৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।সোমবার

মৌলভীবাজারে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বখাটে দুই যুবকের কান্ড: হিন্দু পরিবারের ঘরের দরজায় গরুর নারীভূড়ি টাঙ্গিয়ে দিয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামে হিন্দু ধর্মালম্বী মালাকার সম্প্রদায়ের এক স্কুল পড়ু–য়া ছাত্রীর সাথে প্রেমের সাড়া না পেয়ে ওই সম্প্রদায়ের তিন পরিবারের ঘরের দরজা- জানালায় গো-মাংস, নারী ভড়ি, কাঁচা চামড়া ও হাড় টাঙ্গিয়ে রেখেছে পার্শ্ববর্তী গ্রামের বখাটে দুই যুবক। বাড়ির দরজা থেকে পুলিশ মাংস উদ্ধার করে থানায় জিডি করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় স্থানীয় সনতন ধর্মালম্বীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে মানষিক ভাবে ভেঙ্গেপড়া পরিবারকে সান্তনা দিতে রবিবার সকালে তাদের বাড়ি পরিদর্শনে যা মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদ, কমলগঞ্জ হিন্দু বোদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা। গত শুক্রবার ভোররাতে কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের প্রণয় মালাকারের বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে।

অপর দিকে তারা যাতে মানষিক ভাবে ভেঙ্গে না পড়েন তাই আশে পাশের গ্রামের মুসলমান সম্প্রদায়ের মুরব্বীরাও তাদের বাড়িতে গিয়ে সান্তনা দেন এবং ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত দুই বখাটের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান নওরোজ জানান, করিমপুর গ্রামের সাদত মিয়া (১৯) নামের এক বখাটে তার সহযোগী সজিব মিয়াকে নিয়ে গ্রামের শফিক মিয়ার বিয়ে বাড়ির একটি অনুষ্ঠান থেকে জবাই হওয়া গরুর পরিত্যক্ত মাংস, পা, হাড়, মাথা, দাঁত, চামরা ও ভড় সংগ্রহ করে শুক্রবার ভোররাতে বাসুদেবপুর গ্রামের পরমেশ্বর মালাকার (৫০), প্রণয় মালাকার (৪৫) ও বীরেন্দ্র মালাকার (৫২) এর ঘরের দরজায় ঝুঁলিয়ে রাখে। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর প্রথমে অধীর মালাকার বিষয়টি দেখতে পেয়ে বাড়ির লোকজনসহ আশপাশ এলাকার লোকদের অবহিত করেন। এসব গো-মাংসের বর্জ দেখে বাড়ির লোকজন হতবাক হয়ে উঠে। তারা গো-মাংস রাখা ওই দরজা ব্যবহার করতে না পেরে দুপুর পর্যন্ত ঘরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে বিষয়টি জানতে পেরে বেলা ১২টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দরজা থেকে গো-মাংস সরিয়ে ফেলে এবং ধোঁয়ামুছা করে ঘরের লোকজন বের হন। এদিকে এটি ধর্মীয় অনুভূতিতে মারাত্মক আঘাত বলে স্থানীয় সনাতন ধর্মালম্বীসহ ওই বাড়ির লোকজন সহজে মেনে নিতে পারছেন না।

বাসুদেবপুর গ্রামের পরমেশ্বর মালাকার বলেন, তাঁর মাতৃৃহারা দশম শ্রেণি পড়ু–য়া ভাতিজির সাথে পার্শ্ববর্তী করিমপুর গ্রামের চেরাগ মিয়ার বখাটে ছেলে সাদত মিয়া (১৯) দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাবসহ উত্ত্যক্ত করে আসছে। মেয়েটি এ ঘটনা তার কাকিমাকে বলার পর সামাজিকভাবে ছেলের অভিভাবকদের জানানো হয়। এরপর ক্ষুব্ধ হয়ে সাদত অন্য একটি ছেলেকে নিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তারা মনে করছেন। তিনি আরও বলেন, সকালে ঘটনাটি জানাজানি হলে এবং গ্রামবাসী ঘটনার কারণ খোঁজে বের করার কথা বলার পর সাদতের বড় ভাই হায়দর মিয়া তাদের বাড়িতে এসে তার ভাই এঘটনার সাথে জড়িত বলে জানায় এবং ক্ষমা চায়।

