১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।শনিবার

স্বপ্নের কৃষি পদক ছোঁয়ার দাঁড়প্রান্তে ঝিকরগাছার সফল নারী উদ্যোক্তা নাসরিন সুলতানা।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

শাহাবুদ্দিন মোড়ল ঝিকরগাছা :

কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদনে স্বপ্নের কৃষি পদক ছোঁয়ার দাঁড়প্রান্তে যশোরের ঝিকরগাছার সফল নারী উদ্যোক্তা নাসরিন সুলতানা। অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও মেধাশক্তির মাধ্যমে ক্রমাগতই তিনি ভাগ্য বদলিয়েই চলেছে। একজন নারী উদ্যোক্তা হিসাবে সফলতা পেতে বর্তমানে ঝিকরগাছা উপজেলায় নাসরিন সুলতানার নাম উজ্জ্বল করেছেন তার কর্মদক্ষতাকে মূল্যায়ন করে। নাসরিন সুলতানা যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের বারবাকপুর গ্রামের লুৎফর রহমানের মেয়ে। তার মায়ের নাম শিউলী বেগম। দুই ভাই বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। নাসরিন সুলতানা উপজেলার দিগদানা খোশালনগর দাখিল মাদরাস্ াকারিগরি এবং কৃষি কলেজে ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচার শিক্ষা কার্যক্রমের উপর ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করার পাশাপাশি জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে ঝিকরগাছা মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে অনার্সের (সম্মান) সমাপ্ত করেছেন। তিনি কেঁচো কম্পোস্ট (ভার্মি কম্পোস্ট) সার কারখানার মালিক। নাসরিন সুলতানা কেঁচো কম্পোস্টের (ভার্মি কম্পোস্ট) মাধ্যমে তৈরি করছেন জৈবসার। এই সারের চাহিদা ক্রমশই বাড়ছে। তবে বিনিয়োগ বাড়াতে না পাড়ায় উৎপাদন বাড়াতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। তার মতে, ৮-১০লক্ষ টাকার বিনিয়োগ করতে পারলে তিনি উৎপাদন বাড়াতে পারতেন আরো কয়েকগুণ। এতে এলাকার বাহিরের অন্যান্য কৃষকদেরও চাহিদা মতো ভার্মি কম্পোস্ট সারের জোগান দিতে পারতেন তিনি। জৈবসার ব্যবহারে জমির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি ফসলের ফলনও বৃদ্ধি হয় অনেকগুণ। নাসরিন সুলতানার কারখানায় প্রতি নান্দায় (মাটিরপাত্র) প্রতি মাসে তৈরি হয় ৭৫০-৮০০কেজি জৈবসার। কারখানায় নান্দা রয়েছে ১৫০টি। সে এই জৈবসার বিক্রয় করে নিজের লেখপড়ার খরচ যোগান দিয়ে ঝিকরগাছা মহিলা ডিগ্রি কলেজে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স (সম্মান) শেষ করেছেন। পিতার সংসার থেকে নেওয়ার চেয়েও সংসারেও আর্থিক যোগান দেন তিনি। কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি ও বিক্রি করে অভাবী পিতামাতার সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এসেছে। নাসরিন প্রমাণ করে দিয়েছেন মেয়েরা কখনো পিতামাতার সংসারের বোঝা নয়। তারাও তাদের নিজের ইচ্ছাশক্তি ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে হতে পারেন সফল উদ্যোক্তা। ঝিকরগাছার নাসরিন সুলতানা হতে পারে আমাদের যশোর জেলার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত ! পাঁচবছর আগে ১০০ গ্রাম কেঁচো দিয়ে দু’টি নান্দায় দু’ঝুড়ি গোবর দিয়ে কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরির প্রাথমিক ধাপের যাত্রা শুরু করেছিল। প্রথমদিকে সহপাঠী, প্রতিবেশীরা উপহাস করলেও এখন তারা রীতিমত উৎসাহের পাশাপাশি অনেকেই আবার নিজেই এই কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

নারী উদ্যোক্তা নাসরিন সুলতানা বলেন, ২০১৬ সালে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বোধখানা বøকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আইয়ুব হোসেনের হাতে খড়ির মাধ্যমে আমি মাত্র একশত পঞ্চাশ টাকা দিয়ে ১০০ গ্রাম কেঁচো, দু’টি নান্দা (মাটিরপাত্র), দু’ঝুড়ি গোবরের মাধ্যমে জৈবসার তৈরি শুরু করি। প্রথম বছরে আমার যে সার তৈরি হয়েছিল সেটা আমার পিতার জমিতে ব্যবহার করেছিলেন। ১০০ গ্রাম কেঁচো থেকে বর্তমানে ১৫০টি নান্দায় কেঁেচা রয়েছে ৪৫-৫০কেজি। এক কেজি কেঁচোর দাম এখন ১৫০০/- টাকা। গত বছর কেঁচো কম্পোস্ট (ভার্মি কম্পোস্ট) সার তৈরির জন্য আমি একটি চালা (সেড) তৈরি করি। একটি চালা (সেড) এ ১৫০টি নান্দার জন্য চালা তৈরি, মাঁচা, বেড়া ও ছাউনী ঘেরা দিয়ে মোট খরচ হয় প্রায় ১৫-২০হাজার টাকা। আমাদের সংসারে পিতার ৮টি গরু আছে। ফলে আমার গোবর কিনতে হয় না। প্রতিটি নান্দায় ২০০ গ্রাম কেঁচো আর একঝুড়ি গোবর দিলে তা থেকে ২০-২৫ দিনের মাথায় ১৯৫-২০০কেজি জৈবসার তৈরী করা সম্ভব। এককেজি জৈব সার বিক্রয় হয় ১০-১৫টাকা। পাশাপাশি প্রতি নান্দা থেকে ৩মাস অন্তর ২-৩ কেজি কেঁচো বিক্রি করা যায়। আমাদের এলাকার চাষীরা তাদের ফসল, নিরাপদ (বিষমুক্ত) সবজী উৎপাদন করতে প্রায় ৬০-৭০ ভাগ জমিতে এখন কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করছেন। এই সার সকল ফসলে ব্যবহার করা যায়। আমার এই কারখানা থেকে প্রতিমাসে প্রায় ১০-১৫ হাজার টাকা আয় হয়। কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদনে আমি আমার স্বপ্ন কৃষি পদক পাওয়ার বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করছেন। আমি আমাদের উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতি চিরোকৃতজ্ঞ।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, নাসরিন সুলতানা আমাদের একজন সফল কৃষক। তাকে আমরা একটি প্রর্দশনী দিয়েছি। কেঁচো কম্পোস্ট বা জৈব সার তৈরি করে আমাদের পরিবেশবান্ধব ও মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেচলেছে। বর্তমান সময়ে রাসায়নিক সারে ক্ষতিকারক দিক থাকায় রাসায়নিক সারের বিপ্ররীতে নিরাপদ ফসল ও মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধিতে এ সারের কদর ক্রমাগতই বেড়ে চলেছে। নাসরিন সুলতানা একজন নারী হয়ে যে কর্মদক্ষতা প্রকাশ করেছে সত্যিই এটা প্রশংসনীয়। সে আমার মাধ্যমে কৃষি পুরস্কারে পেতে আগ্রহী। আমার দপ্তরের মাধ্যমে তার সকল কর্মকান্ডের বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।