১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।৩০শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।মঙ্গলবার

গল্পগুচ্ছ- চা পাগলা জালাল – ফজলুল হক মনোয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

কশাই পরিবারে জন্ম জালালের। তার
বাবার আর্থিক অবস্হা ভালই ছিল। মোটামুটি আনন্দ বিনোদনের মধ্যে কৈশোর পার করে যৌবনে পা রাখলো। ৭ম / ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করার পর বাবার ব্যবসায় যোগদিতে হলো। কারন তাদের গ্রামটার সকলেরই মূল পেশা হলো ব্যবসা। ব্যবসায় ভাল করতে লাগলো। তখন বাবা মার ইচ্ছা হলো বিবাহ দেওয়ার। চিন্তা মোতাবেক কাজ হলো, তাকে সুন্দরী একটি মেয়ের সাথে ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়া হলো। দেখতে দেখতে দুই দুইটা বাচ্চা হলো। ব্যবসাও বেশ জমে উঠলো। তাদের পাড়ার প্রায় শত ভাগ লোক চা তে অভ্যস্ত । মাংশের ব্যবসার পাশাপাশি চাড়ার ব্যবসাও বেশ জমজমাট চলছিল । এর মধ্যে হঠাৎ একদিন পর পর দুইটি দুঃসংবাদ আসে তার। প্রথমটি হলো তেবাড়ীয়া হাট হতে গরু কিনতে যাদের পাঠানো হয়েছিল, তাদের কাছ থেকে
সমস্ত টাকা ডাকাতরা লুটে নিয়েছে। এই সংবাদের ফলে মানসিক কষ্টের ভিতর তার সময় কাটছিল, ঠিক তখনই আর একটা দুঃসংবাদ এলো, তার দুই বাচ্চাই পুকুরে গোসল করতেগিয়ে পানিতে ডুবেগেছে। পানি থেকে বাচ্চাদের তোলা হলো, কিন্তু বিধি বাম, দুইটা বাচ্চাই মৃত। সাথে সাথে স্বামীস্ত্রী উভয়ই পাগল হয়ে যায় । আর কোনদিন ভাল হয়নি তারা। পাগল হয়ে তারা সংসার বাড়ী সবই ছাড়লো, দুই জন দুই পথে চলে গেল। স্বামীর চায়ের খুব নেশা ছিল এবং যাত্রাদেখার খুব অভ্যাস ছিল, তাই তার মুখে ছিল সব সময় নবাব সিরাজ উদ দৌলা নাটকের ডায়লগ । আর চায়ের কেটলি তার নিত্য সংগী ছিল। পছন্দমত বাড়ীতে ভিক্ষা করতো, কামার বাড়ীতে গিয়ে চা গরমকরে চা পাতি সহ খেয়ে ফেলতো। পছন্দমত বাড়ীতে গিয়ে বলতো রাজা মশায় এসেছে, চারটা ভাত দিতে হবে যে। ভাত থেতেদিলে একেবারে ভাত শেষ করে বলতো, মিয়ার বেটা, তরকারী রয়েগেল যে, তখন আবার ভাত। এবার সম্পূর্ণ তরকারী খেয়ে আবার বলতো মিয়ার বেটা, ভাত রয়েগেল যে। এভাই তার জীবন চলতে লাগলো। এদিকে তার স্ত্রী তার বাবার বাড়ীতে থেকে ভিক্ষা করে দিন পার করছিল।
হঠাৎ একদিন দুজনের দেখা হয়ে যায়। স্ত্রী তাকে দেখে কাপড়দিয়ে মুখ ঢাকে। স্বামী স্ত্রীকে প্রশ্ন করে মুখ লুকাচ্ছো কেন? তোমার ও ভাগ্য মন্দ আমার ও ভাগ্য মন্দ। তুমিও ভিক্ষা করে খাও আমিও ভিক্ষা করে খাই। জীবনে আর দুই জনের স্বাক্ষাত হয়নি। এলাকায় একবার রক্তচোষার গুজব চলছিল । রাতে কোন এক কামারের দোকানে চা গরম করছিল। রক্তচোষা মনে করে অনেক মারা হয় তাকে। সেবার জানে বেচে যায়। এভাবে চলতে চলতে ১৯৮৮ সালের বন্যায় সময়, রাস্তায় অনেক পানি, সে ওখান দিয়েই যাচ্ছিল। লোকজন মানা করছিল, ওখানদিয়ে না যেতে। স্রোতের কারনে ওখানে দহের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু জালাল পাগলা শোনার লোক নয়। নেমে পড়ে সকলের বাধা উপেক্ষা করে। আর অমনি শ্রোতের টানে অনেকদুর চলে যায়। লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঠিকই, কিন্তু জীবিত নয়, মৃত। তার স্ত্রী ও পৃথিবী ত্যাগ করেছে, সেও বিদায় নিল। এই ভাবে জালাল পাগলার করুন কাহিনীর সমাপ্তি ঘটলো।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।