অজিৎ সেন।।ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এক প্রিয় বন্ধু ছিলেন সুদামা নামে এক ব্রাহ্মন। তারা একই সাথে গুরুগৃহে শিক্ষালাভ করেছিলেন। তিনি গৃহস্থ হওয়া সত্ত্বেও সংগ্রহ পরিগ্রহকে দূরে রেখে ভাগ্য অনুসারে যা কিছু পাওয়া যেত তাতেই সন্তুষ্ট থাকতেন। ভগবানের উপাসনা এবং ভিক্ষার্জনই ছিল তার রোজকার কর্মসূচী। পত্নী অতীব পতিব্রতা এবং নিজের স্বামীর সাথে সর্বাবস্থাতেই সন্তুষ্ট থাকতেন।
একদিন দুঃখিনী সেই পতিব্রতা ক্ষুধার তাড়নায় কাঁপতে কাঁপতে তার স্বামীর কাছে গিয়ে বললেন, হে স্বামী, সাক্ষাৎ লক্ষ্মীপতি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আপনার বন্ধু। তিনি শরনাগত বৎসল এবং ব্রাহ্মন ভক্ত। আপনি তার কাছে একবার যান। তিনি যখন জানবেন যে আপনি ভাতের অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন তখন তিনি আপনাকে যথেষ্ট ধন সম্পত্তি দেবেন। তিনি এখন দ্বারকায় নিবাস করছেন। আপনি সেখানে নিশ্চই যান। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে সেই দীননাথ আপনি না বললেও আমাদের দারিদ্র দূর করে দেবেন।
সুদামার স্ত্রী যখন কয়েকবার একই কথা বলে তাকে দ্বারকা যাবার জন্য বলতে লাগলেন তখন সুদামা মনে মনে ভাবলেন অর্থের জন্য যাবার প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দর্শন হয়ে যাবে। এই অজুহাতে জীবনের এই সর্বশ্রষ্ঠ লাভ তো হয়ে যাবে। এই রকম ভেবে সুদামা দ্বারকা যাবার মনস্থির করলেন। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন কল্যানী, শ্রীকৃষ্ণকে দেবার মত যদি বাড়িতে কিছু থাকে তবে আমায় দাও। আশে পাশের ব্রাহ্মন বাড়ি থেকে ব্রাহ্মনী চার মুঠো চিঁড়ে চেয়ে নিয়ে এসে একটা কাপড়ে পুটলী করে দিলেন আর সেইটা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে উপহার দেবার জন্য স্বামীর হাতে দিলেন। ব্রাহ্মন সুদামা ওই চিঁড়ের পুটলী নিয়ে দ্বারকার পথে রওনা হলেন। রাস্তায় যেতে যেতে তিনি ভাবতে ভাবতে চললেন যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে আমার দেখা কি করে হবে?
দ্বারকায় পৌঁছে সুদামা অন্যান্য ব্রাহ্মনদের জিজ্ঞাসাবাদ করে শ্রীকৃষ্ণের মহলে গিয়ে পৌঁছলেন। সকলে তার দীনহীন অবস্থা দেখে তাকে উপহাস করতে লাগলো। তিনি দারোয়ানকে বললেন ভাইরে, শ্রীকৃষ্ণকে গিয়ে বলো যে তার সাথে দেখা করবার জন্য তার বাল্যবন্ধু সুদামা এসেছে। দ্বাররক্ষীরা তো প্রথমে আমলই দিলো না কিন্তু যা হোক তারা ভিতরে গিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বললো প্রভু, দুয়ারে একজন অতি দরিদ্র ব্রাহ্মন এসেছে। তার সারা গায়ে ধূলোর পস্তারা পড়া, পাগুলো সব ফেটে চৌচির। তার দারিদ্র দেখে দ্বারকার ধূলোও আশ্চর্য হয়ে গেছে। সে বলছে তার নাম সুদামা, আর বলছে সে নাকি আপনার বন্ধু।
সুদামার নাম শোনা মাত্র ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজের সিংহাসন থেকে নেমে এলেন আর খালি পায়ে দুয়ারের দিকে ছুটে চললেন। সেখানে গিয়ে সুদামাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, হে বন্ধু, তুমি তো এসেছো কিন্তু অনেক কষ্ট ভোগ করার পর এসেছো। দ্বারকায় তোমার শুভাগমন হোক। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সুদামাকে নিজে গিয়ে তার নিজের ঘরে খাটের ঘরে বসালেন। তার পা দুখানা ধুইয়ে দিয়ে চরনামৃত গ্রহন করলেন এবং স্নান করিয়ে পরবার জন্য রেশমী বস্ত্র দিলেন। রুক্মিনী স্বয়ং তাকে পাখার বাতাস করতে লাগলেন এবং ভগবান তাকে বহুবিধ সুস্বাদু খাবার দিলেন ভোজনের জন্য। বহুক্ষন নিজেদের মধ্যে বাল্যকালের স্মৃতি রোমহ্নন করার পর শ্রীকৃষ্ণ বললেন বন্ধু, বৌদি আমার জন্য কি পাঠিয়েছে? সুদামা প্রথমে একেবারে সঙ্কুচিত হয়ে পড়লেন কিন্তু শেষকালে শ্রীকৃষ্ণ নিজেই সেই চিঁড়ে বের করে ফেললেন। সেই চার মুষ্টি চিঁড়ে খেলেন। এরপর কিছুদিন সুদামা দ্বারকায় থাকলেন কিন্তু যেই জন্য আসলেন তা চাইতে পারলেন না। কিন্তু ভগবান সবই জানতেন। সুদামা দ্বারকা থেকে বাড়িতে চলে এলেন কিন্তু একি বাড়ির অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেল, সুদামার অভাব দূর হলো। সুদামা বুঝলেন এসবই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের লীলা। ধন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বন্ধুত্ব।
Leave a Reply