মোঃ মহাসিন মিয়া-দীঘিনালা।
দেশের পোল্ট্রিশিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন দেশের হাজার হাজার প্রান্তিক খামারিরা। এমনটাই জানালেন আন্দোলনের উদ্যোক্তা, ইসলাম মল্লিক।
তিনি বলেন, সারা দেশের পোল্ট্রির প্রান্তিক খামারিরা যে পরিমার খরচ ও খাবার ব্যয় করে পোল্ট্রি পেছনে তা পোল্ট্রি মুরগি বিক্রি করে ওঠাতে পারছেন না। এর কারণ হলো পোল্ট্রির দাম বাজারে একদম কম হওয়া
পোল্ট্রি শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে দেশের হাজার হাজার প্রান্তিক খামারিগণ। বাংলাদেশ পোল্ট্রি শিল্পকে নিয়ে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোল্ট্রি গ্রুপ থেকে উঠে আসে আর্তনাদ ও প্রান্তিক খামারীদের কান্নার আওয়াজ।
এবং প্রান্তিক খামারিগণ দাবি করেন, আমাদের এই শিল্পের নেই কোনো অভিভাবক, নেই কোন কেন্দ্রীয় কমিটি এবং নেই কোনো জেলা-উপজেলা কমিটি। অভিভাবকহীন এই খামারিদের নেই কোনো আস্থার প্রতিক। তাই আমরা আরো ক্ষতির মুখে পড়ছি। তাছাড়া বিগত প্রায় দু’বছরে করোনার কারণে আমাদের এক কথায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে।
বেশ কয়েকবার প্রান্তিক খামারিগণ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন রেলি ও তীব্র প্রতিবাদ সহ আন্দোলন করে, তাতেও সরকার ও দেশের প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসেনি আমাদের পাশে।
তথ্য সূত্র জানিয়েছে, এই শিল্পের সাথে জড়িয়ে অর্থনৈতিক, ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আজ দিশেহারা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালা উপজেলার কবাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারি মোঃ ইসলাম মল্লিক। যখনি আওয়াজ উঠল দেশের পোল্ট্রিশিল্পের বেহাল দশা তখনি আন্দোলন ও প্রতিবাদে ঝাপিয়ে পড়ে দেশের হাজার হাজার পোল্ট্রি খামারিরা। একাদিকবার কঠোর আন্দোলান, মানববন্ধন এবং মিডিয়ায় প্রচার হওয়ার পরও প্রান্তিক খামারিগণ দেশের কারো ধারা কোনো উপকৃত হয়নি।
ঠিক তখনই মোঃ ইসলাম মল্লিক নামের এই ব্যক্তি সারা বাংলাদেশের পোল্ট্রিশিল্পের সাথে জড়িয়ে থাকা প্রান্তিক খামারিগণদের নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্দোলনের ডাক দেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে সারা বাংলাদেশ থেকে ব্যাপক সাড়া দেন অর্থনৈতিক ক্ষতিগ্রস্ত সহ সকল প্রকার প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারিগণ।
মোঃ ইসলাম মল্লিক আরো বলেন, স্থানীয় পোল্ট্রি শিল্পের সাথে জড়িয়ে থাকা ডিলাররা ৫০/ কেজি ওজনের এক বস্তা খাবারের দাম রাখেন ২৫০০/ শো টাকা এবং প্রতি পিস বয়লার মুরগির বাচ্চা দাম রাখেন, ৩৫/ টাকা কখনো ৪০/ টাকা কখনো ৪৫/ টাকা কখনো ৫০/টাকা যখনি, খামারিদের খামার ব্যবসার সিজন আসে ঠিক তখন বাচ্চার দাম রাখে ৬৫/ টাকা থেকে ৭০/ টাকা পর্যন্ত, শুধুমাত্র কুরবানীর ঈদের আগে ১০/থেকে ১৫/ দিনের জন্য বাচ্চার দাম নেমে আসে ২০/থেকে ৩০/টাকার মধ্যে।
পোল্ট্রির বাচ্চার গুণগত মান ভালো থাকেনা। খাবারের গুণগত মান ভালো থাকেনা। যেভাবে ইচ্ছে ওভাবেই তারা খাবার উৎপাদন করছে। এবং স্থানীয় ডিলাররা খাবারের গায়ে নির্দিষ্ট দাম থেকে সর্বোচ্চ ২০০/ টাকা পর্যন্ত বেশি রাখছে খামারিদের কাছ থেকে।
