একটি ব্যর্থ প্রেমের গল্প —————— মনির যখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, তখন তাদের বাড়ীতে বেড়াতে আসে তার বাবার দুঃসম্পর্কের এক বোন জামাই, সাথে একটি ফুটফুটে ছোট মেয়ে। মনিরের মেয়েটাকে খুব ভাললাগে, তাকে জিজ্ঞাসা করে ওর নাম কি? মেয়েটি তার নাম আসমা বলে জানায়। মনির মনে মনে ভাবে বড় হলে ওকে বিয়ে করবে। এরপর দীর্ঘ দিন পার হয়ে যায় , তাদের দেখা নাই। আসমা যখন ৫ম শ্রেণিতে পড়ে, তখন আবার মনির দের বাড়ীতে বেড়াতে আসে , তখন মনির সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছে, আসমার চেহারা আরো ভাল হয়েছে, সুন্দর চেহারা ও চুলের কাটিং তাকে আরো আকৃষ্ট করে। মনে মনে ভাবে দুই তিন বছর পর আসমাকে জানাবে তার মনের কথা। মাঝে মাঝে আসমাদের গ্রামে বেড়াতে যায়, উদ্দেশ্য আসমাকে দেখার কিন্তু সাহস হয় না তাদের বাড়ী যেতে, যদি ফুপু কিছু জিজ্ঞাসা করে, কেন এসেছো ? তখন কি বলবে, তাই। এভাবে চার বছর পার হলো। আসমার বাবা নদী ভাংগার কারনে সব কিছু হারিয়ে একেবারে পথে বসেছে, এ অবস্হায় আবার আসমা তার মায়ের সাথে মনিরদের বাড়ীতে বেড়াতে আসে। মনির ডিগ্রী পরীক্ষা দিয়ে বাড়ী আসে। বাড়ী এসেই আসমা কে দেখতে পায়। মনিরের মা আসমাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে মনিরকে জানায় । মনিরের খুব মায়া হয়, সে মনে মনে ভাবে একটা চাকুরী হলে সে আসমার নানাকে বলবে। আসমা মনিরদের বাড়ীতেই আছে, এ অবস্থায় মনিররা একটি নাটকের রিহার্সাল শুরু করে। নাট্যশিল্পী হিসাবে তার যতেষ্ট পরিচিতি ছিল। সে ভিলেন চরিত্রে রিহার্সাল দিচ্ছিল, ঐ নাটকের নায়িকা চরিত্রের নামও ছিল আসমা। আসমা তাদের রিহার্সাল শুনতে পায়,সে শুনে পায় মনির আসমাকে পেতে ব্যাকুল। আসমা ভাবলো মনির ভাই নিশ্চয় আমাকে ভালবাসে। মনির একজন ভাল ফুটবল খেলোয়াড়, আসমাকে বাড়ীতে রেখেই তাকে দুরের এক মাঠে ফুটবল খেলতে যেতে হয় । বাড়ী ফিরে দেখে, আসমা নাই, সে তার মায়ের সাথে বাড়ীতে চলেগেছে। কিন্তু তৈরী করেছে বিড়ম্বনা, বাড়ী আসার সাথে সাথে বাড়ীর আসপাশের ভাবীদের বিভিন্ন প্রশ্নে জর্জরিত হতে হয় মনিরকে। আসমা নাকি চলে যাওয়ার সময় মনিরের জন্য কাঁদছিল। এরপর বেশ কিছুদিন চলে গেল। আসমারা তাদের মামার বাড়ীতে থাকে। তাদের সাংসারিক অবস্হা অত্যন্ত করুন, ঠিকমত দুবেলা খাওয়ার জোগাড় করা অত্যন্ত কষ্ট। এক সময় তাদের অনেক কিছুই ছিল কিন্তু রাক্ষসী নদী তাদের সব কেড়েনিয়ে পথে বসিয়েছে। এর ভিতর একদিন আসমাদের এলাকায় মনির কোন প্রয়োজনে তার এক বন্ধুর কাছে যায়, বন্ধু তাকে আসমার কথা বলে। মনির তখন বন্ধুকে সাথে নিয়ে আসমাদের বাড়ীতে যায় ( আসমার নানার বাড়ী)। রাতে ওখানেই ( আসমাদের পাশের বাড়ীর) মনিরের একবছরের সিনিয়র ইব্রাহিম ভাইয়ের বিছায় ডাবলিং করে রাত্রি যাপন করে।ফজরের নামাজের সময় ইব্রাহীম নামাজ পড়ে ক্ষেত দেখতে বের হয়, এই সময় নগ্ন শরীরে আসমা একটি কলসি নিয়ে রুমে হাজির হয়ে কিছু খোজার বাহানা করে। মনিরের বুঝতে দেরী হলো না, তবে কৌশলে আসমার ইচ্ছাকে এড়িয়ে যায়, কারন সে কোন অবৈধ সম্পর্ক করে আসমাকে পেতে চায় না। এবার
বিদায় নেবার পালা। বিদায়ের সময় আসমা তার পথ রোধকরে দাড়ায়। মনির তাকে জিজ্ঞেস করে, সে কি বলতে চায়? জবাবে তার ভালবাসার কথা মনির কে জানায়। মনির বলে চাকরী হওয়ার পর তাকে বিয়ে করতে প্রস্তুত আছে। এর পর আসমা চিঠি লেখে, মনির দেখা করে। এই ভাবে চলতে থাকলো, হঠাৎ একদিন জরুরী চিঠি। জুন মাস ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে, রাস্তা ঘাট ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছ, তবু সাইকেল নিয়ে মনিরের উড়ন্ত যাত্রা । স্কুল ছুটি হয়েছে আসমাকে স্কুলেই ধরতে হবে, তাই সে খুব জোরে সাইকেল চালাচ্ছে। হঠাৎ সাইকেল বৃষ্টির কারনে রাস্তার মাঝে সৃষ্ট গর্তে পড়ে যায়, তাতে তার শরীরের অনেক স্হানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ঠান্ডু নামের এক সাইকেল মেকার তাকে গর্ত থেকে তুলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়। মনির দমিবার পাত্র নয়, সে এই অবস্হায় আসমার সাথে দেখা করতে আসে। সে আসমার সামনেগিয়ে দাড়ায় কিন্তু আসমা তার সাথে কথা বলে না। মনির বাধ্য হয়ে আসমার সাথে তাদের বাড়ীতে যায়, কিন্তু আসমা তার কাছে আসে না, তখন বাধ্য হয়ে মনির তার ফুপুকে বিস্তারিত জানায়। ফুপু মনিরকে সাফ জানিয়ে দেয়, “আমরা এখন গরীব, তাই তোমার পরিবার আমার মেয়েকে মেনে নিবে না, তোমাদের কারনে আমরা ভাইবোন ঝামেলায় জড়াতে চাই না, আর আমার একমাত্র মেয়ে তোমার হাতে এখন তুলে দিলে আমাদের দুজনের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে, তোমার কাছে আমার অনুরোধ, আমাদের দুইজনের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তুমি আমার আসমাকে ভূলে যাও, ওকে মানুষ হতে দাও।” মনিরের শরীরদিয়ে তখন ও রক্ত ঝরছিল, কিন্তু ফুপু বা তার মেয়ে কেউ তার দিকে তাকালো না। বিফল হয়ে সে বাড়ীর দিকে আসলো। বাড়ী আসতেই তাদের গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলা চলছিল, মনকে ভালকরার জন্য সে ঐ অবস্হায় খেলতে নামে, কিন্তু খেলায় মনোযোগ না থাকায় মাঠে সে বড়ধরনের আঘাত পায়, যার চিহ্ন এখনও সে বয়ে বেড়াচ্ছে। মনের হতাশা নিয়ে বেশ কিছু দিন কাটে, হঠাৎ একদিন তার কাছের বন্ধু মমতাজ এসে বলে,” চাচা ( সম্পর্কে চাচা ভাতিজা কিন্তু শিশুকাল হতে এক সাথে প্রায় এক বিছানায় তাদের কাটে) আসমা নামের যে মেয়ে তোকে চিঠি লিখে , সম্ভবত ওর সাথে আমার বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। ” খোজ নিয়ে জানাগেল ঘটনা সঠিক। আসমা মনিরকে ক্ষিপ্ত করার জন্য তার নানাকে দিয়ে এই কাজ করেছে। