নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

ফেনী প্রতিনিধিঃ
অবশেষে কক্সবাজার থেকে ফেনীতে বদলী হওয়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বিতর্কিত উপ-পরিদর্শক (এসআই) লাভলী ফেরদৌসীকে সাময়িক অব্যাহতি (সাসপেন্ড) দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাকে এ শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পিবিআই ফেনী জেলার তত্ত্বাবধায়ক (এসপি) আসাদুজ্জামান বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে পুলিশ কর্মকর্তা স্বামীর সংসারের ইতি ঘটিয়ে পরকীয়া প্রেমিক কক্সবাজারের রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি কাইম্মারঘোনা এলাকার বেলাল আহমদের ছেলে সুদর্শন শাহজাহানকে বিয়ে করেন এসআই লাভলী ফেরদৌসী। প্রথম ঘরের দুই সন্তান ও পরের ঘরের এক সন্তানের সংসারের ঘানি টানতে শুরু করেন তিনি। এছাড়া দ্বিতীয় স্বামী বেকার হওয়ায় তার হাতখরচও যোগান দিতে হয় তাকে। ফলে সরকারি বেতনে সংসারের ব্যয় পুষিয়ে উঠতে না পেরে পুলিশ আইন পরিপন্থী কাজে পা বাড়ান এসআই লাভলী।জড়িয়ে পড়েন অনিয়ম আর দুর্নীতিতে। বিশেষ করে মামলা তদন্তে স্বামীকে সঙ্গে নেওয়া, স্বামীকে দিয়ে অনৈতিক সুবিধা হাতিয়ে মামলার প্রতিবেদনে নয়ছয় করা, ক্ষমতার অপপ্রয়োগ, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অপরাধের সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে যায়।
সম্প্রতি একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বাদী পক্ষের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অডিও ফাঁস হয়। যেখানে ঘুষ হিসেবে দেওয়া টাকার পরিমাণ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এসআই লাভলী ফেরদৌস ও তার স্বামী শাহজাহান। অডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে পিবিআই কর্মকর্তাদের দায়িত্ববোধ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ অবস্থায় পুলিশের এলিট ফোর্স নামে পরিচিত এ শাখার সুনামও ক্ষুণ্ন হয়। এ নিয়ে নড়েচড়ে বসে পিবিআই কর্তৃপক্ষ।
ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠন করা হয় কমিটি। তদন্ত কমিটি প্রায় এক সপ্তাহ কক্সবাজারে অবস্থান করে অভিযোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে এসআই লাভলী ফেরদৌসীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। তার বিরুদ্ধে পুলিশের শৃঙ্খলা আইনে শাস্তির সুপারিশ করা হয়। কমিটির সুপারিশে এসআই লাভলীকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি আমাদের জন্য বিব্রতকর এবং পিবিআইয়ের নামে প্রতারণার সামিল। তার অপরাধের কারণে কক্সবাজার পিবিআইয়ের সুনাম নষ্ট হয়েছে। তদন্ত কমিটির কাছে ‘স্বামীকে দিয়ে মামলা তদন্ত করানো এবং তদন্ত কাজে স্বামীকে সঙ্গে নেওয়া’র বিষয়টি লাভলী স্বীকারও করেছেন। মূলত স্বামীর লোভের কারণে লাভলী পুলিশের শৃঙ্খলা পরিপন্থী নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে স্বামীকে দিয়ে মামলা তদন্ত করানোর ঘটনায় পিবিআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিস্মিত এবং হতবাক। এটাই তাকে চরম বিপদে ফেলেছে। এসআই লাভলী ফেরদৌসীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর অধিকাংশরই সত্যতা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়।
পিবিআই ফেনী জেলার তত্ত্বাবধায়ক (এসপি) আসাদুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে পিবিআই ফেনী জেলায় সংযুক্ত হন এসআই লাভলী ফেরদৌসী। কাজে যোগ দেওয়ার পরই তাকে সাময়িক অব্যাহতির নির্দেশনা এখানে আসে। শুনেছি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply