নাজিরুল ইসলাম, শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি:
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের প্রায় চার হাজার পরিবার আর্সেনিক ঝুঁকিতে রয়েছে। আর্সেনিক থেকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন গ্রামবাসীরা। এতে তাদের পরিবারের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
আর্সেনিক দূষিত পানি পান করায় সম্প্রতি এ ইউনিয়নের ১৫ জনের শরীরে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিয়েছে। গত আট বছরের আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত হয়ে এ ইউনিয়নের পাঁচজন মারা গেছেন।
মৃত পাঁচজন হলেন, আব্দুর রশিদ ও তার স্ত্রী কামরুন নাহার, আব্দুল কুদ্দুস ও তার স্ত্রী আম্বিয়া বেগম। আরেকজন হলেন আফছার আলী। মৃতরা সবাই ইউনিয়ের নগর আমরুলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আমরুল ইউনিয়নে ক্ষতিকর মাত্রায় আর্সেনিক শনাক্ত করা হয়েছে। ইউনিয়নের ১৯টি গ্রামের মধ্যে ১৩টিতেই আর্সেনিকের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। মারাত্মক আর্সেনিক প্রবল এলাকা হওয়ায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে আমরুল ইউনিয়নে ১০টি গভীর নলকূপ (সাব-মারসিবল পাম্প) বসানো হয়। এর মাধ্যমে ৪০০ পরিবারকে আর্সেনিক মুক্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়নে চার হাজার পরিবার আর্সেনিক ঝুঁকিতে থাকলেও শুধু ৪০০ পরিবারের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়। তাও গত বছর নলকূপগুলো বসানো হয়। এরমধ্যে আমরুলের হুদার মোড় এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে ছয়টি ট্যাপ বসানো হয়েছিল। কিন্তু এই ট্যাপগুলো থেকে দুর্গন্ধযুক্ত ও ময়লা পানি আসে। এ কারণে ওই গ্রামের ২০টি পরিবার বিশুদ্ধ পানি সংকটে রয়েছেন।
আমরুল ইউনিয়র পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামা অটল বলেন, ইউনিয়নে প্রায় চার হাজার পরিবার আর্সেনিকের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
ইউনিয়নের নগর আমরুলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল করিম। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় আট বছর আগে আর্সেনিক আক্রান্ত হয়ে গ্রামে পাঁচজন মারা যান। ওই সময় সরকারিভাবে একটি টিউবওয়েল বসানো হয়েছিল। সেই টিউবওয়েলের পানি পান করে আমরা অনেকটা সুস্থ আছি। এরপরেও অনেকের শরীরে আর্সেনিকের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে এটার সমাধান চাই।’
আমরুল নগর হুদার এলাকার পুটু মোল্লা নামে এক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তার শরীরে আর্সেনিক উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার শরীরে আর্সেনিক উপসর্গ দেখা দিয়েছে। হাতে ও বুকে দাগ পড়েছে। আমার স্ত্রীর শরীরেও আর্সেনিক উপসর্গ রয়েছে। সবাই আতঙ্কে রয়েছি। আমরা বাঁচতে চাই।’
গ্রামের কুলসুল বেগম বলেন, আমার শরীরের ভিতর জ্বালা করে। হাতের তালু ও পায়ের তলায় দাগ হচ্ছে। কোনো ওষুধেই ভালো হচ্ছে না।’এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোতারব হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে লিভার সিরোসিস, কিডনির সমস্যা ও চর্ম রোগ ছাড়াও মৃত্যুও হতে পারে। যাদের উপসর্গ দেখা দিয়েছে তাদেরকে রোগ থেকে বাঁচতে হলে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে, ভিটামিন এ, ই, সি যুক্ত পুষ্টিকর খাবার বেশি খেতে হবে।
জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক সোহরাব হোসেন ছান্নু বলেন, আর্সেনিক কবলিত এলাকা চিহ্নিত করে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিমের মাধ্যমে উপজেলাবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে।
Leave a Reply