৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।২৩শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।শুক্রবার

ভাইরাল’ হয়েই হারিয়ে যাচ্ছে গান

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বিশ্বায়নের যুগে মানুষ এখন উচ্চ প্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করছে। তবে এই সুযোগ-সুবিধার সুগতির সঙ্গে দুর্গতিও কিন্তু কম নেই। গোটা পৃথিবীর মানুষ এক মুঠোতেই বসবাস করছে এখন। তাৎক্ষণিকভাবেই জানতে পারছে কোথায় কি ‘ভাইরাল’ হয়ে যাচ্ছে। বলা চলে, সারা দুনিয়ার মানুষ ‘ভাইরাল যুগে’ বাস করছে এখন। এই একটি শব্দটি দিয়েই যাচাই করা হচ্ছে কোনটা জনপ্রিয় আর কোনটা নিন্দিত বা ধিকৃতও। এই জানাজানির সঙ্গে যুক্তদের ইতোমধ্যেই নাম দেওয়া হয়েছে ‘নেটাগরিক’। তবে কখনো কখনো এই ‘ভাইরাল’ হওয়ার ঘটনা উপকারী হওয়ার চেয়ে ক্ষতিকর দিকটাই বেশি প্রকট হয়ে উঠছে। ফলে তার বাজে প্রভাব পড়ে গোটা জাতির ওপর। যেমন- চলমানকালীন গানের ক্ষেত্রে এ প্রশ্নটি খুব জোরেশোরে উঠছে। আর এটা খোদ নতুন-পুরাতন শিল্পীদের মাঝেই। এ বিষয়ে কারোরই সংশয় নেই, প্রযুক্তি হিসেবে এই উপমহাদেশে গানকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রেখেছে দুটো পস্ন্যাটফর্ম- গ্রামোফোন রেকর্ড এবং সিনেমা। এই দুটো মাধ্যমে যত গান জনপ্রিয় হয়েছে সে তুলনায় তৃতীয় আর কোনো মাধ্যমেই ঘটেনি। এখন গ্রামোফোন না থাকলেও ধুঁকে ধুঁকে হলেও সিনেমা প্রযুক্তি আছে। অডিও মাধ্যমে জনপ্রিয় গান হতে থাকলেও এটাও খুব বেশি বছর স্থায়ী হতে পারেনি। গ্রামোফোনের মতো এটাও প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রযুক্তির এই তিন মাধ্যমে যত গান জনপ্রিয় হয়েছে, তার কোনোটির সঙ্গেই ‘ভাইরাল’ শব্দটি যুক্ত ছিল না। মানুষের মুখে মুখেই সেই জনপ্রিয়তা ‘প্যারালাল’ বা সমান্তরাল হয়ে গেছে। তখন সরাসরিই জানা যেত কোন গানটা কেমন জনপ্রিয় হয়েছে। এখন কিন্তু এই জনপ্রিয়তা জানারও সরাসরি কোনো উপায় নেই। কারণ, মানুষ এখন কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে। কিংবা ঘরে বসে বসে বিভিন্ন পস্ন্যাটফর্মের গানচিত্র দেখছে-শুনছে। তবে এ মাধ্যমে কার কোন গান কত কোটি মানুষ দেখছে-শুনছে মুহূর্তের মধ্যেই জানতে পারছে। আবার মুহূর্তেই জানতে পারছে, ভাইরাল হওয়ামাত্রই সে গান আবার চিরকালের জন্য ‘কবর’ বা আড়াল হয়ে যাচ্ছে। গান ও শিল্পী দুটোই একেবারে নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে। সুরকার ও গীতিকার তো এমনিতেই আড়ালে থাকে। চিত্তের দিক থেকে আদিকাল থেকেই স্থূল বিনোদনের প্রতিই মানুষের ঝোঁক ছিল। কিন্তু মানুষের এই দুর্বলতাকে পুঁজি করে আগের মূলধারার শিল্পীরা তাদের কোনো সৃষ্টিকর্ম করেননি। কারণ তারা জানতেন স্থূল বিনোদনের কোনো কিছুই স্থায়ী হয় না। স্থূল বিনোদন হলো শুষ্ক মরু মাটিতে পড়া বৃষ্টির জলের মতো। মুহূর্তের জন্য সে মরুমাটি সিক্ত করেই বাতাসে উবে যায়। এই চাহিদার যোগান দিতে এই নতুন পস্ন্যাটফর্মও হিমশিম খাচ্ছে। সে কারণে নানা অপকৌশলে নতুন নতুন মিথ্যা ভাইরালেরও সৃষ্টি করছে তারা। ফলে এই স্থূল চাহিদা মানুষের মনে স্থায়ীভাবে শেকড়ও গাড়তে পারছে না। প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার কারণেই আমাদের এই ‘শিল্পবোধ’সম্পন্ন বহু অমর সৃষ্টিও ‘অমর’ করে রাখা যায়নি। যেমন- প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা বা প্রযুক্তি ব্যবহারের সীমাবদ্ধ জ্ঞানের কারণেই অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা সিনেমা চিরস্থায়ী করা যায়নি। যে সিনেমায় বহু জনপ্রিয় গানচিত্রও ছিল। এখন কোন সিনেমাটি ভালো ছিল সেটা মুখে মুখেই