১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।২৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।সোমবার

খাগড়াছড়িতে বেড়েছে বেকারত্ব

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

খাগড়াছড়িতে বেড়েছে বেকারত্ব

আবদুল জলিল, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

খাগড়াছড়িতে গত এক দশক ধরে বেড়েই চলছে বেকারত্বের সংখ্যা। শিক্ষার নিম্নমান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার অভাব থাকার পাশাপাশি কাজের সুযোগ কমে যাওয়ায় চাকুরী ও শ্রম বাজারে ইতোমধ্যেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে শিক্ষিত তরুণরা।

তাছাড়া সরকারি চাকুরীতে ঘুষ বানিজ্য, স্বজনপ্রীতি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সেচ্ছাচারিতায় অযোগ্যরা পাচ্ছে কাজ ও মেধাবীরা হচ্ছে বেকার বলে অভিযোগ করছে অনেকে। শিক্ষিত তরুণরা অর্থের অভাবে পাচ্ছেনা চাকুরী নামক সোনার হরিণ কিংবা হতে পারছেনা উদ্যোক্তা।

পরিসংখ্যান অফিস সূত্র মতে, জেলায় এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ শিক্ষিত যুবক-যুবতী বেকার। যা গত এক দশকে অনেকাংশেই বৃদ্ধি পেয়েছে।

দীঘিনালা উপজেলার রিটেন চাকমা বলেন, সরকারি বিভিন্ন নিয়োগে বার বার লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেও ভাইভাতে চাকুরীটা হয়নি। আমি একজন শারিরীক প্রতিবন্ধী হয়ে স্নাতক পাশ করেও আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

মাটিরাঙ্গা উপজেলার আশরাফুল আলম জানান, স্নাতকোত্তর শেষ করে সরকারি চাকরির জন্য বহুবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। অর্থের অভাবে উদ্যোক্তাও হতে পারছিনা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়, স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার প্রায় ৩৭ শতাংশ এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হলো ৩৪ শতাংশ। এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করা তরুণ-তরুণীর মধ্যে বেকারত্বের হার যথাক্রমে ২৭ ও ২৮ ভাগ। এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ৬ লাখের বেশি ব্যক্তিদের উপর জরিপ করে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশে উচ্চ ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যাই বেশি। উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি যেখানে সমাজ ও দেশকে নিজের মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে এগিয়ে নেবার কথা, সেখানে তার বেকারত্ব হতাশাজনকই নয়, উদ্বেগেরও বটে। উচ্চশিক্ষার জন্য এটা অংশনি সংকেত।

বিশ্লেষকদের মতে বেকার সমস্যার সমাধানকল্পে শিক্ষিত যুবকদের সরকারি নানা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হতে সকল সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারি-বেসরকারী চাকুরীতে নিয়োগ বানিজ্য বন্ধ সহ মেধাবীদের অধিক মূল্যায়ন করতে হবে। পাশাপাশি পাহাড়ে কৃষির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। উচ্চ শিক্ষিত হয়েও অনেকে ড্রাগন, বিভিন্ন প্রজাতির আম,লিচু সহ মৌসুমী ফল চাষ করে ঘুচিয়েছে বেকারত্ব। অনেকে আবার গরু,ছাগল, হাঁস,মুরগী প্রভৃতি পালন করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। তাছাড়া ডিজিটাল প্লাটফর্মে ফ্রিলান্সিং ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

খাগড়াছড়ি জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, জেলার বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এর মাধ্যমে হাস-মুরগী,গবাদি পশু পালন, মৎস্যচাষ, কৃষি, পোশাক তৈরী,বেসিক কম্পিউটার,ইলেকট্রিক্যাল এন্ড হাউজ ওয়্যারিং, ইলেকট্রনিক্স ও রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ার কন্ডিশনিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এরমাধ্যমে প্রতিবছর শতশত বেকাররা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে।

শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন, সরকার পাহাড়ের কর্মক্ষম যুবক ও যুবতীদের বেকারত্ব ঘুচাতে প্রতিটি উপজেলা সদরে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করছে। এরইমধ্যে জেলার দীঘিনালা ও রামগড়ে দুটি কেন্দ্রের নির্মানকাজ চলমান রয়েছে। খুব শিগগিরই বাকী ৭ উপজেলাতেও নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এর মাধ্যমে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা স্বল্প খরচে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষিত হয়ে দেশে ও বিদেশে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ পাবে। তাছাড়া যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রতিবছর শত শত বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি পাহাড়ে উদ্যোক্তা হয়ে অনেকেই সফলতা পেয়েছে।

 

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।