২৫শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।১২ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।শুক্রবার

বুড়িগঙ্গায় এখন নেই মাছ, আছে শুধু লাশ।।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

#জসিম_মাহমুদঃ
বুড়িগঙ্গা নদীতে এক সময় নানা জাতের মাছ পাওয়া গেলেও এখন আর তা মিলছে না। তবে প্রায়ই মিলছে লাশ। এর কোনোটি অজ্ঞাত, আর কোনোটির পরিচয় রয়েছে। এত লাশ কোত্থেকে বুড়িগঙ্গায় আসছে সে সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও জ্ঞাত নন। থানা ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত এক বছরে বুড়িগঙ্গা থেকে উদ্ধার হয়েছে ৪২টি লাশ। এর মধ্যে ১৭টির পরিচয় মিলেছে আর অজ্ঞাত রয়ে গেছে ২৫টি। বেওয়ারিশ হিসেবেই এগুলো দাফন হয়েছে।

হাসপাতাল মর্গ ও পুলিশ সূত্র জানায়, বুড়িগঙ্গা থেকে উদ্ধারকৃত লাশের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এই লাশ নিয়ে অনেকেরই অনেক সন্দেহ-সংশয় রয়েছে। একের পর এক এভাবে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় অনেকে আতঙ্কিতও।

ওয়াইজঘাটের এক শ্রমিক সিরাজ উদ্দিন বলেন, আগে গোসল বুড়িগঙ্গা নদীতেই সারতেন। এখন পানিও যেমন নষ্ট হয়ে গেছে; আর প্রায়ই লাশ উদ্ধারের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কও রয়েছে। ফলে এখন আর কেউ বুড়িগঙ্গায় গোসল করেন না। স্থানীয়দের ধারণা, অন্য কোনো এলাকায় মানুষ হত্যার পর লাশগুলো নিরাপদ স্থান বুড়িগঙ্গায় ফেলে রেখে যায়। নৌকা ডুবে কিংবা লঞ্চে উঠতে গিয়ে পড়ে নিহত হয়েও কিছু লোক লাশ হয়েছেন।

থানা সূত্র জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বুড়িগঙ্গা থেকে উদ্ধার হয়েছে ২টি লাশ। ফেব্রুয়ারিতে ৩টি, মার্চে ৩টি, এপ্রিলে ৫টি, মে মাসে ৩টি, জুনে ৩টি, জুলাইয়ে ৫টি, আগস্টে ৫টি, সেপ্টেম্বরে ৭টি, অক্টোবরে ৫টি এবং নভেম্বরের ২৭ তারিখ পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ৫টি লাশ। যাদের লাশ উদ্ধার হয়েছে এবং পরিচয় জানা গেছে তার মধ্যে যশোরের কেশবপুর থানা বিএনপির নেতা আবু বকর সিদ্দিকও রয়েছেন। গত ১৯ নভেম্বর দুপুরে তার লাশ উদ্ধার হয়। স্থানীয়রা লাশটি ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। পরে তার পরিবারের সদস্যরা লাশটি মর্গে গিয়ে শনাক্ত করেন। তিনি ঢাকায় এসেছিলেন দলীয় মনোনয়নের জন্য। ঢাকায় এসে একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছিলেন। ১৮ নভেম্বর তিনি হোটেল থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন। ওই রাতে তার পরিবারের কাছ থেকে অপহরণকারীরা এক লাখ ৭০ হাজার টাকাও হাতিয়ে নেয়।

এর ৩ দিন পরে ২২ নভেম্বর অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ উদ্ধার হয়। কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। নিহতের শরীরে অসংখ্য আঘাতের দাগ রয়েছে। তার হাত এবং পা ভাঙা। ধারণা করা হচ্ছে হাত-পা ভেঙে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে লাশটি বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেকে মারা যান। গত ১২ সেপ্টেম্বর একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পটুয়াখালী যাওয়ার জন্য তারা লঞ্চে উঠতে গিয়েছিলেন। নৌকা দিয়ে লঞ্চে উঠতে গিয়ে দু’টি নৌযানের মধ্যে পড়ে তাদের নৌকাটি ডুবে যায়। ঘটনার পরপরই দু’টি লাশ এবং পরদিন একটি লাশ উদ্ধার হয়।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, স্থানীয় ছাড়াও বিভিন্ন লোকের তথ্যের ভিত্তিতে বুড়িগঙ্গার বিভিন্ন স্পট থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ইউডি মামলা নিলেও পরে অভিযোগের ভিত্তিতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। আবার কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের পর পুলিশই হত্যা মামলা দায়ের করে। অনেক মামলায় আসামিও গ্রেফতার হয়েছে।

মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গ ইন চার্জ শ্যামল গতকাল বলেন, বুড়িগঙ্গা থেকে উদ্ধারকৃত লাশের বেশির ভাগই আসে অজ্ঞাত হিসেবে। গত ২২ নভেম্বর উদ্ধারকৃত লাশটি এখনো মর্গে পড়ে আছে অজ্ঞাত হিসেবে। শ্যামল বলেন, অজ্ঞাত লাশগুলো বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে তুলে দেয়া হয় দাফন বা সৎকারের জন্য।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।