সারা বাংলাদেশের প্রান্তিক খামারিদের এই আন্দোলনের উদ্যোক্তা হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রান্তিক খামারিদের সাথে পরামর্শ করে তিনি দাবি করেন, ব্রয়লার মুরগির ফিড বা খাদ্যের দাম মিনিমাম মূল্য ২’হাজার থেকে ২১’শত টাকার মধ্যে রাখতে হবে এবং সোনালী লেয়ার ও অন্যান্য মুরগির ফিড বা খাদ্যের দাম প্রতি বস্তায় ২’শত থেকে ৩’শত টাকা কমাতে হবে।
এবং ব্রয়লার, লেয়ার সোনালী সহ সকল ফিড বা খাদ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করতে হবে। ব্রয়লার লেয়ার সোনালী সহ সকল প্রকার মুরগির বাচ্চার বাৎসরিক দাম নির্ধারণ করতে হবে। মিনিমাম মূল্য ২৫(পঁচিশ) থেকে ৩০(ত্রিশ) টাকার মধ্যে বাচ্চার দাম রাখতে হবে।
যেহেতু ডিম বাৎসরিক ভাবে এক দামে বিক্রি করা হয় এবং ব্রয়লার লেয়ার সোনালী সহ সকল প্রকার হ্যাচারি উৎপাদিত বাচ্চার মান বৃদ্ধি করতে হবে। এবং ব্রয়লার মুরগি পাইকারি ১’শত ত্রিশ থেকে চল্লিশ টাকা দাম নির্ধারণ করতে হবে। সোনালী মুরগী ২’শত বিশ থেকে ত্রিশ টাকা দাম নির্ধারণ করতে হবে এবং অন্যান্য মুরগি আলোচনা সাপেক্ষে।
ইসলাম মল্লিক একটি অংক দেখিয়ে বলেন, বাচ্চার দাম বাৎসরিক এবারেজ ৪৫ টাকা পিস ধরলে ১’হাজার বাচ্চার দাম আসে ৪৫’হাজার হাজার টাকা। ব্রয়লার মুরগির ১’হাজার বাচ্চার পেছনে পঞ্চাশ কেজি ওজনের পঞ্চাশ বস্তা খাদ্য খাওয়াতে হয় বস্তা প্রতি ২৫’শত টাকা করে। কোম্পানি দুর্বল বাচ্চা উৎপাদন করায় সেক্ষেত্রে মেডিসিন ব্যবহার করা হয় মিনিমাম ১৫(পনেরো) থেকে ২০(বিশ) হাজার টাকার মধ্যে।
সেই ক্ষেত্রে বাচ্চা, খাদ্য ও মেডিসিন সহ দাম আসে = ১’লক্ষ ৯০’হাজার টাকা।আরো আনুষাঙ্গিক খরচ যেমনঃ বিদ্যুৎবিল ভুসি গাড়ি ভাড়া খরচ ১২’শত টাকা সে ক্ষেত্রে মোট খরচ=২’লক্ষ ২’হাজার টাকা। ১’হাজার পিস মুরগি থেকে ৯’শত পঞ্চাশ পিস মুরগি গড় ওজন ১.৭×৯৫০=১৬১৫/এই ১৬১৫/কেজি মুরগি বিক্রি দাম ১২০×১৬১৫=১৯৩,৮০০/এক হাজার বাচ্চা মোট খরচ ২’লক্ষ ২’হাজার টাকা। ১’হাজার বাচ্চা মোট বিক্রি ১৯৩,৮০০/টাকা
লস হল= ৯,০০০/টাকা।
যদি এই হয় দেশের পোল্ট্রিশিল্পের সাথে জড়িয়ে থাকা প্রায় ৬০(ষাট) লক্ষ প্রান্তিক খামারিদের অবস্থা তাহলে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে প্রশ্ন রেখে বলছি কি করবে সর্বশেষে এই শিল্পের সাথে জড়িয়ে থাকা ৬০ লক্ষ প্রান্তিক খামারিগণ।
তিনি আরো বলেন, প্রান্তিক খামারিগণ লস খেতে খেতে কিছু কিছু ডিলারের কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেনা হয়ে অন্য কোন ডিলারের কাছ থেকে বাচ্চা তুলতে না পেরে দেওলিয়া হয়ে গেছেন।
এভাবে চলতে চলতে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেশেন এই শিল্পের সাথে জড়িয়ে থাকা আমিষ উৎপাদিত প্রান্তিক খামারিগণ, অর্থনৈতিক প্রভাব পড়ছে ৬০(ষাট)লক্ষ প্রান্তিক খামারি পরিবারের উপর। তাই বলছি এখনি সময় এদেরকে হাত ধরে তুলে এই শিল্প শক্ত হাতে ধরে রাখার জন্য না হলে একসময় ক্ষুদ্র গোষ্ঠী ও মধ্যবিত্ত পরিবার সহ কখনোই মিটাতে পারবে না তাদের আমিষের চাহিদা।
ইসলাম মল্লিক আরো বলেন আমাদের পোল্ট্রিশিল্পের বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটি সহ ৬৪/ জেলায় ৬৪/টি ও প্রত্যেকটি উপজেলা সহ কমিটি দিতে হবে।
Leave a Reply