নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনাঃ
জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলগুলাে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
গত তিন দশকে সামুদ্রিক ঘুর্ণিঝড়, জলােচ্ছ্বাস ও নদী ভাঙ্গন সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদগুলাে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে এক দিকে যেমন সমুদ্র পৃষ্ঠের তলদেশ উঁচু হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে নদ-নদীর নাব্যতা হারিয়ে গতিপথ উল্লেখযােগ্য পরিবর্তন এসেছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সমুদ্রের পানি উপকূলীয় এলাকায় উপচে পড়ছে। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যােগে লক্ষ লক্ষ মানুষ সহায় সম্বল হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়ছে।
সুত্রমতে, ১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বর সুন্দরবন উপকূলে প্রলয়ংকরী সামুদ্রিক ঘুর্ণিঝড়, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল চট্রগ্রাম- কক্সবাজার অঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ সামুদ্রিক ঝড়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী উপকূলে সিডরের তাণ্ডব এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে খুলনা, সাতক্ষীরা উপকূলে আইলার ভয়াবহ জলাচ্ছ্বাসে গােটা উপকূলীয় এলাকার প্রাকৃতিক দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছিল। এর সাথে নতুন মাত্রায় নদী ভাঙ্গন যােগ হয়ে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
কয়রা, দাকােপ, আশাশুনি ও শ্যামনগর এলাকায় প্রতিনিয়ত বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। উপর্যুপরি নদী ভাঙ্গন কেড়ে নিচ্ছে শত শত একর কৃষি জমি, বসত ভিটা, চিংড়ি ঘের ও রাস্তাঘাট। শুকনা মৌসুমে কয়রার অনেক এলাকায় ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এ সকল এলাকায় দিন যতই পার হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার মানুষ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ততই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অনেকে জমি জায়গা হারিয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছে। দাতা সংস্থা ও জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলাে পরিদর্শন করে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও দুর্যােগের ঝুঁকিহ্রাস কমাতে সরকারকে প্রয়াজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। জলবায়ু ফাউণ্ডেশনের অর্থায়নে সরকার উপকূলীয় এলাকার উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছে। দাতা সংস্থাগুলাে এনজিওদের মাধ্যমে বাঁধ সংস্কার, কাঁচা রাস্তা নির্মাণ, ঝড় সহনশীল ঘর তৈরী, পয়োনিষ্কাশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, গভীর- অগভীর নলকূপ স্থাপন, রেইন ওয়াটার হার্ভেষ্টিং প্রকল্প বাস্তবায়নের মতাে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারী অনেক সংস্থা দেশের উপকূলীয় বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে অবকাঠামােগত প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পগুলাের কাজ শেষ হলে সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ ঝড়- জলাচ্ছ্বাস জনিত প্রাকৃতিক দুর্যােগের কবল থেকে কিছুটা রেহাই পাবে।
সম্প্রতি সরকারের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীর কিনারে ড্যাম্পিং করে বেড়িবাঁধে ব্লক বসানাের কারণে নদী ভাঙ্গন কিছুটা কমেছে। উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ রক্ষায় বিশ্বব্যাংকের বাস্তবায়নাধীন চলমান প্রকল্প চালু থাকলে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সৃষ্ট জলােচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি থেকে এ অঞ্চলের জনসাধারনের জানমাল অনেকটা রক্ষা করা সম্ভব হবে। সম্প্রতি কয়রা-পাইকগাছার সংসদ সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও নেতৃবৃন্দের প্রচেষ্টায় কয়রার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প পাশ হয়েছে। এটি তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন চায় এলাকাবাসী।
কয়রা উপজেলা দুর্যােগ ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। সরকার ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষতির দিকটি বিবেচনায় এনে টেকসই প্রকল্প হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট রয়েছে। তবে ব্যাপকভাবে অর্থ বরাদ্ধ দিয়ে উপকুলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হলে এ জনপদের মানুষ কিছুটা হলেও দুর্যােগের ক্ষয়- ক্ষতি থেকে রেহাই পাবে।
কয়রা, খুলনা প্রতিনিধি
তারিখঃ- ০৫/০৬/২২ ইং।
Leave a Reply