গ্রামের অধীর মালাকার, প্রহ্লাদ মালাকার ও জগদিশ মালাকার বলেন, করিমপুর গ্রামের সফিক মিয়ার বাড়িতে বিয়ে অনুষ্ঠানে জবাই হওয়া গরুর পরিত্যক্ত মাংস এনে রেখেছে। এটি আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। একইভাবে পার্শ্ববর্তী এলাকার খায়রুল ইসলামসহ স্থানীয় মুসলমানরাও এঘটনার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। মুন্সীবাজার ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান নওরোজ বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর বিধায় আমার পক্ষে সামাজিকভাবে শেষ করা সম্ভব হয়নি তবে এটি সমাধানের জন্য তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের দারস্থ হয়েছেন। কমলগঞ্জ উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন দেব ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, এটি ধর্মীয় অনুভূতিতে মারাত্মক আঘাতের ঘটনা। তারা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করে বলেন, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের নাক্কারজনব জঘন্য ঘটনা না ঘটে সেদিকে সকলের সজাগ দৃষ্টি প্রয়োজন।

মুন্সীবাজার ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালিব তরফদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনাটি আমার ইউনিয়নের জন্য একটি কলংকজনক বিষয়। আমরা সবাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। এখানে সকল ধর্মের মানুষ বহুদিন সুন্দরভাবে সহাবস্থান করে আসছে। বিষয়টি সামাজিকভাবে স্থানীয় মায় মুরব্বীরা বসে সমাধাণের জন্য চেষ্টা চলছে। সামাজিতভাবে সম্মানজনক সমাধাণ না হলে পুলিশ আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

অভিযোগ বিষয়ে পার্শ্ববর্তী করিমপুর গ্রামে গিয়ে অভিযুক্ত সাদত মিয়াকে পাওয়া যায়নি। তবে সাদতের মা নাজমা বেগম স্কুল পড়ু–য়া ছাত্রীর সাথে প্রেম কিংবা উত্ত্যক্তের প্রস্তাব নাকচ করে বলেন, আমার ছেলে না বুঝে যে ঘটনা ঘটিয়েছে এজন্য আমরা পারিবারিকভাবে শাস্তি দিয়েছি এবং পঞ্চায়েতের মায়মুরুব্বিরা বৈঠকে বসে যে শাস্তি দিবেন সেটি মেনে নেব।

কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) সুধীন চন্দ দাস বলেন, এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা বাদী না হওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। তবে কয়েকটি বিষয়কে সামনে নিয়ে পুলিশ গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছে এবং এব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক বলেন, বিষয়টি খুবই দু:খজনক। বিষয়টি নিয়ে যাতে কেহ কোন ধরণের সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পেরে সেজন্য কমলগঞ্জ থানার ওসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় তৎপর রয়েছে বলে তিনি জানান। একই সাথে তাদের সান্তনা দিতে তিনিও সরজমিনে একবার যাবেন বলে জানান।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।

অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনাঃ

খুলনার কয়রায় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৬ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খুলনা জেলার আয়োজনে ও কয়রা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় এ সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সচেতনতামূলক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম মোহসিন রেজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আলম।
এসময় আরও উপস্হিত ছিলেন, কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানি, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল, মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী, বাঙ্গালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী, আমাদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জুয়েল সহ সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ।

নিরাপদ খাদ্যের মূল প্রবন্ধ উপস্হাপন করেন খুলনা জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোঃ মোকলেছুর রহমান।

কয়রায় নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত।