[english_date]।[bangla_date]।[bangla_day]

কাজিপুর শত্রুমুক্ত দিবস ৩ ডিসেম্বর।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

 

মোঃজহুরুল ইসলাম।

মুক্তিযুদ্ধে কাজিপুর ৭ নং সেক্টরের অধীনে মিত্রবাহিনীর সহযোগিতা ছাড়াই ৩ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত করে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় আরোহণ পরবর্তী সিরাজগঞ্জের কৃতিসন্তান শহীদ এম মনসুর আলী সরকারের মন্ত্রীত্ব পান। বস্তুত তাঁকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জে স্বাধীনতার স্বপক্ষের রাজনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় হয়ে উঠে এবং প্রগতিশীল রাজনৈতিক আবহ তৈরি করেন তিনি।

 

একাত্তরের ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর সারাদেশের মতো সিরাজগঞ্জে মোতাহার হোসেন তালুকদারকে সভাপতি করে সংগ্ৰাম পরিষদ গঠিত হয়। একই সাথে সিরাজগঞ্জ কলেজ মাঠে ক্যাম্প করা হয় আমির হোসেন ভুলুকে সিরাজগঞ্জের অধিনায়ক মনোনিত করে। অভূতপূর্ব সারা জাগিয়ে ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক, যুবক ক্যাম্পে রোগ দেয় মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্ৰহণের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে।

 

 

এ ধারাবাহিকতায় কাজিপুরে লুৎফর রহমান দুদুকে আহ্বায়ক করে আঞ্চলিক সংগ্ৰাম পরিষদ গঠিত হয়। এই সংগ্ৰাম পরিষদ প্রথমেই কাজিপুরের পাক হাটের নাম পরিবর্তন করে বাংলাবাজার রাখে এবং সেখানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ প্রস্তুতি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করে মাত্র ৬ টি ডামি রাইফেল সম্বল করে। সিরাজগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক আমির হোসেন ভুলুর বাড়ি কাজিপুর হওয়ায় মুক্তিকামী কাজিপুর বাসির জন্য সংগঠিত হতে সময় লাগেনি। জেলা রাজাকার কমান্ডার মজিদ ও তার সহযোগী আসাদুল্লাহ সিরাজী কাজিপুরে প্রথম হানাদার মিলিটারি নিয়ে আসে। স্থানীয় পাক দালালদের সহায়তায় অগ্নিসংযোগ, হত্যা, লুটতরাজ করতে থাকে। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর এর প্রভাব ছিল অতিরিক্ত। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনের বাড়িতে তারা অত্যাচার জারি রাখে।

 

কাজিপুরের যুদ্ধে আগ্ৰহীদের মধ্যে অনেকেই ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে কাজিপুরসহ দেশের বিভিন্ন রণক্ষেত্রে যোগ দেয়, বাকিরা স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ শেষে কাজিপুর ও আশপাশের থানায় সুসজ্জিত পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সাধ্যমত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে থাকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নসহ চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে।

 

শুরু থেকেই যমুনা নদীর বিস্তৃত দুর্গম চরাঞ্চল হয়ে ওঠে মুক্তিযোদ্ধাদের সুরক্ষিত আশ্রয়স্থল। ঘটনা প্রবাহে কাজিপুরের রাজাকার কমান্ডার মনসুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ১৭ অক্টোবর

তাকে হত্যা করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। দুপুরে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা তাকে কবর দিতে গেলে ওত পেতে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ৬ জন রাজাকার খতম হয় এবং আট জন আত্মসমর্পণ করে। বাকিরা পালিয়ে যায়। ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধারা ১৮ টি আধুনিক রাইফেল ও প্রচুর গোলাবারুদ করায়ত্ত করে। ঘটনাটি তৎকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়।

 