জানতে হচ্ছে। বা সে সময়ের লেখালেখির মাধ্যমেই জানতে হচ্ছে। অথচ বর্তমানের উচ্চ প্রযুক্তি সেই সীমাবদ্ধতা ঘুঁচিয়ে দিতে পেরেছে। কিন্তু তারপরও মানুষ তার সৃষ্টিকর্মকে স্থায়ী করার সেই সহজ সুযোগটাও নিতে পারছে না। কারণ, ‘ভাইরাল’ হওয়ার স্বার্থেই মানুষের এই ক্ষণস্থায়ী স্থূল বিনোদনকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বেশি। এখনকার গান এই ‘ভাইরাল’ হয়েই চিরকালের জন্য আড়াল হয়ে যাওয়া নিয়ে বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, আগে একটা গান ছাড়ার জন্য এতো তাড়াহুড়া ছিল না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিহার্সাল শেষে রেকর্ডিং হতো। এই ‘তাড়াহুড়া’ না করা এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিহার্সাল তো গানের শিল্প রক্ষার স্বার্থেই ঘটত। সেই শিল্প রক্ষার স্বার্থ কি এই ‘ভাইরাল’ পস্ন্যাটফর্ম কর্তারা দেখে? অথচ যুগে যুগে গান বা সংগীত জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে কিন্তু প্রযুক্তির কোনো তুলনাই হয় না। মানুষ আদিতে খালি গলাতেই গান গাইত। কিন্তু খালি গলায় গান জনপ্রিয় ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগও তেমন ছিল না। সেই চাহিদাতেই যুগে যুগে নিত্যনতুন প্রযুক্তির উদ্ভব ঘটতে থাকে। খোল, করতাল, ঢোল, বাঁশি, শিঙা, একতারা, দোতারা, পিয়ানো, হারমোনিয়াম একে একে নতুন নতুন প্রযুক্তি যুক্ত হতে শত শত প্রযুক্তির প্রায় সবই রয়েছে এখনও পর্যন্ত। ভারতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগীতজ্ঞ বিবেচনা করা হয় যে মিয়া তানসেনকে, তার সময়ে কোনো উচ্চপ্রযুক্তি ছিল? কিন্তু গান তো তার আপন সুরের মূর্চ্ছনাতেই শক্তিমান। ‘ভাইরাল’ হওয়ার প্রয়োজন নেই। তারপরও বর্তমান শিল্পীরা সেদিকে ঝুঁকছে কেন? সৈয়দ হাদী যেমন বলেন- ‘মানুষের শিল্পবোধ জাগিয়ে রাখার দায়িত্ব শিল্পীদেরই।’ কিন্তু নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের কি সেই দায়িত্ববোধ আছে? এ বিষয়ে নতুন প্রজন্মের ব্যস্ত কণ্ঠশিল্পী সাবরিনা এহসান পড়শী বলেন- ‘নতুন প্রযুক্তি আমাদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা এনে দিয়েছে সে বিষয়ে অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু ভাইরালকে নয়, গানচিত্রকেও নয়- আমরা চাই গানটাকেই মূল্য দেওয়া হোক।’

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।

অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনাঃ

খুলনার কয়রায় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৬ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খুলনা জেলার আয়োজনে ও কয়রা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় এ সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সচেতনতামূলক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম মোহসিন রেজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আলম।
এসময় আরও উপস্হিত ছিলেন, কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানি, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল, মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী, বাঙ্গালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী, আমাদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জুয়েল সহ সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ।

নিরাপদ খাদ্যের মূল প্রবন্ধ উপস্হাপন করেন খুলনা জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোঃ মোকলেছুর রহমান।

কয়রায় নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত।