২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।বুধবার

করোনাভাইরাসে ইতালি মৃত্যু উপত্যাকা: কি ভুলের মাসুল গুনছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

সোনাই ডেস্ক :: নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মোকাবেলায় ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবার আগে উদ্যোগ নিয়েও আজ একটি ভুলের মাসুল গুনছে ইতালি। গত জানুয়ারি মাসে করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকের ঘটনাগুলো ইতালি সফলভাবে মোকাবেলা করেছিল। সে সময় রোগীরাও কয়েক দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছিল। কিন্তু দেশটির মিলান থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের কডোনো শহরের করোনা সংক্রমিত এক বাসিন্দা হাসপাতালে ভর্তির পর পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর ফলে করোনাভাইরাস ওই হাসপাতালের অন্যান্য রোগী ও কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকেই পুরো ইতালিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে এবং মহামারির আকার ধারণ করেছে।

ইতালির বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে চীনের সঙ্গে ফ্লাইট যোগাযোগ স্থগিত করার আগে থেকেই চীন বা করোনা আক্রান্ত অন্য যেকোনো দেশ থেকে কেউ এলে তাদের ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রাখার এবং চিকিৎসাকর্মীদের দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।

ইস্তাম্বুলের টুয়েন্টিনাইট মেইজ ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মিকেলাঞ্জেলে গুইদা তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদুলুকে বলেছেন, করোনার প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পরই ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালিই প্রথম চীনের সঙ্গে ফ্লাইট যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে ইতালির বিমানবন্দরগুলোতেই সে সময় করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ‘থার্মাল ক্যামেরা’ বসানো হয়। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুজেপ্পে কোন্তে দাবি করেছিলেন, করোনা প্রতিরোধে ইতালির নেওয়া ব্যবস্থা পুরো ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী।

চীনের হুবেই প্রদেশের দুজন পর্যটক গত ২৩ জানুয়ারি ইতালির মিলান বিমানবন্দর দিয়ে প্রবেশের কিছুদিন পরই রোমে গিয়ে অসুস্থ হন। তাঁদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। ৬ ফেব্রুয়ারি চীনের উহান থেকে ইতালিতে ফেরেন এক ইতালীয় নাগরিক। দৃশ্যত ওই তিনজনই ইতালির প্রথম করোনা রোগী। করোনাভাইরাসে ইতালিতে প্রথম মৃত্যু হয়েছে গত ২২ ফেব্রুয়ারি।

ইতালিতে প্রথম দিকে করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগীরা সুস্থ হওয়ার পরই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। অন্যদিকে ১৪ ফেব্রুয়ারি মিলান থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের কডোনো শহরে সামান্য অসুস্থ এক রোগীকে তাঁর পারিবারিক চিকিৎসক হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে বাড়ি পাঠান। দুদিন পর শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সমস্যা নিয়ে ওই রোগী যখন আবার হাসপাতালে ভর্তি হন তখন প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর ফলে ওই রোগীর কাছ থেকে করোনাভাইরাস অন্য রোগী ও হাসপাতালের কর্মীসহ পুরো এলাকার লোকজনের মধ্যে ছড়ায়।

জানা যায়, কডোনো শহরের ওই রোগী চীনফেরত তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর ওই বন্ধুর করোনাভাইরাস ধরা পড়েনি। ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা গেছে, কডোনো শহরের ওই রোগীর ভাইরাসের উৎস জার্মানির মিউনিখ বা ফিনল্যান্ড হতে পারে। কিন্তু ১৬ হাজার বাসিন্দার কডোনো শহরে কিভাবে ওই রোগীর কাছে করোনাভাইরাস এলো তা এখনো অজানা।

তবে এতে বিস্মিত হওয়ার কারণ দেখছেন না অধ্যাপক মিকেলাঞ্জেলে গুইদা। কারণ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির কডোনো শহরের সঙ্গে বড় শহরগুলোর যোগাযোগ আছে। পড়ালেখাসহ বিভিন্ন কাজে কডোনো ও আশপাশের শহরগুলোতে যাতায়াতের জন্য লোকজন গণপরিবহন ব্যবহার করে। সেখান থেকে খুব সহজেই পুরো ইতালিতে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইতালি সরকার করোনাদুর্গত ১১টি শহরকে ‘রেডজোন’ ঘোষণার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। এমনকি বাসায় অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেও পুরো এলাকাকে ‘কোয়ারেন্টিন’ করা হয়। কিন্তু ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক একীভূত ব্যবস্থার কারণেই হঠাৎ করেই সেখানে সরবরাহ শৃঙ্খল বন্ধ করে দেওয়া কঠিন। মার্চ মাসের শুরু থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। ৪ মার্চ ইতালি সরকার দেশজুড়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। এরপর যখন সরকার বুঝতে পারে করোনাভাইরাস আর প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না, তখন পুরো দেশের ছয় কোটিরও বেশি বাসিন্দার চলাফেরা সীমিত করে তাদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের নির্দেশ দেয়।

ভৌগোলিকভাবে চীনের এত দূরে অবস্থানের পরও ইতালিতে করোনা সংক্রমণ কেন এত বেশি হলো তা নিয়ে নানা বিশ্লেষণ ও গবেষণা চলছে। চীনা পর্যটকদের উচ্চ সংখ্যাই এ ক্ষেত্রে বড় সন্দেহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর ৩১ লাখ চীনা পর্যটক ইতালি সফর করেছে।

অন্যদিকে ইতালির জনগোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবীণ। ডেমোগ্রাফিক সায়েন্স জার্নালের এক নিবন্ধে অক্সফোর্ডের গবেষকরা লিখেছেন, করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে ৬৫ বছরের বেশি বয়সের ব্যক্তিরা অপেক্ষাকৃত বেশি ঝুঁকিতে আছেন। ইতালির মোট জনসংখ্যার ২৩ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। এ ছাড়া ইতালির শিশু ও তরুণরা তাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পছন্দ করে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেনিফার বিম ডাউডের নেতৃত্বে গবেষকদল বলেছে, ইতালির তরুণরা শহর থেকে দূরে তাদের মা-বাবা ও দাদা-দাদির সঙ্গে থাকতে অভ্যস্ত। এই তরুণরাই প্রতিদিন পড়ালেখা বা বিভিন্ন কাজে মিলান বা অন্যান্য শহরে যাতায়াত করে থাকে। তাদের মাধ্যমেই প্রবীণরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন।

অধ্যাপক মিকেলাঞ্জেলে গুইদার মতে, ইতালির চিকিৎসাব্যবস্থাও করোনাভাইরাসে প্রবীণদের বেশি হারে মৃত্যুর জন্য দায়ী। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ইতালির হাসপাতালগুলোতেই রোগীদের জন্য শয্যাসংখ্যা সবচেয়ে কম। এ কারণে তাদের চিকিৎসা পেতে সমস্যা হচ্ছে।

সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।