৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।২৫শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।শনিবার

শনি দেবতার কৃপায়:যে গ্রামে প্রতিটা বাড়িই দরজাহীন, ব্যাংকে নেই তালা!

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

সোনাইডেস্ক :: আমরা সব সময় চোর-ডাকাত থেকে নিজেদের মূল্যবান সম্পত্তি রক্ষা করতে ঘুমানোর আগে ঘরের দরজা লাগিয়ে থাকি। আবার কোথাও বেড়াতে গেলে দরজায় তালা বা কলাপসিবল গেট লাগিয়ে থাকি। বাড়িতে দরজা লাগানো হয় না এমন কথা শোনা যায় না।

তবে এমন একটি গ্রাম আছে যেখানে বাড়ির কোনো দরজা নেই আর ওই গ্রামে থাকা ব্যাংকটির দরজায় কোনো তালা নেই। সেখানে চোর-ডাকাতের কোনো ভয় নেই। গ্রামের নাম শনি-শিঙ্গাপুর। গ্রামটির অবস্থান ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের আহমেদনগর জেলায়।

এখানটায় নির্ভয়ে জীবন কাটান মানুষেরা। এই গ্রামের কোনো বাড়িতেই দরজা লাগানো নেই। তবুও ঘরের ভেতরে রাখা টাকা-পয়সা, গয়না, দামি জিনিসপত্র চুরি যায় না।

এ গ্রামে শুধু বাড়ি নয় এলাকার দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, সরকারি বিল্ডিং, ব্যাঙ্ক— কোথাও কোনো দরজা নেই।

এখানকার মানুষের বিশ্বাস, শনি দেবতা তাদের রক্ষা করবেন। গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, আজ পর্যন্ত কোনো দিন চুরি হয়নি এই গ্রামে। গ্রামবাসীর বিশ্বাস, কেউ যদি চুরি বা অপরাধ করার সাহস দেখায় তার জন্য তাকে পস্তাতে হবে। সারা জীবনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারাবেন তিনি।

গ্রামবাসী শনি দেবতাকে এতটাই মানেন যে, গ্রামের পাবলিক টয়লেটেও গোপনীয়তা বজায় রাখতে কোনো দরজা লাগাননি। কোনো ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য কাপড়ের পর্দা লাগানো থাকে। যাদের পর্দা দেয়া দেখে অন্যেরা বুঝতে পারেন ভেতরে কেউ রয়েছেন।

এ বিশ্বাস রাতারাতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল গ্রামবাসীর মনে। মিথ রয়েছে, ৩০০ বছর আগে গ্রামের প্রান্তে পানাস্নালা নদীতে একটি কালো পাথর ভেসে এসেছিল। এক গ্রামবাসী তাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করার পরই পাথর থেকে রক্তক্ষরণ হতে শুরু করেছিল।

সে পাথরটা কী তখনও জানতেন না গ্রামের কেউ। তবে ওই রাতেই গ্রামের প্রধানকে স্বপ্ন দিয়েছিলেন স্বয়ং শনি দেবতা। তিনি বলেছিলেন, ভেসে আসা ওই পাথর তারই মূর্তি। পাথরটাকে যেন গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয়।

স্বপ্নে তাকে আদেশ দিয়েছিলেন, এ পাথরের মূর্তি এতটাই শক্তিধর যে তাতে কোনো ছাদের তলায় রাখা যাবে না। চারপাশে কোনো দেয়াল যেন না থাকে যাতে তিনি সারা গ্রামকে বিনা বাধায় চোখের সামনে দেখতে পান। গ্রামকে সমস্তরকম বিপদ থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন।

স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর গ্রাম প্রধানের মনে এতটাই ভক্তির উদ্রেক হয় যে, গ্রামবাসীর সঙ্গে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেন দরজা বয়কট করার। নিজেদের রক্ষার ভার তারা পুরোপুরি ওই ভেসে আসা পাথরের উপরই ছেড়ে দেন।

এখনও যা কিছু তৈরি হোক না কেন তার কোনো দরজা থাকে না। ২০১১ সালে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক এ গ্রামে তাদের শাখা খোলে। এ ব্যাংক দরজা লাগিয়েছে যদিও, তবে দরজায় কোনো তালা লাগানো হয় না। এটাই ভারতের প্রথম এবং এখনও একমাত্র লকলেস ব্যাংক।

গ্রামবাসীর বিশ্বাস, যদি কোনো ব্যক্তি চুরি করেন বা কোনো অসৎ কাজ করেন তাহলে পরবর্তী সাড়ে সাত বছর ধরে তিনি এবং তার পরিবার দুর্ভাগ্য ভোগ করবেন। মামলা মোকদ্দমা ফাঁসা, পথ দুর্ঘটনা, মৃত্যু বা ব্যবসায় ক্ষতি— এরকম যে কোনো দুর্ভাগ্য তার পরিবারে নেমে আসবে।

মিথ চালু রয়েছে, একবার এক গ্রামবাসী তার ঘরের সামনে কাঠের দরজা লাগিয়েছিলেন, পরদিনই তার গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৫ সালে প্রথম পুলিশ স্টেশন তৈরি হয় এই গ্রামে। তারও কোনো দরজা নেই। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পুলিশের কাছে জমা পড়েনি। যে কয়টা অভিযোগ হয়েছে প্রতিটাই পাশের গ্রাম থেকে এসেছে। এ গ্রামগুলো পুলিশ স্টেশনের আওতায় পড়ে।

এ গ্রামে কি কোনো অপরাধ হয় না? শনি দেবতা সত্যিই তাদের রক্ষা করে চলেছে? এ বিষয়টা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এককালে গ্রামবাসীর মধ্যে এ বিশ্বাসটা এতটাই গাঢ় ছিল যে, ভয় থেকেই হয়তো কেউ অপরাধ করতেন না। কিন্তু বর্তমানে এটা একটা পর্যটনের জায়গা।

প্রচুর পর্যটক এ গ্রামে আসেন। পর্যটন শিল্পই প্রত্যন্ত এ গ্রামের অন্যতম উপার্জনের রাস্তা হয়ে উঠেছে। বিশ্বাসে আঘাত করে সেই পর্যটন শিল্পের কোনো ক্ষতি গ্রামবাসী করতে চান না। তাই এমনটা হতেই পারে যে, চুরি-ডাকাতি বা অন্যান্য অপরাধ তারা নিজেদের মধ্যেই চেপে যান। পুলিশে আর অভিযোগ জানান না।

ইউনাইটেড কমর্শিয়াল (ইউকো) ব্যাংক গ্রামের রীতি মেনে দরজা লাগায়নি ঠিকই, তবে প্রতিদিন ব্যাংক বন্ধ হওয়ার আগে সমস্ত নগদ টাকা তারা পাশের গ্রামের শাখায় স্থানান্তরিত করে দেয়।-যুগান্তর

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।