২৪শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।৯ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।বুধবার

কৃষ্ণ সখা সুদামা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অজিৎ সেন।।ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এক প্রিয় বন্ধু ছিলেন সুদামা নামে এক ব্রাহ্মন। তারা একই সাথে গুরুগৃহে শিক্ষালাভ করেছিলেন। তিনি গৃহস্থ হওয়া সত্ত্বেও সংগ্রহ পরিগ্রহকে দূরে রেখে ভাগ্য অনুসারে যা কিছু পাওয়া যেত তাতেই সন্তুষ্ট থাকতেন। ভগবানের উপাসনা এবং ভিক্ষার্জনই ছিল তার রোজকার কর্মসূচী। পত্নী অতীব পতিব্রতা এবং নিজের স্বামীর সাথে সর্বাবস্থাতেই সন্তুষ্ট থাকতেন।
একদিন দুঃখিনী সেই পতিব্রতা ক্ষুধার তাড়নায় কাঁপতে কাঁপতে তার স্বামীর কাছে গিয়ে বললেন, হে স্বামী, সাক্ষাৎ লক্ষ্মীপতি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আপনার বন্ধু। তিনি শরনাগত বৎসল এবং ব্রাহ্মন ভক্ত। আপনি তার কাছে একবার যান। তিনি যখন জানবেন যে আপনি ভাতের অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন তখন তিনি আপনাকে যথেষ্ট ধন সম্পত্তি দেবেন। তিনি এখন দ্বারকায় নিবাস করছেন। আপনি সেখানে নিশ্চই যান। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে সেই দীননাথ আপনি না বললেও আমাদের দারিদ্র দূর করে দেবেন।
সুদামার স্ত্রী যখন কয়েকবার একই কথা বলে তাকে দ্বারকা যাবার জন্য বলতে লাগলেন তখন সুদামা মনে মনে ভাবলেন অর্থের জন্য যাবার প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দর্শন হয়ে যাবে। এই অজুহাতে জীবনের এই সর্বশ্রষ্ঠ লাভ তো হয়ে যাবে। এই রকম ভেবে সুদামা দ্বারকা যাবার মনস্থির করলেন। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন কল্যানী, শ্রীকৃষ্ণকে দেবার মত যদি বাড়িতে কিছু থাকে তবে আমায় দাও। আশে পাশের ব্রাহ্মন বাড়ি থেকে ব্রাহ্মনী চার মুঠো চিঁড়ে চেয়ে নিয়ে এসে একটা কাপড়ে পুটলী করে দিলেন আর সেইটা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে উপহার দেবার জন্য স্বামীর হাতে দিলেন। ব্রাহ্মন সুদামা ওই চিঁড়ের পুটলী নিয়ে দ্বারকার পথে রওনা হলেন। রাস্তায় যেতে যেতে তিনি ভাবতে ভাবতে চললেন যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে আমার দেখা কি করে হবে?
দ্বারকায় পৌঁছে সুদামা অন্যান্য ব্রাহ্মনদের জিজ্ঞাসাবাদ করে শ্রীকৃষ্ণের মহলে গিয়ে পৌঁছলেন। সকলে তার দীনহীন অবস্থা দেখে তাকে উপহাস করতে লাগলো। তিনি দারোয়ানকে বললেন ভাইরে, শ্রীকৃষ্ণকে গিয়ে বলো যে তার সাথে দেখা করবার জন্য তার বাল্যবন্ধু সুদামা এসেছে। দ্বাররক্ষীরা তো প্রথমে আমলই দিলো না কিন্তু যা হোক তারা ভিতরে গিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বললো প্রভু, দুয়ারে একজন অতি দরিদ্র ব্রাহ্মন এসেছে। তার সারা গায়ে ধূলোর পস্তারা পড়া, পাগুলো সব ফেটে চৌচির। তার দারিদ্র দেখে দ্বারকার ধূলোও আশ্চর্য হয়ে গেছে। সে বলছে তার নাম সুদামা, আর বলছে সে নাকি আপনার বন্ধু।
সুদামার নাম শোনা মাত্র ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজের সিংহাসন থেকে নেমে এলেন আর খালি পায়ে দুয়ারের দিকে ছুটে চললেন। সেখানে গিয়ে সুদামাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, হে বন্ধু, তুমি তো এসেছো কিন্তু অনেক কষ্ট ভোগ করার পর এসেছো। দ্বারকায় তোমার শুভাগমন হোক। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সুদামাকে নিজে গিয়ে তার নিজের ঘরে খাটের ঘরে বসালেন। তার পা দুখানা ধুইয়ে দিয়ে চরনামৃত গ্রহন করলেন এবং স্নান করিয়ে পরবার জন্য রেশমী বস্ত্র দিলেন। রুক্মিনী স্বয়ং তাকে পাখার বাতাস করতে লাগলেন এবং ভগবান তাকে বহুবিধ সুস্বাদু খাবার দিলেন ভোজনের জন্য। বহুক্ষন নিজেদের মধ্যে বাল্যকালের স্মৃতি রোমহ্নন করার পর শ্রীকৃষ্ণ বললেন বন্ধু, বৌদি আমার জন্য কি পাঠিয়েছে? সুদামা প্রথমে একেবারে সঙ্কুচিত হয়ে পড়লেন কিন্তু শেষকালে শ্রীকৃষ্ণ নিজেই সেই চিঁড়ে বের করে ফেললেন। সেই চার মুষ্টি চিঁড়ে খেলেন। এরপর কিছুদিন সুদামা দ্বারকায় থাকলেন কিন্তু যেই জন্য আসলেন তা চাইতে পারলেন না। কিন্তু ভগবান সবই জানতেন। সুদামা দ্বারকা থেকে বাড়িতে চলে এলেন কিন্তু একি বাড়ির অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেল, সুদামার অভাব দূর হলো। সুদামা বুঝলেন এসবই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের লীলা। ধন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বন্ধুত্ব।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনাঃ

খুলনার কয়রায় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৬ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খুলনা জেলার আয়োজনে ও কয়রা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় এ সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সচেতনতামূলক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম মোহসিন রেজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আলম।
এসময় আরও উপস্হিত ছিলেন, কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানি, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল, মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী, বাঙ্গালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী, আমাদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জুয়েল সহ সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ।

নিরাপদ খাদ্যের মূল প্রবন্ধ উপস্হাপন করেন খুলনা জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোঃ মোকলেছুর রহমান।

কয়রায় নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত।

মুক্তাগাছা প্রতিনিধি:

মুক্তাগাছায় চাচা শ্বশুরের দায়ের কোপে ভাতিজা বউ শিউলী আক্তার খুন হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার সকাল ৭টার দিকে উপজেলার বাঁশাটি ইউনিয়নের গোয়ারী উত্তর পাড়া গ্রামে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানাযায়, উপজেলার গোয়ারী উত্তর পাড়া গ্রামের বাসিন্দা সিএনজি চালক শরিফুল ইসলামের স্ত্রী শিউলী আক্তার (৩০) স্বপরিবারে ঘুমাচ্ছিল। এ সময় তার চাচা শ্বশুর মৃত নেওয়াজ আলীর পুত্র সোলায়মান মিয়া তাদেরকে ডাকা ডাকি করে ঘর থেকে বের হতে বলে। দরজা খুলে শরিফুল ও তার স্ত্রী শিউলী ঘর থেকে বের হলে সোলায়মান তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালজ করে। এক পর্যায়ে সোলায়মানের হাতে থাকা দা দিয়ে এলোপাতারি কোপাতে শুরু করে। সোলায়মান দা’ দিয়ে শিউলীর ঘাড়ে কোপ দিলে শিউলী ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে সোলায়মান দা নিয়ে শরিফুলকে ধাওয়া দিলে শরিফ প্রাণ বাঁচাতে পুকুরে লাফ দিয়ে প্রণে বাঁচায়। পরে প্রতিবেশীরা এসে তাকে উদ্ধার করে।
নিহত শিউলী একই উপজেলার মুজাটি গ্রামের মৃত হামেদ আলীর মেয়ে। গত ১২ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। শিউলর ৫ মাসের মেয়ে শিশুসহ ৩ কন্যা সন্তান রয়েছে।
উল্লেখ্য গত শুক্রবার বিকেলে শিউলীর ৬ বছরের মেয়ে লামিয়া এর সাথে সোলায়মানের পুত্রের তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ঝগড়া হয়। সেই ঝগড়ার জেরেই সকালে নিহতের বাড়িতে এসে তাদের ঘুম থেকে ডেকে এ খুনের ঘটনা ঘটান।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মুক্তাগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) জহিরুল ইসলাম মুন্না জানান, শনিবার সকালে উপজেলার গোয়ারী উত্তর গ্রামে হত্যার ঘটনা ঘটে। থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পাঠায়। মামলার প্রস্তুতি চলছে। এঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

মুক্তাগাছায় চাচা শ্বশুড়ের দায়ের কোপে ৩ সন্তানের জননী খুন।