২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।বুধবার

লালমনিরহাটে সানিয়াজান নদীতে বিলুপ্তপ্রায় মিঠা পানির কচ্ছপের দেখা মিলেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ:

করোনায় প্রকৃতি যেন নতুন রূপে ফিরে আসছে। লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার সানিয়াজান নদীতে বিলুপ্ত প্রজাতির মিঠা পানির কচ্ছপ (কাছিম) এর বাচ্চা জেলেদের জালে ধরা পড়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) বিকালে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বাউড়া ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সংলগ্ন নবী নগর গ্রামে জেলেদের জালে মিঠা পানির কচ্ছপের (কাছিম) এর বাচ্চা ধরা পড়ে। প্রায় দুই যুগ পর মিঠা পানির কচ্ছপ (কাছিস) এর দেখা পেল জেলেরা। একে প্রকৃতি নতুন রূপে ফিরে আসা বলছে। একে প্রকৃতির আর্শীবাদ হিসেবে দেখছে গ্রামবাসীগণ। পরিবেশবিদগণ বলছে প্রকৃতি প্রেমিদের জন্য সু-সংবাদ।

সানিয়াজান নদী ভারত হতে বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বাউড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের নবী নগর গ্রামের প্রবেশ করেছে। এই নদীর এখানে বাংলাদেশের ভূ-খন্ডের প্রবেশ করে। কোথাও কোথাও নদীটি সীমান্ত রেখা হিসেবে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি এক সময় খুবই গভীর ও খর স্রোতা ছিল। এখন পানি জমে তার গভীরতা ও নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। শুষ্ক মৌসুমে হাটু পানি থাকে। তবে পানি প্রবাহ কোথাও কোথাও শুকিয়ে যায় না। ক্ষীণ ধারায় প্রবাহিত হয়ে আসছে। বর্ষা মৌসুমে এই নদীতে মাছের পরিবর্তে এখন নদীর পানের মানুষ নুড়ি পাথর সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। বর্ষায় ভারতীয় পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টি পাতে নিন্ম ঞ্চলের পানি দিয়ে রুদ্ধ মূর্তি ধারণ করে। অত্যন্ত খর স্রোতা এই নদী। এই নদী বাউড়া ও সানিয়াজান ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিস্তা নদীতে মিলিত হয়েছে।

উত্তরাঞ্চলের তিস্তা নদী নাম হলেও তিস্তা মূলত একটি নদের নাম। তিস্তা নদীর শাখা নদীগুলোর সকল শাখা তিস্তা নদীতে গিয়ে তার প্রবাহিত স্রোতের মিলন ঘটিয়েছে। যাহা নদের সংজ্ঞায় পড়ে। সানিয়াজান ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আরাজী সেখ সুন্দর মৌজা হইতে শুরু করে ৮নং ওয়ার্ড নিজ সেখ সুন্দর মৌজার উপর দিয়া প্রবাহিত হয়। সানিয়াজান নদী এই দুই ইউনিয়নের প্রায় ৫০-৬০কিলোমিটার ভূ-খন্ডে প্রবাহিত হয়েছে।

সানিয়াজান নদী এই অঞ্চলের প্রকৃতিতে আর্শীবাদ হয়ে দেখা দেয়। এই নদীর এক সময় ছিল অত্যন্ত গভীর ও খর স্রোতা। নদীতে ছিল নানা প্রজাতির জলজ প্রাণি ও উদ্ভিদ। ছিল মিটা পানির মাছ। এক সময় নদীতে প্রচুর পরিমানে মিঠা পানির কচ্ছপ বা কাছিম পাওয়া যেত। যাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হত দুরা। এই দুরা ধরে স্থানীয় হাট বাজারে বিক্রি করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এই অঞ্চলের মানুষের কাছে দুরা ছিল প্রসিদ্ধ খাবার। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের পানি মাছ বা দুরা বা কাছিম বা কচ্ছপ ছিল প্রসিদ্ধ খাবার। হিন্দুদের কোন আচার অনুষ্ঠানে, পুজা-পাবনে, বিয়ে-শাদীতে দুরা বা পানি মাছ বা কচ্ছপের রান্না পাতে না থাকলে চলত না। মানুষের নিষ্ঠুর আচরণে মিঠা পানির কচ্ছপ নদী হতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। প্রায় ২০-২৫বছর ধরে কোন সানয়িাজানসহ এই অঞ্চলের কোন নদ-নদী, খাল-বিলে কচ্ছপ বা কাছিম বা দুরা বা পানি মাছ কোথাও কেউ দেখেছে বা জেলেদের জালে ধরা পড়েছে। এমন খবর পাওয়া যায়নি। মিঠা পানির কচ্ছপ বাংলাদেশে বিলুপ্ত জলজ প্রাণি গুলোর একটি।

বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) বিকালে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বাউড়া ইউনিয়নের নবী নগর গ্রামে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সংলগ্ন জেলেদের জালে মিঠা পানির কাছিম, দুরা বা পানি মাছের বাচ্চা ধরা পড়েছে। এই ঘটনাকে জেলেরা প্রকৃতির আর্শীবাদ হিসেবে ধরে নিয়েছে। তার মানে করোনাকালীন সময়ে মানুষ ঘর বন্দি থেকেছে দীর্ঘদিন। এই কারণে প্রকৃতি নতুন রুপে ফেরার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সানিয়াজান নদীতে বিলুপ্ত পানি মাছ বা মিঠা পানির কাছিম নতুন করে বাচ্চা দিয়েছে। নতুন ভাবে মিঠা পানির কাছিম প্রজনন পুনরায় প্রাকৃতিক পরিবেশ পেয়ে নদীতে শুরু হয়েছে। মিঠা পানির কাছিমের এই নতুন ভাবে ফিরে আসাকে প্রকৃতির রহস্যজনক আচরণ ও আর্শীবাদ মনে করছে পরিবেশবিদগণ। পরিবশেবিদগণ মনে করছে প্রকৃতি আমাদের সুযোগ দিয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় এই সুযোগ সভ্য সমাজের মানুষ গ্রহণ করতে হবে। প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ মানব সভ্যতাকে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে সভ্যতা বাঁচবে। এর ব্যতয় ঘটলে সভ্যতা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ কোনটি বাসযোগ্য থাকবেনা। পৃথিবীর অনেক সভ্যতা পরিবেশ রক্ষা করে উন্নয়ন না করায় ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেক নগর সভ্যতা পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম জানান, মিটা পানির কচ্ছপ বিলুপ্ত প্রাণির তালিকায় আছে। কচ্ছপ প্রায় ২৫০-৩০০বছর বেঁচে থাকে। ভারতের উজানে সানিয়াজান নদীতে হয়তো কোথায় কচ্ছপ জীবিত আছে। সেই কচ্ছপ করোনাকালীন সময়ে নির্জন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ পেয়ে প্রজনন ক্ষমতা ফিরে পেয়েছে। সেই কচ্ছপের বাচ্চা উজানি ঢলে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের সানিয়াজান নদীতে আসতে পারে। তবে এটা প্রকৃতির আর্শীরবাদ। মানুষ বা জেলেরা যদি এই ধরণের কচ্ছপের বাচ্চাগুলি জালে আটকের পর না ধরে পুনরায় অবমুক্ত করে দেয়। তাহলে হয়তো কয়েক বছরের মধ্যে সানিয়াজান নদীতে মিঠা পানির কচ্ছপ পাওয়া যাবে। মানুষের আচরণের উপর নির্ভর করছে। বিষয়টি পাটগ্রাম উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে অবগত করছি।

 

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।