এম এ রশীদ বিশেষ প্রতিনিধি:
ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে ফলের উৎপাদন বাড়ানো এবং মূল্যবান মধু সংগ্রহের জন্য মৌমাছি পুষতে উৎসাহিত করছে সরকার। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মৌমাছি চাষ বৃদ্ধি করতে গোলাপগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস উন্নত মৌমাছি ও বাক্স বিতরণ করেছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে উপজেলা কৃষি অফিস ৬ জন কৃষককে উন্নত জাতের রানী মৌমাছি এবং বাক্স সরবরাহ করেছে। বাক্স বসানোর ১৫দিনের মধ্যেই মধু সংগ্রহ করেছেন কৃষক। মৌমাছির বংশ বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন চাক সৃষ্টি হলে উৎপাদন আরো বাড়বে বলে আশা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। এদিকে, মৌমাছির চাকে নতুন রানী মৌমাছির জন্ম এবং চিহ্নিত করার বিষয়টি না জানার কারনে লাভজনকভাবে মৌমাছি চাষ করতে পারছেন না বলে জানান কৃষকরা। এব্যাপারে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানায় উপজেলা কৃষি অফিস।
সরকার ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে তেল বীজ উৎপাদন বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করলে উপজেলায় সরিষা ও সূর্যমুখীর চাষ বৃদ্ধি পায়। উপজেলার পূর্ব থেকেই বিচ্ছিন্নভাবে সরিষা চাষ হলেও গত কয়েক বছরে সরিষা চাষ বৃদ্ধি পায়। তিন সপ্তাহ পূর্বে উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ, ভাদেশ^র, লক্ষীপাশা, লক্ষনাবন্দসহ ৬টি ইউনিয়নের ৬জন কৃষকের মধ্যে উন্নত জাতের রানী মৌমাছি ও বাক্স সরবরাহ করে উপজেলা কৃষি বিভাগ। গোলাপগঞ্জের চাষীরা মৌ চাষে নতুন হওয়ায় অনেকের ফলন পেতে দেরি হচ্ছে। তবে বাইরে থেকে অভিজ্ঞ চাষী এনে দু‘এক দিনের মধ্যে তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মৌচাক সৃষ্টির জন্য কুমিল্লা থেকে উন্নত জাতের রানী মৌমাছি আনা হয়েছে। এসব মৌমাছি থেকে দ্রুত ও অধিক মধু পাওয়া যায়। উন্নতমানের ‘মলিনিচরা’ জাতের রানী মৌমাছি সাধারণ মৌমাছির মতো হিংস্র নয় এবং আকারে বড় হয়। এসব মৌমাছি থেকে মধু হয় বেশি এবং মধু সংগ্রহ করা সহজ। মৌচাক থেকে রানী মৌমাছি পৃথক করে নতুন নতুন বাক্সে চাক সৃষ্টি করা গেলে উৎপাদন বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলার ভাদেশ^র খমিয়া পাতন এলাকার কৃষক আব্দুল মনাফ জানান, তিনি মৌমাছির বাক্স বসানোর ১৫ দিনের মধ্যে ২ কেজি মধু আহরণ করেছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরো ২ কেজি মধু আহরণ করতে পারবেন বলে আশা করছেন। সরিষা চাষের পাশাপাশি মধু আহরণ লাভজনক বলে জানান তিনি। আব্দুল মনাফ বলেন, একটি বাক্স ৪ থেকে ৬টি ট্রে থাকে। মৌমাছির জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ, ট্রে স্থাপন ও ট্রে থেকে মধু আহরণে সতর্কতা প্রয়োজন। এসব সম্পর্কে ধারনা থাকলে যে কেউ লাভবান হতে পারবেন। তবে, বাক্সে নতুন রানী মৌমাছি পৃথক করার বিষয়টি তিনি জানেন না বলে নতুন বাক্স বসাতে পারছেন না জানিয়ে বলেন, গত বছর তিনি নিজ উদ্যোগে ৪ হাজার টাকা দিয়ে একটি রানী মৌমাছি এনেছিলেন। কিন্ত নতুন রানী মৌমাছির জন্ম ও পৃথক করা-না জানায় নতুন বাক্স বসাতে পারেননি। পরে রানী মৌমাছি পুরো চাক নিয়েই চলে য়ায়। নতুন রানী মৌমাছি সময় মতো পৃথক করা না গেলে নতুন বাক্স বসানো সম্ভব নয়। এবার উপজেলা কৃষি বিভাগ সহায়তা দিচ্ছে, আশা করছি উৎপাদন ও বাক্স বাড়ানো যাবে। তিনি এবিষয়ে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করতে উপজেলা কৃষি বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ভাদেশ্বর ইউনিয়ন সিআইজি সভাপতি নজরুল ইসলাম জানান, সরকার কৃষির উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। কৃষকদের প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এসি রুমে উন্নত প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন প্রদর্শনীতে নিয়ে যাওয়া, উন্নত বীজ, সার সরবরাহ করায় উৎপাদন বাড়ছে। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় খমিয়া পাতন এলাকার একাধিক কৃষক কৃষি উৎপাদনে জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে এখানের কৃষকরা মৌ চাষেও জাতীয় পুরষ্কার অর্জন করবেন বলে তাঁর বিশ্বাস।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মাস্টার বুরহান উদ্দিন বলেন, সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি পালনে মৌমাছির মাধ্যমে ফুলের পরাগায়ন ভালো হয় এবং উৎপাদন ভালো পাওয়া যায়। আবার মৌ চাক থেকে খাঁটি মধু সংগ্রহ করতে পারেন কৃষক। উপজেলায় এধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করায় কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। এব্যাপারে তিনি উপজেলা কৃষি বিভাগকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, গোলাপগঞ্জ উপজেলার তিন দিকে বৃহৎ তিনটি হাওর হাকালুকি, ধামড়ি এবং বাঘা হাওর রয়েছে। হাওরে ব্যাপকভাবে সরিষা চাাষের মাধ্যমে বানিজ্যিকভাবে মধু আহরণ সম্ভব। কৃষক কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, এখন শুধু একটি ফসল উৎপাদন করে মুনাফা করা সম্ভব নয়। তাই একই সাথে একাধিক কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। সরিষার সাথে মৌ চাষ সেরকমই একটি উদ্যোগ হতে পারে। তিনি বলেন, কৃষি দেশের অর্থনীতির প্রাণ। কৃষি ও কৃষককের উন্নয়নে বর্তমান আওয়ামী লীগর সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহন করেছে, যা সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে।
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের মৌ চাষে দক্ষতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিছুজ্জামান জানান, উপজেলায় যারা মৌ চাষ শুরু করেছেন তারা সবাই প্রায় নতুন। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দু‘একদিনের মধ্যে বাইরে থেকে অভিজ্ঞ মৌ চাষী এনে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে, ফুল বেশি হলে কৃষকরা প্রতি সপ্তাহে মধু আহরণ করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
Leave a Reply