহত রয়েছে। পুরো শহরের গুরত্বপূর্ণ রাস্তায় স্থাপনার আশে পাশে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারী চলমান। চলাচলকারীদের মধ্যে কোন রকম দূর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষনিক সাশ্রয়ী মুল্যে একটি এ্যাম্বুলেন্স যোগে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মেট্রোপুলিশের গোয়েন্দাবিভাগ(ডিবি) রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন ঘটে যাওয়া অপরাধসহ অপরাধ দমন, মাদকদ্রব্য উদ্ধার, স্বর্ণের মূর্তি উদ্ধার আন্তঃজেলা বিভিন্ন চোর চক্রের সিন্ডিকেট গ্রেফতার, মেয়াদাত্তীর্ণ বিভিন্ন খাদ্য উদ্ধার, কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও মাদক স¤্রাট গ্রেফতার, নকল সার, নিষিদ্ধ পলিথিন উদ্ধার, নকল প্রসাধনী উদ্ধার, নকল কয়েল, নকল ঔষধ উদ্ধার, কারখানার সন্ধান,নকল ষ্ট্যাম্প উদ্ধার, ভেজাল দুধসহ আনুমানিক কোটি টাকার মালামাল জব্দ করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমেও বেশকিছু অপরাধ নিষ্পত্তি করেও নগরবাসীকে সকল ধরনের নিরাপত্তা দিতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নগরীর নাগরিকগনের নিরাপত্তাসহ যাবতীয় অপরাধ থেকে রক্ষায় আইন শৃংখলার সেবা দোড়গোড়ায় পৌছে দিতে বিট পুলিশিং ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। যে কারনে নাগরিকরা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি স্বস্তিতে আছেন।
পুলিশের বিশেষ শাখা- ভিআর, পাসপোর্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সসহ প্রায় ১লাখ নগরবাসীর সিআইএমএস(সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) অন্তর্ভক্ত করা হয়েছে। নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের বসবাসকারী প্রায় ১০লাখ মানুষ। প্রত্যেকের ডাটাবেজ তথ্য পুলিশের কাছে সংরক্ষিত করা হবে। নগরীর অভ্যন্তরে নির্বাচন সময়ে মেট্রো পুলিশ অগ্রনী ভ’মিকা রেখেছে। যা অতীব প্রশংনীয় হয়ে আছে নগরবাসীর কাছে। এছাড়া করোনাকালীর সময়ে যে, অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তা কাররই অজানা নয়। পুলিশ সে সময়ে যে সেবা দিয়েছে তা কখনোই ভোলার নয়। টিকা প্রদান বিষয়ে গুজব ঠেকানোর কাজেও প্রশংষা কুড়িয়েছে। নবগঠিত এই মেট্রোপুলিশের মাত্র ৩বছরে এস্টেট এন্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের কার্যক্রম দৃশমান গতিশীলতা পেয়েছে। মেট্রো পুলিশের পুলিশ লাইন্স এরসহ ৬টি থানার জন্য জায়গা নির্ধারণ শেষ হয়েছে। এছাড়াও পুলিশের জন্য যে সকল সাপোর্ট দরকার তার অনেকাংশই দৃশ্যমান হতে চলেছে।
পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি(পুনাক) নবগঠিত কমিটির নারীদেরসহ পুলিশের সকল নারীর উন্নয়ন, সামাজিক ও মানবিক উন্নয়ন করবে। যা বঞ্চিত নারীদের কল্যানে কাজ করে যাবে।
৩বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে মেট্রোর প্রবেশদ্বারগুলোতে সাজানো হয়েছে শুভেচ্ছা-স্বাগতম তোরণ। নগরীর প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন মোড়ে ও প্রধান সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে নাগরিকগণকে পুলিশের প্রতি আকৃষ্ট করতে ব্যানার ফেস্টুন সাঁটানো হয়েছে। যা- নব সাজে বছর পূর্তির এক অনন্য সৌন্দর্য বর্ধন।
কমিশনার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, উপ-পুলিশ কমিশনার(হেড কোয়ার্টার্স ও প্রশাসন) উপ-পুলিশ কমিশনার(ডিবি), উপ-পুলিশ কমিশনার(ট্রাফিক),উপ-পুলিশ কমিশনার(ক্রাইম)সহকারী পুলিশ কমিশনারবৃন্দসহ মেট্রোপুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দসহ রংপুরে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রমূখ।
Leave a Reply