১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।শনিবার

একজন ছকিনার জীবন কাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

একজন ছকিনার জীবন কাহিনী

ছকিনা একজন সাধারন কারিগরের অত্যন্ত সুন্দরী,ছিপছিপে, চটপটে এবং বেশ লম্বা মেয়ে। তিন বোনের মধ্যে ছকিনা দ্বিতীয় । সে যখন স্কুলে পড়তো, তখন স্কুলে ক্রিড়াপ্রতিযোগীতায় অংশ গ্রহন করত। সবগুলি প্রথম পুরস্কার তার ছিল। গানও ভাল গাইতে পারতো। এ ভাবে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করার পর এক স্কুল মাষ্টার জামাল তাকে বিয়ে করার জন্য পাগল প্রায়। তাদের বিয়ে ও হয়ে যায় পারিবারিক সন্মতিতে। বিয়ের বছর দুই ভালই চললো। তবে ডানপিটে মেয়ে হওয়ায় তার শশুর শাশুড়ী তাকে কিছুটা অপছন্দ করতো। কিন্তু কি করা, ছেলের পছন্দ তাই ভিতরে জ্বালা থাকলেও উপরে প্রকাশ করতো না। একদিন ছকিনার মা এবং ছোট বোনের ব্যবহারে জামাল অসন্তুষ্ট হয়, যা এসে বাবা মাকে বলে, তাতেই তাদের ভিতরের শুপ্ত আগুন জ্বলে উঠতে শুরু করে। অবস্হা দিনে দিনে অবনতির দিকে যেতে লাগলো ।
কিছু দিনের মধ্যেই স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলো। যুদ্ধের একপর্যায়ে আগষ্ট মাসের এক সকালে পাকবাহিনী গ্রামে ঢুকলো। গ্রামের লোক পালাতে শুরু করলো। ছকিনার শশুর বাড়ির লোকজন ও পালাতে লাগলো। সুন্দরী মেয়েদের একটু সাজগোছের অভ্যাস বেশী থাকে, তাই তার বের হতে দেরী হলো। মেলেটারী বাড়ীতে ঢুকলো। এই পাক আর্মি পাশের এক বড় নেতার ভাগনেকে ধরতেগিয়ে অল্পের জন্য ব্যর্থ হয়, তাই সম্ভবত তার ক্রোধ বেড়ে যায়। ফেরত আসতেই ছকিনা সামনে পড়ে যায়। দুর্ভাগী ছকিনা, বদনামের ভাগী হয়ে যায়। যুদ্ধ শেষ হলো , ৭/৮ মাস পরে তার একটি ছেলে হলো। কিছু কিছু লোক সন্দেহ করতে লাগলো । এক পর্যায়ে বিষয়টি জামালের কর্নগোচর হলো। তিনি স্ত্রীকে সন্দেহ করতে থাকেন। কিন্তু ছকিনা ব্যাপারটিকে প্রথম থেকেই অস্বীকার করে আসছিলো। একদিন এই ব্যাপারটিকে নিয়েই ছকিনাদের বাড়ীতে দ্বিতীয়বার ঝামেলা হয়। এর প্রেক্ষিতে তাকে তালাক প্রদান করা হয়, কিন্তু আদালত কর্তৃক বাতিল হয়ে যায়। এর পর আর এক বার, সে বারও আদালত তালাক বাতিল করে দেন। কিন্তু জামাল দমিবার পাত্র নহেন, তিনি আবার তাকে আটঘাট বেধে তালাক প্রদান করেন। ছকিনাও
দমিবার পাত্রী নন, সে কসম করে বসেছে , ঘর করতে হলে সে জামালের ঘরই করবে, প্রয়োজনে একদিনের জন্য হলেও। দেখতে দেখতে তার ছেলে বয়স ৭/৮ বছর হয়েগেল। ভাদ্র মাসের কোন একদিন দুপুরে তাকে খাওয়ার জন্য তার মা খুজছিল কিন্তু কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না। খুজতে খুজতে জানতে পারে, ছেলে পুকুরে গোসলে নেমেছিল, তার এক বন্ধুর সাথে। তার বন্ধু বলে পুকুরে পাট ভিজানো আছে, ঐ পাটের জাগের নীচে ঢুকেছে আর বের হয় নাই। কথামত তাকে পাটের জাগের নীচে মৃত অবস্হায় পাওয়া যায়। তাতে এক রূদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয় । কিছুদিন পর তাদের কেসের রায় ঘোষনা হয়, আদালত তালাককে অবৈধ ঘোষনা করলো।
এর ভিতর জামাল আবার বিয়ে করেছে, ও ঘরে দুইটা বাচ্চা হয়েছে, তাই বাধ্য হয়ে সতিনের ঘরই তাকে বেছেনিতে হলো। ছকিনার বর্তমান বয়স প্রায় ৬৫ হতে ৭০। জামাল মাষ্টার পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। বর্তমানে ছকিনার দিন মোটামুটি কষ্টেই কাটে। একছেলে একমেয়ে। কষ্ট থাকলেও আজও সে স্বীকার করে না , যে পাকিস্তানি আর্মির দ্বারা ধর্ষিতা হয়েছিল, সে বিরংগনা। এ রকম অনেক মহিলাই নিজের লোক লজ্জার ভয়ে স্বীকার না করে চেপে আছে। তারা সরকার কর্তৃক ঘোষিত সুযোগ সুবিধার চেয়ে লোক লজ্জাটাকে বেশী দামী মনে করে।

( লেখক :- ফজলুল হক মনোয়ার) ।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।

অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনাঃ

খুলনার কয়রায় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৬ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খুলনা জেলার আয়োজনে ও কয়রা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় এ সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সচেতনতামূলক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম মোহসিন রেজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আলম।
এসময় আরও উপস্হিত ছিলেন, কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানি, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল, মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী, বাঙ্গালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী, আমাদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জুয়েল সহ সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ।

নিরাপদ খাদ্যের মূল প্রবন্ধ উপস্হাপন করেন খুলনা জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোঃ মোকলেছুর রহমান।

কয়রায় নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত।