[english_date]।[bangla_date]।[bangla_day]

কয়রায় এক নারীকে গাছে বেঁধে বিবস্ত্র করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনাঃ
খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের গিলাবাড়ীর কুচিরমোড়ে গাছে বেঁধে বিবস্ত্র করে মধ্যযূগীয় কায়দায় ২ ঘন্টা ধরে নির্যাতন করেছে ত্রিশোর্ধ এক নারীকে।
জানা গেছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জরী বিভাগের ৯ ও ১০ নং ওয়ার্ডের বারান্দায় শুয়ে ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন ত্রিশোর্ধ ঐ নারী শামীমা নাসরিন। তার সমস্ত শরীরের লাঠির আঘাতের চিহ্ন ও দুর্বৃত্তদের কামড়ের দাগ।
পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, বাবার সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে প্রতিবেশীদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এর পূর্বে একই ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানানোর পরেও কোন প্রতিকার পাননি বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
তিনি কয়রা উপজেলার গিলাবাড়ি কুচির মোড়ের জনৈক গফ্ফার গাজীর মেয়ে। বাবার বাড়ির পাশে জায়গা কিনে সেখানে বসবাস করছেন তিনি। বাবার ২ বিঘা জমির উপর এলাকার লিয়াকত গাজী, সাখাওয়াত গাজী, নুর আলম গাজীসহ ঐ পরিবারের অনেকের চোখ পড়ে। বাবা একা হওয়ায় প্রায়ই ঐ দল তার উপর অত্যাচার করে। এক বছর আগে একই ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট বিচার দেওয়া হয়। সেখানে তাদের চিকিৎসা বাবদ ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হলেও আজো জরিমানার টাকা পরিশোধ করেনি তারা।

ঈদের পরের দিন সোমবার সকালে লিয়াকত গং তার বাবার বাড়িতে উপস্থিত হয়। এসময় তারা ঘরের একটি তৈরী করা চাল সাথে করে নিয়ে আসে। বাবার বসত বাড়িতে জোরপূর্বক ঘর নির্মাণ করতে চায়। বাধা দেয় শামীমা সুলতানা ও তার ভাবী সালমা খাতুন। এসময় লিয়াকত গংএর সাথে উপস্থিত খালেক ও আসফার গাজী বলে শামীমাকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আয়। এরপর রফিকুল, সালাউদ্দিন, সাইফুল, সোয়েব বাড়ির ভেতর থেকে বের করে দড়ি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে ফেলে। শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। শরীরের কাপড় খুলে স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতে থাকে ও কামড়াতে থাকে ঐ দুর্বৃত্তরা। এসময়ে ভিকটিমের বড় ছেলে জাফর গাজী ও ছোট ছেলে আহাদ গাজী অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা দেশীয় অস্ত্র- সস্ত্রে সংঘবদ্ধ হয়ে গফ্ফার গাজীর বাড়ীঘরও ভাংচুর করে।

পরে পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে তার এক বোনাই জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন দেয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। কয়রা থানার এসআই মাসুদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দড়ি খুলে ভিকটিমকে উদ্ধার করে কয়রা উপজেলার জায়গীর মহল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। বিকেলে তার অবস্থা আরো অবনতির দিকে গেলে সোমবার বিকেলে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ভিকটিমের স্বামী আবুল কালাম সানা বলেন, ঘটনার সময়ে তিনি বাড়িতে ছিলেন না। মোবাইলে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে স্ত্রীকে উদ্ধারের জন্য পুলিশের সহায়তা নেন। তিনি বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এর আগে একই ঘটনার জন্য সালিশ করেছেন। কিন্তু তারপরে তারা আবারো আক্রমণ করেছে। তিনি বলেন, লিয়াকত গং এর আগে জামায়েত ও বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তারা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারীর সাথে হাত মিলিয়ে আমাদের ওপর অত্যাচার করছে। এ ঘটনায় তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন তিনি।

ভিকটিমের দুলাভাই রুস্তম গাজী বলেন, শ্বশুর ও শালা ওই এলাকার নিরীহ প্রকৃতির। তাদের ২ বিঘা জামি দখলের জন্য প্রায়ই তাদের ওপর আক্রমণ চালায় লিয়াকত গং। এ ঘটনার পর তারা একাধিকবার ফোনে হুমকি দিচ্ছে। তার প্রশ্ন লিয়াকত গং এর খুটির জোর কোথায় ? তিনিও এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।

মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী বলেন, জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নিজেদের গোষ্ঠির মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছে। বেশ কয়েকবার সালিশ করা হলেও সমাধান না হওয়ায় এখন আর কেউ যায় না। ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। সংবাদ পেয়ে থানায় অবহিত করেছিলাম। পুলিশ ভালো বলতে পারবে।

কয়রা থানার অফিসার ইনচার্জ এবিএম এস দোহা বিপিএম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এখনো মামলা হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

কয়রা, খুলনা প্রতিনিধি
তারিখঃ- ১৫/০৭/২২ ইং।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *