নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

মানিকগঞ্জে জমি দখল করতে জয় পরিষদের কার্যালয়
মোঃ মোশারফ হোসেন( মানিকগঞ্জ) জেলা প্রতিনিধিঃ
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় সজিব ওয়াজেদ জয় পরিষদ নামের একটি সংগঠনের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোটি টাকার জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে ওই জমিতে সংগঠনের জেলা কার্যালয়ের নামে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে।
জমি দখলে বাধা দিলে জমির মালিককে মারধর ও হুমকিধমকি দিয়ে আসছেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ ব্যাপারে ভূক্তভোগী জমির মালিক আফজাল হোসেন সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এ ছাড়া পুলিশ সুপারের কাছেও লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।
জিডির অভিযোগের বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকবর আলী খান জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
জিডি, লিখিত অভিযোগ ও ভূক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে উপজেলার চান্দরা গ্রামের আফজাল হোসেন দিঘী মৌজায় জালাল উদ্দিনের কাছ থেকে আর এস ৬৮৯ নম্বর দাগে ১৩ শতক জমি কেনেন। এরপর ওই জমিতে ছাপড়া ঘর তুলে আফজাল হোসেন ভোগদখল করে আসছেন। প্রায় দুই বছর আগে ওই জমির পূর্ব পাশে কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হলে জমিটির মূল্য বেড়ে যায়। এরপর থেকে ওই জমি দখল করতে সজিব ওয়াজেদ জয় পরিষদ নামের ওই সংগঠনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাসেল মাহামুদ ওরফে লাভলুসহ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পায়তারা করে আসছেন।
প্রায় এক বছর আগে ওই জমি দখল করতে সেখানে সংগঠনের জেলা কার্যালয় লেখাসংবলিত একটি বিশাল সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এতে বাধা দিলে আফজাল হোসেনের পরিবারের ওপর হামলা করেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। হামলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আফজালের ভাই দেলোয়ার হোসেন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় আফজাল হোসেন থানায় একটি মামলা করেন।
এরপর গত ২২ অক্টোবর ওই জমি দখল করতে সেখানে থাকা ছাপড়া ঘরের তালা ভেঙে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ভেতরে ঢুকতে গেলে মালিক আফজালের পরিবারের সদস্যরা বাধা দেন। পরে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঠা নিয়ে তাঁদেরকে মারধরের চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় পরের দিন আফজাল হোসেন থানায় জিডি করেন।
জমির মালিক আফজাল হোসেন বলেন, সজিব ওয়াজেদ জয় পরিষদের নামের একটি কথিত ওই সংগঠনের কার্যালয় করে তাঁর কেনা জমি দখল করার পায়তারা করে আসছে লাভলুসহ সংগঠনের আরও কয়েকজন। সংগঠনের নেতারা তাঁদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ের নামে এই সংগঠন। তাঁদের হাত অনেক বড়। ভূয়া সংগঠনের নামে ওই জমি দখল করতে তাঁরা প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে আসছেন। এ ঘটনায় গত ২৭ অক্টোবর পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।
সংগঠনটির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম বলেন, ‘আমার জানা মতে সজিব ওয়াজেদ জয় নামে দলের কোনো সংগঠন নেই। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সুনাম ক্ষুন্ন করতে এ ধরণের সংগঠন করা হয়েছে। কেউ এই সংগঠনের নামে জমি দখল বা বেআইনি কাজে লিপ্ত থাকলে প্রশাসন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারে।’
এ ব্যাপারে সংগঠনের জেলা কমিটির সহসভাপতি আবদুল আলীম সরকার বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই জমির পাঁচ শতক রেজিষ্ট্রি করা হয়েছে। ওই জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করে তা ভাড়া দেওয়া হবে। সেই ভাড়ার টাকায় অসহায় ও দুস্থদের সেবায় ব্যয় করা হবে।
তবে জেলা রেজিষ্ট্রারের কার্যালয়ে গিয়ে আবদুল আলীমের কথার সত্যতা পাওয়া যায়নি। জেলা রেজিষ্ট্রার জেড এম ইমরান আলী নথিপত্র ঘেঁটে সংগঠনটির নামে ওই দাগে কোনো জমি রেজিষ্ট্রি হয়নি বলে জানান।
রাসেল মাহামুদ ওরফে লাভলু দাবি করেন, ‘ওই জমি আমাদের পূর্ব-পুরুষের সম্পত্তি। জমি বিক্রি করা হলেও কিছু অংশের মালিক আমি। আমার অংশটুকু সজিব ওয়াজেদ জয় পরিষদের নামে দিয়েছি।’
এসব বিষয়ে কথা হলে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে
Leave a Reply