[english_date]।[bangla_date]।[bangla_day]

সকল বিভাগের তুলনায় সিলেটে শ্রমিকের মজুরি সবচেয়ে কম!

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

এম এ রশীদ সিলেট থেকেঃঃ

 

সকল বিভাগের তুলনায় সিলেটে শ্রমিকের মজুরি সবচেয়ে কম মহামারি করোনার ধাক্কা সামলে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দিনমজুর ও শ্রমিকদের মজুরিতে।

 

গত তিন মাস ধরেই বাড়ছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক মজুরি। তবে অবিশ্বাস্য তথ্য হচ্ছে, রংপুরে মজুরি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি, সিলেটে সবচেয়ে কম। সরকারি হিসাবে গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদের গড়ে মজুরি বেড়েছে ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। এর অর্থ হলো, গত বছরের সেপ্টেম্বরে শ্রমিক ও দিনমজুররা গড়ে ১০০ টাকা মজুরি পেলে এই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পেয়েছেন ১০৫ টাকা ৯১ পয়সা।

 

দেখা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বর মাসে একসময়ের মঙ্গাকবলিত উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের শ্রমিক-দিনমজুরদের মজুরি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর কম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে যে অঞ্চলে, সেই সিলেট বিভাগে ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

 

সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) যে হিসাব দিচ্ছে, তাতে দেখা যায়, গত কয়েক মাস ধরেই রংপুর অঞ্চলের শ্রমিক ও দিনমজুররা অন্য বিভাগের শ্রমিক ও দিনমজুরদের চেয়ে বেশি মজুরি পাচ্ছেন। তবে অর্থনীতির গবেষক সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান পরিসংখ্যান ব্যুরোর এই তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘এ তথ্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, কেউ বিশ্বাস করবে না।’

 

সেলিম রায়হান বলেন, ‘ঢাকার চেয়ে রংপুরের শ্রমিক-দিনমজুররা বেশি মজুরি পান, এটা কীভাবে সম্ভব? বিবিএসের গবেষণা পদ্ধতিতেই গোলমাল আছে।

 

প্রথম কথা হচ্ছে, এই মহামারিতে কোনো শ্রমিক-দিনমজুরেরই মজুরি বাড়েনি; তারপর আবার রংপুর বিভাগের দিনমজুর-শ্রমিকদের মজুরি বেশি বেড়েছে, এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’

 

এ প্রসঙ্গে বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায় থেকে যে তথ্য পাই, সেটাই প্রকাশ করি।

 

পরিসংখ্যান ব্যুরো গত বৃহস্পতিবার মজুরি সূচকের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে জাতীয় মজুরি বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ।

 

এর অর্থ হলো, গত সেপ্টেম্বরে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের চেয়ে দিনমজুর-শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। আগের দুই মাস আগস্ট ও জুলাইয়ে এই হার ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৮০ ও ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনও পরিসংখ্যান ব্যুরোর মজুরি সূচকের তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি শাস্ত্রের কোনো যুক্তিতেই বিবিএসের মজুরি হার বৃদ্ধির ব্যাখ্যা দেয়া

 

সম্ভব নয়।

 

সাধারণত যখন শ্রমিকের চাহিদা বাড়ে, সরবরাহ কম থাকে, তখন মজুরি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই মহামারির সময়ে শ্রমিকের চাহিদা বেশ কমেছে।

অনানুষ্ঠানিক খাতে বেকারের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তাহলে মজুরি বাড়ল কোন ভিত্তিতে? ‘মজুরি যদি বাড়ত, তাহলে এই করোনাকালে সরকারকে এত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নিতে হতো না। বিবিএস হয়তো অতীতের মজুরি বৃদ্ধির প্রবণতা দেখে পরিসংখ্যানভিত্তিক বিশ্লেষণ করে এই তথ্য দিয়েছে, যা কোনোভাবেই

বাস্তবসম্মত নয়।’

 

 

 

যে বিভাগে যতো বাড়লো মজুরি বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়- পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা বিভাগে মজুরি বেড়েছে ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাইয়ে এই হার ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৭২ ও ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামে মজুরি বাড়ার হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাইয়ে ছিল ৫ দশমিক ৮১ ও ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। রাজশাহীতে সেপ্টেম্বরে মজুরি বাড়ার হার ছিল ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগস্টে ছিল ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ; জুলাইয়ে ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। রংপুরে সেপ্টেম্বরে মজুরি বেড়েছে ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। আগস্টে বেড়েছিল ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ; জুলাইয়ে বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে সেপ্টেম্বর মাসে মজুরি সূচকের হার ছিল ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাইয়ে ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৭৪ ও ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। খুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে মজুরি বেড়েছে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাই মাসে বেড়েছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৫৪ ও ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর সিলেট বিভাগে সেপ্টেম্বর মাসে মজুরি সূচকের হার ছিল ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আগস্টে ছিল ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ; জুলাইয়ে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *