নজরুল ইসলাম ,মৌলভীবাজা জেলা প্রতিনিধি।
মৌলভীবাজারে ফয়সল নামে এক কৃষকের লিজকৃত প্রায় এক একর কৃষি জমির উপর লাগানো লাউ গাছের গোড়া কেটে দিয়ে ক্ষেত ধ্বংশ করে দিয়েছে দুবৃত্তরা। এ ঘটনায় গ্রামজুড়ে তোলপাড় আর নিন্দার ঝর বইছে।মঙ্গলবার ৩ আগষ্ট মধ্যরাতে সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের জগন্নাথপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে কৃষক ফয়সলকে সমবেদনা জানাতে ওইদিন সকালে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষিক্ষেত পরিদর্শন করতে ছুটে আসেন ১১নং মোস্তফাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তাজ ও সাবেক ইউপি সদস্য ইমরান আহমদসহ জনপ্রতিনিধি ও আশপাশের সাধারণ মানুষ। দুপুর ১২টার দিকে ক্ষতিগ্রস্থ লাউক্ষেত পরিদর্শন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী লুৎফুল বারীসহ কর্মকর্তারা। এসময় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ফয়সল আহমদকে শান্তনা দিয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা।সরেজমিন সূত্রে জানা যায়,জগন্নাথপুর গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আজাদ মিয়ার বাড়িতে কেয়াটেকার হিসেবে পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করে আসছেন ফয়সল আহমদ নামের এক কৃষক। ওই বাড়িতে বসবাস করে তিন দীর্ঘদিনযাবতদেশীআলু,করলা,শষা,চিচিঙ্গা,লাউসহ শীতকালীন নানান শাক সবজি সাফল্যের চাষ করে আসছেন। চাষ করা এসব শাক সবজি জেলা সদরের বিভিন্ন হাটে বিক্রি হয়ে থাকে। এবছর বাড়ির আশপাশে স্থানীয়দের কাছ থেকে লিজ নিয়ে প্রায় এক একর কৃষি জমির উপর শীতকালীন সবজি লাউ লাগালে তাতে লাউয়ের বাম্পার ফলন হয়।সূত্রে জানা যায়,মঙ্গলবার রাতে দুবৃত্তরা বাঁশের বেড়া ভেঙ্গে ক্ষেতে প্রবেশ করে প্রতিটি লাউ গাছের গোড়া কেটে দিলে ক্ষেতে লাগানো শতশত লাউগাছ মরে যায়,ধ্বংশ হয়ে যায় পুরো লাউক্ষেত। বউয়ের গহনা বিক্রি আর লোনের টাকা দিয়ে কৃষক ফয়সল ও তাঁর সহযোগী কৃষি শ্রমিক হোসেন মিয়াকে সাথে নিয়ে লাউ ক্ষেতে প্রথমে চারা রোপন করেন কৃষক ফয়সল। ৩ মাসেরও বেশি সময় নিজেদের ঘাম আর শ্রম দিয়ে গড়ে তোলা লাউক্ষেত সম্পন্ন করতে ব্যায় হয় প্রায় লক্ষাধিক টাকারও বেশি। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানান কৃষক ফয়সল।কান্না জড়িত কন্ঠে ফয়সল আহমদ জানান,তিন মাস যাবত চারজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করতেনলাউক্ষেতে,বউয়ের গহনা বিক্রি,গরু বিক্রি আর লোন নিয়ে তিলে তিলে গড়ে তোলা আমার সব সপ্ন শেষ। তিনি জানান, আমি কৃষিতে সফল এটি হয়তো কারো সহ্য হচ্ছেনা এমন হতে পারে,তবে আমার কারো সাথে শত্রতা নেই,কেবা কারা আমার এই ক্ষতি করল তাও জানা নেই।
তিনি জানান,সোমবার ২ আগষ্ট রাত ১২টার দিকে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ি। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘুম থেকে উঠে লাউ ক্ষেতে গিয়ে দেখি লাউ ক্ষেতের বাঁশের বেড়া ভেঙ্গে প্রতিটি লাউয়ের গোড়া কেবা কারা কেটে দেয়। তিনি আরও জানান,৪ বছর আগে এধরণের ঘটনা ঘটলেও তাতে আমি কোন প্রতিকার পাইনি।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী ক্ষতিগ্রস্ত লাউ ক্ষেত পরিদর্শনে গিয়ে প্রতিবেদককে জানান,জগন্নাথপুর গ্রামে ফয়সল আহমদ নামে একজন কৃষক লাভের আশায় লাউ ক্ষেতকরেছিলেন,খুব সুন্দর ফসল হয়েছিল,যা দেখে অন্যরা উৎসাহিত হতে পারত,কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য কেবা কারা রাতে লাউগাছ গুলো কেটে দেয়। এতে তাঁর পুরো প্রকল্প নষ্ট হয়ে যায়। ওই কৃষকের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা পরবর্তীতে কৃষি লোন প্রাপ্তিসহ সব ধরনের কৃষি সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।
মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ছিনুল হক জানান,বিষয়টি নিয়ে এখনো কেউ অভিযোগ করেননি,অভিযোগ পেলে খোঁজ নিয়ে পরবর্তীতে আইনগত প্রদক্ষেপ নেয়া হবে।মোস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদেরচেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তাজ জানান,কৃষি ও কৃষক আমাদের জাতীয় সম্পদ,কৃষির উপর এমন শত্রুতা পাশবিকতা ছাড়া কিছুই নয়। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরবর্তী প্রদক্ষেপ গ্রহন করব।
Leave a Reply