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হলো।এর পর মনির ও মমতাজ চাকুরীর খোজে ঢাকা চলে যায়, দুই বছর পর মনিরের চাকুরী হয়, পরিবারের চাপে ভাইয়ের ঠিক করা পাত্রীকে বিয়ে করতে হয়, আসমার ও বিয়ে হয়ে যায়, পাশের এলাকার এক প্রবাসী ছেলের সাথে, এর ভিতর আসমা নাসিং পাশকরে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করে । দীর্ঘ দিন তাদের আর যোগাযোগ নাই। মনিরের যখন স্ত্রীর সাথে মতের অমিল দেখা দেয়, তখনই মনে পড়ে যায় আসমার কথা, কিন্তু কিছুইতো করার নাই। নিজের শরীরের ক্ষত স্হানগুলি দেখে আর আসমাকে মনে করে, মাঝে মাঝে আসমাকে বেইমান ভাবে, আবার মনে করে তার সাথে বিয়ে হলে হয়তো আসমা অসুখী হতো, তাই ভালই হয়েছে। এভাবে দীর্ঘ ১৮/১৯ বছর কেটেগেল। মনির ছুটি এসে বাবার সাথে একই ঘরে আলাদা খাটে ঘুমাতে যায়। শুরু হয় বাপছেলের বিভিন্ন গল্প। গল্পের একপর্যায়ে বাবা আসমার কথা তোলে। আসমা নাকি সুখে নেই। সে এখানকার হাসপাতালেই চাকুরী করে। তার নাকি ইচ্ছা ছিল আসমাকে ছেলে বউ করার কিন্তু সে ইচ্ছা পুরণ হয় নাই। কথাটা শুনেই মনিরের শরীরে একটা ঝাকুনি দেয়, সে মনে মনে বাবাকে গালি দিতে থাকে, তোমার যদি এই ইচ্ছাই ছিল, তবে সময় মত প্রকাশ করোনাই কেন বাবা? বলতে গিয়ে থেমে যায় যায়। চিন্তা করে, যা হবার হয়েছে , এতে কারো হাত নাই, সবই ভাগ্য। গ্রামের মহিলারা বিশেষ করে মনিরদের বাড়ীর কেহ চিকিৎসারর জন্য গেলে আসমা নাকি খারাপ ব্যবহার করে। মনিরের বুঝতে দেরী হলো না, আসমা তার উপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে তার বাড়ীর লোকদের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। সকালে ঘুম হতে উঠেই মনির হাসপাতালের দিকে যায়। সেখানে তার কলেজ জীবনের বন্ধু শাহিনের সাথে দেখাহয়। শাহিন তাদের সম্পর্কের বিষয় জানতো, তাই সে মনিরকে বলে,” বন্ধু তুমি মনে হয় তোমার ডার্লিংকে দেখতে এসেছো, যাও ভিতরে কোয়ার্টারে থাকে।” ভিতরে ঢুকতেই এক মহিলার সাথে দেখা, তাকে জিজ্ঞেস করে আসমারদের বাসা কোনটা? উনি মনিরকে জানায়, এখানে আসমা নামে কেউ থাকে না। মনির ফেরৎ আসার পথে শাহিন হাসতে হাসতে বলে, “কি হলো দোস্ত, দেখা হয়েছে?” মনির বলে, “না রে, আসমা নাকি এখানে থাকে না। ” শাহিন হাসতে হাসতে বলে, ” তুই যার সাথে কথা বললি, সেইতো তোর ডার্লিং, ডার্লিংকে চিনিস না আবার প্রেম করেছিলি! ” মনির আবার ফেরৎ যায়, দেখে আসমা দাড়িয়ে আসে, তাকে জিজ্ঞেস করে, “মিথ্যা বললে কেন? ” আসমা বলে , “তুমি যাকে জীবনদিয়ে ভালবাস, তাকে চিনতে পারোনা, কেমন লোক তুমি? ” তারপর বাসায় যায়, এক পর্যায়ে আসমার সন্তানের কথা জিজ্ঞেস করে মনির, আসমা চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে, তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে , এমন সময় আসমার মা আসে, বলে বাবা, ওর কোন সন্তান নাই, সেতো স্বামীর ঘর করার সুযোগই পায় নাই, সন্তান পাবে কোথা থেকে? বিয়ের পরই জামাই বিদেশগিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। মনির খুব কষ্ট পায়। আসমার মা মনিরকে বলে বাবা তুমি আমার ভাইয়ের ছেলে, আসমা তোমার বোন, ও তোমাকে দেখলে এলোমেলো হয়ে যায়, তাই তুমি আর এসো না। ওকে শান্তিতে থাকতে দাও। মনির তার ফুপুকে বলে,” দুটি জীরন নষ্টের জন্য তোমরা দুই ভাইবোই দায়ি।” আর দেরি না করে সে চলে আসে। এর পর ১৪/১৫ বছর কেটে যায়, মনির চাকুরী হতে অবসর নিয়ে এলাকায় এসে বন্ধুদের নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক কাজে হাত দেয়। একটি অনুষ্ঠানে মনির রা যাদের সন্মাননা প্রদান করবে, তাদের একজন আসমার চাচাতো বোন, আসমা সেই বোনের সাথে অনুষ্ঠানে এসেই মনিরকে দেখে এগিয়ে আসে। মনিরকে জিজ্ঞেস করে, কেমন আছো? মনির বলে ভাল, আপনি কেমন আছেন? আসমা তাকে বলে তুমি আজও মনে হয় আমাকে চিন্তে পারো নাই। মনির বলে আসলে তাই, তবে চেনা চেনা মনে হচ্ছে। আসমা বলে ভালকরে দেখে বলো? মনির বলে দুঃখিত, আমি ঠিক মনে করতে পারছি না, তবে আপনি আমার কোন ঘনিষ্ঠ জন, এতো কোন ভূল নাই, ঠিক আছে, আপনারা চলেন, ভিতরে বসার ব্যবস্হা করি।পরে সময় মতো আপনার সাথে আলাপ করা যাবে। আসমা হাসতে হাসতে বলে, তোমার তো মাথা একেবারে শেষ হয়েগেছে, আমি আসমা। তোমার পছন্দের –। মনির তো আকাশ থেকে পড়লো,তুমি কোথায় থেকে? কেন তুমি আপাকে চিনতে পার নাই ? হ্যা, মনে পড়েছে, তার পর অনেক ক্ষন তারা নিজেদের নিয়ে আলাপ আলোচনা করে। একপর্যায় মনির বলে আজ তোমার সন্তানের ব্যাপারে কিছু জানতে চাইবো না। আসমা বলে তুমি জানতে না চাইলেও আমি বলবো, আমার শুধু দুইটি মেয়ে, মনির বলে তাহলে একটি মেয়ে আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে আমাকে বাবা ডাকার সুযোগ করে দাও। আসমা বলে অপদার্থ বাবার ছেলে আর কেমন হবে, এটা আশা করো না। অনুষ্ঠান শেষে মনির তাড়াহুড়া করে সকলকে বিদায় দিয়ে সরে পড়ে, কারন তার পূর্বেই সেই কষ্ট আবার মনে জেগে যায়, তাই নিজেকে সামাল দিতেই সে কেটে পড়ে। অনুষ্ঠান শেষে তার এক বন্ধু আসমাকে চিন্তে পারে, সে মনিরকে বলে দোস্ত পুরান স্মৃতি বুঝি মনে পড়েগেলো? মনির তার বন্ধুকে বলে বুঝতেইতো পারছিস, কষ্ট বাড়াচ্ছিস কেন? একদিন আসমার সাথে তার ফোনে কথা হয়। সে সময় ব্যর্থতার জন্য আসমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আর বলে , আমি ইচ্ছা করলে তোমার ক্ষতি করতে পারতাম, কিন্তু বিশ্বাস ছিল, তোমায় আমি অবশ্যই পাবো, তাই তোমার কোন ক্ষতি করার চিন্তা করি নাই। পরবর্তীতে শুধু তোমার এবং ফুপাফুপুর জীবন নিয়ে চিন্তা করে আমার ভালবাসাকে বিসর্জন দিয়েছি, যার জন্য আজও
Leave a Reply