সাহাদাত শিকদার গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি।
গাজীপুরের কাপাসিয়ার উপর দিয়ে বয়ে চলা শীতলক্ষ্যা নদী ও নদীর তীরবর্তী পরিবেশ প্রতিনিয়ত দূষিত হয়ে চলেছে। নির্বিচারে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় একদিকে যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, তেমনি চলাফেরা করতেও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এছাড়াও জীবাণুবাহী বর্জ্য যত্রতত্র ফেলায় তীরের বাসিন্দারা বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। সেইসঙ্গে আবর্জনার উৎকট গন্ধে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন,এই সমস্যা সমাধানে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশ দূষণকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাপাসিয়া সদরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে আবর্জনার পাহাড় গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে কাপাসিয়া বাজার, সাফাইশ্রী, বানার হাওলা ,কাপাসিয়া সদর , ঘাটসহ তীরবর্তী এলাকাজুড়ে বাসা-বাড়ি ও বাজারের বিভিন্ন পচা ময়লা-আবর্জনা এবং জনস্বাস্থের জন্য মারাতœক ক্ষতিকর হাসপাতালের বজ্যর্ যেমন ,রক্ত-পুঁজ মিশ্রিত তুলা ও গজ ব্যান্ডেজ, ব্যবহৃত সিরিঞ্জ,সুচ,রক্তের ব্যাগ,স্যালাইননের ব্যাগ,বøাড স্যাম্পল কালেকশন টিউব ফেলে রাখা হয়েছে,যার অধিকাংশ বর্জ্য নদীতে ভাসতে দেখা যায়। খোাজ নিয়ে যানা যায় কাপাসিয়া সদর,বাজার,বাসা হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রায় পাঁচ হাজার বর্জ্যরে ড্রাম বসানো হয়েছে,যার প্রতি ড্রাম থেকে ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়। প্রতিদিন এসমস্ত বর্জ্য এনে ফেলা হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে।
কাপাসিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন রয়েছে এ কার্যক্রম।
কঠিন বর্জ্য ১ হাজার থেকে ১২শ তাপমাত্রায় পোড়ানোর নিয়ম রয়েছে সরকারিভাবে। কিন্তু নিয়ম নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে জীবাণুবাহী বর্জ্য নদীর পাড় ও যত্রতত্র ফেলায় পরিবেশ দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে
বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা না থাকায় বছরের পর বছর ধরে পরিবেশ নষ্ট হলেও সংশ্লিষ্টরা কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছেন না।২০১৯-২০ সালের বার্ষিক উন্নয়ণ কর্মসূচির(এডিপি) আওতায় উপজেলার বর্জ্য ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে জৈবসার উৎপাদন করন প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও নেই কোন অগ্রগতি।
দিনের পর দিন পার হলেও উপজেলা পরিষদ থেকে এসব বর্জ্য পরিষ্কার না করায় আবর্জনা পচে গলে নদীর পানিতে মিশছে।
এতে নদীর পানিও বিষাক্ত হয়ে উঠছে। তাই হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য।
এছাড়া বিষাক্ত আবর্জনায় নদীতে মাছও কমে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হলে তারা অনেকটাই ক্ষোভের স্বরেই অভিযোগ করে বলেন, এক সময় মানুষ এখানে গোসল করতো কিন্তু এখন আর গোসলের পরিবেশ নেই।গোসল করতে গেলে হাসপাতালের ব্যাবহৃত ইনজেকশনের সুই পায়ে বিধে।
আর এখন ময়লার সয়লাবে চলাফেরাই করা যাচ্ছে না,গোসলের ঘাট ও নেই। এখান দিয়ে মানুষকে নাকে কাপড় দিয়ে চলাচল করতে হয়, নতুবা দম বন্ধ হয়ে আসে। কাপাসিয়া বাজার নদী ঘাট একটি ঐতিহ্যবাহী নৌ ঘাট রয়েছে যেখানে তরগাওসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ চলাচল করে থাকে। আবর্জনার গন্ধে তাদেরও চলাচল করতে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করলেও তারা এ বিষয়ে কোনো নজর দিচ্ছেন না।
স্থানীয়দের দাবি, দূষণের হাত থেকে পরিবেশকে রক্ষায় দ্রæত সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। নতুবা জনস্বাস্থ্যের হুমকি প্রতিনিয়তই বাড়তে থাকবে।
নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা বলেন, আবর্জনার স্তুপকে ঘিরে থাকা মশা-মাছি বাড়ি-ঘরে প্রবেশ করে রোগবালাই ছড়াচ্ছে। আর পচা গন্ধে শিশুরা রোগাক্রান্ত হচ্ছে।
নৌযাত্রী রফিক সিকদার বলেন, কাপাসিয়া বাজার নৌকা ঘাটে এভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখায় নৌ-যাত্রীদের অনেক কষ্ট হয়। বাজারে চলতে অনেক দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
নৌঘাটের আশেপাশের ব্যাবসায়িরা জানান, আবর্জনার ভাগাড়ে জনস্বাস্থ্যের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। কারণ এই বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে মিশে যাওয়ায় নদীর মাছ বিষাক্ত হচ্ছে। সেইসঙ্গে নদীর পানিতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় জনসাধারণের গোসল করা থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের রিসার্চ অফিসার দৈনিক মানবকন্ঠকে বলেন,নদীর ওপর ও যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলায় নদীর বাস্তুসংস্থান নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
যারা আমাদের ছাড়পত্রের আওতাধীন রয়েছে তাদেরকে বর্জ্য ব্যাবস্থাপনার যে সরকারি নিয়মাবলী আছে সে নিয়ম মেনেই বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর যারা আমাদের ছাড়পত্রের বাহিরে তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাঃ ইসমত আরা বলেন, বর্জ্য শোধনাগারের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।উপজেলার নারায়ণপুর এলাকায় জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে।করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আসলে আমরা কাজ শুরু করবো।
প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এ সমস্যা থাকবে না। এছাড়াও ময়লা-আবর্জনা যাতে নদীতে না ফেলা হয় সেজন্য স্থানীয়দের সচেতন করা হচ্ছে।
Leave a Reply