কাজিপুরে হানাদার বাহিনী সর্বোচ্চ নারকীয় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায় গান্ধাইল ইউনিয়নের বরইতলা গ্রামে। ১৩ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের একটা দল মোজাফফর হোসেন মোজাম্মেলের নেতৃত্বে বরইতলা গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি নিরাপদ ভেবে রাত্রিযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। খবরটি স্থানীয় রাজাকার ইমান আলীর মাধ্যমে পাকসেনাদের কাছে পৌঁছে যায়, মাঝরাতে প্রশিক্ষিত ও আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত পাক হানাদার বাহিনী অতর্কিত আক্রমণ করে বসে ঘুমন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের উপর। আকস্মিক আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে চলে যায়, এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পাক হানাদার বাহিনী গ্রামের সাধারণ মানুষের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে গণহত্যা চালায় । নারী শিশুসহ মসজিদে তাহাজ্জুদ নামাজরত মুসল্লী কেউ বাদ যায়নি এই হত্যাকাণ্ড থেকে। খবর পেয়ে আশেপাশের কয়েকশো মুক্তিযোদ্ধা সংঘটিত হয়ে আটটি গ্রুপে ভাগ হয়ে তিন দিক থেকে ঘিরে সাধ্যমত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৪ নভেম্বর দুপুর নাগাদ মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ শেষ হয়ে আসলে পিছু হটে হানাদার বাহিনী। ফিরে যাবার সময় পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে যায়। বরইতলা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে রবি লাল আব্দুস সামাদ ও সুজাবত আলী শহীদ হন। পাকা বাহিনীর গণহত্যার শিকার হন ৫৯ জন সাধারণ গ্ৰামবাসী। এদের মধ্যে ২৬ জন মুসল্লিকে একসাথে দাঁড় করিয়ে ব্রাস ফায়ার করে। যুদ্ধে পাকবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও কথিত আছে রাতে ৪৯ জন পাক সেনার মরদেহ ৮ টি গরুর গাড়িতে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্যে পরিবহনকালে বাংলাবাজারের আবু বকর তরফদারের পাটের গুদাম থেকে জোরপূর্বক পাট সংগ্রহ করে মরদেহ ডেকে নিয়ে যায় পাকসেনারা।

 

 

বরইতলা যুদ্ধপরবর্তী মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে প্রতিশোধ স্পৃহা দাও দাও করে জ্বলতে থাকে। শুধু সুযোগের অপেক্ষা। আমির হোসেন ভুলু কর্তৃক রৌমারী প্রশিক্ষণ শিবির থেকে প্রশিক্ষিত আরো যোদ্ধা যোগ দেয় কাজিপুরে। সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক কমে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে।

 

আশেপাশের থানাগুলো থেকে শত্রুপক্ষের নাস্তানাবুদ হওয়ার খবর আসতে থাকে। কাজিপুরের পূর্বে যমুনায় কাদেরিয়া বাহিনী, দক্ষিন-পশ্চিমে লতিফ মির্জার পলাশডাঙ্গা যুব শিবির, উত্তরে লুৎফর রহমান দুদু ও মোজাম বাহিনী, উত্তর পূর্বে জগন্নাথগঞ্জ এলাকায় লুৎফর রহমান নদা বাহিনীর হাতে প্রচন্ড মার খেতে শুরু করে হানাদাররা।

 

দলে দলে রাজাকাররা এসে আত্মসমর্পণ করতে থাকে। কাজিপুর থানা ভবন ছিল পাকবাহিনীর মজবুত ঘাঁটি। ৪ ‘শর উপরে সেনাসদস্য ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ অবস্থান করছিল। ২ নভেম্বর কয়েকশো মুক্তিযোদ্ধা আক্রমণ করে বসে কাজিপুর থানা। আনুমানিক দুপুর ১ টা থেকে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত দুরন্ত মুক্তিযোদ্ধারা প্রচন্ড যুদ্ধ চালিয়ে যায়। গোলাবারুদ কমে আসায় নিরাপদ স্থানে সরে আসে। যুদ্ধ চলাকালীন বীর মুক্তিযোদ্ধা চাঁদ মিয়াকে মারাত্মক আহত অবস্থায় ধরে নিয়ে যায় পাকসেনারা। পরবর্তীতে তার তিন টুকরা লাশ খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়াও এ যুদ্ধে শহীদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল, আহত হন মাত্র কয়েক জন।

 

পরদিন ৩ ডিসেম্বর ভোররাতে অগণিত লাশ নিয়ে চুপিসারে কাজিপুর ছেড়ে পালিয়ে যায় হানাদার বাহিনী।

 

 

মুক্তিযুদ্ধে কাজিপুরের মোট ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এরমধ্যে দেশের

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *