১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।২রা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।শনিবার

আমার দেখা বরইতলার যুদ্ধ।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

ফজলুল হক মনোয়ার।

রোজার শেষদিক, ঈদের মাত্র ২/৩ দিন বাকি, কিন্তু ঈদের আমেজ নেই যুদ্ধের কারনে। মানুষ সবসময় আতংকিত থাকে। বাড়ীটি বেশ ফাকাফাকা লাগছে। কারণ গতরাতেও বাড়ীতে প্রায় ৪০/৫০ জন লোক ছিল। আমাদের বাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল, গতরাতে খাবার খেয়ে সকলেই উত্তর পাড়া চলে যায়। তারা চলে যাবার পরই মা সিগারেটের গোড়াগুলি মাটিতে পুতে রাখে, উদ্দেশ্য পাকসেনা এসে এত সিগারেটের অংশ দেখলে সন্দেহ করতে পারে, তাই এ কাজ করেন । সকালে আনুমানিক ৯/১০ টার দিকে ১২৫/১২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা গেন্জিগায়ে রাইফেল কাধে করে আমাদের বাড়ীর পাশদিয়েই রাস্তা, সেই রাস্তা দিয়ে লাইন ধরে নয়াপাড়া পার হয়ে বরইতলার দিকে যাচ্ছে। যতদূর চোখ গেল দেখলাম।মার কাছে শুনলাম রাতে প্রায় ১৫০/১৬০ ( আনুমানিক) মুক্তিযোদ্ধা আমাদের বাড়ীতে মিটিং করে, সবাই উত্তর পাড়া চলে যায়, তারাই এখন বরইতলারদিকে যাচ্ছে। আগের দিন মুক্তিযোদ্ধারা চলে যাওয়ার কারনে বাড়ীটি ফাকা হয়েগিয়েছে। শেষ রাতে (১২ নভেম্বর দিবাগত রাতে) সেহরি খেতে বসেছি, হঠাৎ শব্দ। মা বললো, দেখতো নৌকাটা মনেহয় কেই নিয়ে যাচ্ছে, আমি খাওয়া বাদদিয়ে নৌকাটা কেহ নিয়ে গেল কিনা দেখার জন্য ঘরের বাইরে আসার সাথে সাথে আমার বড়ভাই ( চাচাতো ভাই) এর সালা মন্তাজ ভাই চিৎকার দিয়ে এসে বললো, বরইতলায় মেলেটারি এসেছে, সারা গ্রামে আগুন, ও পায়খানায় গিয়েছিল, পায়খানা বাদদিয়ে ভয়ে চলে এসেছে। সবাই বাড়ীর পশ্চিম পাশে গিয়ে দেখি আগুন, আর আগুন, মাঝে মাঝে ঝাকেঝাকে গুলি। বাড়ীর মহিলাদের বাড়ীর পূর্বদিকে পাঠিয়ে দিয়ে বাড়ীতে চলে আসলাম, আর মনে করছিলাম হয়তো মুক্তিযোদ্ধারা বিপদে পড়েছে, ঘটনাও তাই। চেয়ারম্যান ইমান আলীর লোকেরা নাকি পাক সেনাদের মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্হানের কথা জানায়। যুদ্ধ চলেছে আমরা আমাদের আম বাগানের ভিতর দাড়ায়ে দেখছি, গুলি মাঝে মাঝে বাগানের সামনে জমির ভিতর পানিতে পড়ছে। আমাদের করার মত তখন কিছুই ছিল না। একটার দিকে খবর এলো আমাদের পাড়ার দিকে পাকসেনা আসছে (পূর্বদিক থেকে) আমরা তখন দক্ষিণ দিকের সড়ক পার হয়ে আড়ালে গিয়ে দাড়ালাম। পাকসেনারা তখন আমাদের বাশবাগান পার হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পিছন থেকে আক্রমন করার উদ্দেশ্যে এই ব্যবস্হা নিয়েছে। তারা সংখ্যায় ছিল ২৬ জন। আমাদের গ্রামের সন্তেশ চাচাকে ওরা ধরে নিয়ে আসে,

পথ দেখানোর জন্য। আমরা সংবাদ দেওয়ার আগেই এদের আসার সংবাদ মুক্তিযোদ্ধারা যেনে যায়, তাই তাদের কোন ক্ষতি ওরা করতে পারে নাই। ওরা চলে যাবার পর আমরা নয়াপাড়ার দিকে এগোতে থাকি, হঠাৎ আমাদের সামনে আখক্ষেতের ভিতর হতে গুলির আওয়াজ এলো, এর পর আর নাই, আমরা এগিয়ে গেলাম, দেখলাম আমাদের স্কুলের দশম শ্রেনীর জয়নাল ভাই ( যিনি একজন জাদুকর ও ছিলেন) খুব দুর্বল অবস্হায় রাইফেল হাতে একবার উঠছে আবার বসছে, আমরা এগিয়ে গেলাম, দেখলাম তার সারা শরীর পানিতে ভিজা,পানির ভিতর থেকে যুদ্ধ করতে করতে দল ছুট হয়েছে। তাতে তার রাইফেলে কাদা ঘুকেছে। আমরা ওনাকে সাধ্যমত সেবা দিলাম, উনি চলে গেলেন, যুদ্ধ চলতে থাকলো, সন্ধার আগে বরইতলা হতে পাকসেনারা খামারপাড়া আগুনদিয়ে পূর্বদিকে থানার দিকে চলেগেল, যুদ্ধ থেমে গেল। এই যুূৃদ্ধে আমার দুই সহপাঠী কুদ্দুস ও চানমিয়া সহ ১০৪ জন শহীদ হয়,শহীদ হন রবিলাল দাস, সুজাবত আলী, আব্দুস সামাদ নামের তিন জন মুক্তিযোদ্ধা , আর ৬ জন পাক আর্মি সহ এক রাজাকার নিহত হয়। ( পরে জানাযায়, অনেক পাক আর্মি নিহত হয়েছে, তাদের লাশ পাটের গাড়ীতে সিরাজগঞ্জ পাঠানো হয়েছে) । উল্লেখ্য আমার বন্ধু কুদ্দুস ও তার পিতা শামসুল হক চাচা এক সাথে শহীদ হন এবং কুদ্দুসের চাচা আফসার চাচা কানের পাশে গুলি লেগে আহত হন। ঐ দিন ইত্তেকাপে বসা মুসুল্লিরা তাদের হাত হতে বাচতে পারেন নাই। গুলির স্মৃতি চিহ্ন আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন আফসার চাচা । এই দিন আমাদের পাশের বাড়ীর ওমেদ আলী মামা স্ত্রী আখক্ষেতে একটি মেয়ে সন্তান জন্মদেন, সকলে তার নামদেয় মুক্তি, আজো সে মুক্তি নামেই পরিচিত।( এই যুদ্ধের শহীদদের স্বরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।