মোঃ জাকির হোসেন জুড়ী (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পৃথিমপাশা নবাব বাড়িতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির মধ্যদিয়ে পবিত্র আশুরা পালিত হয়েছে।
শুক্রবার (২০ আগস্ট) বিকেল ৩ টায় শিয়া স¤প্রদায়ের উদ্যোগে তাজিয়া মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বাড়ির পাশে একটি ময়দান হয়ে ইমামবাড়ায় এসে ছুরি মাতমের মাধ্যমে শেষ হয়।
চারশত বৎসরের পূরনো ঐতিহ্যকে ধরে রেখে পৃথিমপাশার নবাব পরিবার মোতাওয়াল্লি সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট নওয়াব আলী আব্বাছ খান এর নেতৃত্বে এলাকার শিয়া সম্প্রদায়ের শতাধিক লোক সহ ছুন্নী সম্প্রদায়ের লোকদের আশুরায় ছুরি মাতম করতে দেখা যায়।
নিরাপত্তা কাজ করেছেন কুলাউড়া থানার পুলিশ প্রশাসন স্কাউটের সদস্যরা ও গ্রাম পুলিশ
করোনা ভাইরাসের কারনে মিছিলসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত আকারে করা হয়।
পবিত্র আশুরা, ১০ই মহররম। ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী একটি দিন। এদিনে ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে পৃথিবীর নির্মমতম ঘটনার অবতারণা হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রা.) মাত্র ৭২ জন সহযোগী নিয়ে ইয়াজিদের বিশাল বাহিনীর সঙ্গে জিহাদ করে শহীদ হন।
এদিকে ৬ই আগস্ট ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সব ধর্মের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আরোপিত বিধিনিষেধ বহাল থাকায় কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা নবাব বাড়িতে বিগত বছরগুলোর তুলনায় ছোট পরিসরে এ বছর দিবসটি পালন করা হচ্ছে। তাজিয়া মিছিলে বিশাল বহর, হাতিসহ মিছিল এবং শোকাবহ মাতম (শরীরে চাকুর আঘাত) করা হয়েছে সংক্ষিপ্ত পরিসরে। আশুরা উপলক্ষে নবাববাড়ি এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
করোনা ভাইরাসের কারনে মিছিলসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত আকারে করা হয়।
এদিন ইয়াজিদ বাহিনীর ঘাতকরা একে একে হত্যা করে ইমাম হোসেন (রা.)-এর স্ত্রী, পুত্র ও সব নিকটাত্মীয়কে। মুসলিম জাহানের তৎকালীন স্বঘোষিত খলিফা ইয়াজিদ দায়িত্ব তুলে দেয়ার কথা বলে কুফা নগরীতে আমন্ত্রণ জানায় হযরত ইমাম হোসেন (রা.)কে। পথে কারবালার প্রান্তরে অবরুদ্ধ করা হয় তাদের।
তৃষ্ণার্ত ইমাম হোসেন (রাঃ)কে ফোরাত নদীর পানি পর্যন্ত পান করতে দেয়া হয়নি। তার সব সঙ্গী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হওয়ার পর নির্মমভাবে সীমারের হাতে শহীদ হন মহানবীর প্রিয় দৌহিত্র। ইয়াজিদ ঘোষিত পুরস্কারের লোভে সীমার এ বর্বরোচিত হত্যাকান্ড ঘটায়। কারবালার ঘটনা ছাড়া আরও অনেক কারণে ১০ই মহররম তাৎপর্যমন্ডিত।
ইসলামের ইতিহাসে এদিনে অনেক ঘটনা ঘটেছিল। এদিনেই আল্লাহ্ তায়ালা পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং এদিনেই পৃথিবী ধ্বংস করবেন। এদিনে অনেক নবী-রাসুল জন্মগ্রহণ করেন। আদি পিতা হযরত আদম (আ.)-এর তওবা কবুল হয়েছিল এদিনে। এদিনই হযরত নূহ (আ.) ও তার সঙ্গীরা ভয়াবহ প্লাবন থেকে মুক্তি পান।
হযরত ইউনূস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান। প্রায় ১৪০০ বছর ধরে বিশ্বের সকল মুসলমান ১০ই মহররমের শোককে শক্তিতে পরিণত করতে রোজা রাখেন। দোয়া, মহররমের মর্সিয়া আর মাতমের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এদিনটি পালন করেন। এদিনটি তাই একদিকে মুসলমানদের জন্য শোকাবহ।
Leave a Reply