৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।বুধবার

বিদায় লগ্নে বৈশাখ দারপ্রান্তে রসনাতৃপ্তির মধু মাস

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

মোঃ সাগর হোসেন,বেনাপোল(যশোর)প্রতিনিধি: আর মাত্র কয়েক দিন পরেই বৈশাখ বিদায় নিচ্ছে। সাথে সাথে শুরু হচ্ছে মধু মাস হিসেবে খ্যাত জ্যৈষ্ঠ। সুস্বাদু ফলের অধিক সরবরাহ থাকায় সবার কাছে মাসটি মধুমাস নামেই পরিচিত। বছরজুড়ে কমবেশি ফল পাওয়া গেলেও সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় বৈশাখের শেষ সময়ে এবং এ জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরু থেকে। রঙবাহারি বিভিন্ন ফলের মৌ মৌ গন্ধে ভরিয়ে তোলে চারপাশ। ষড়ঋতুর দেশে রোদে তেতে ওঠা জ্যৈষ্ঠে তৃষ্ণার্থ মানুষ পিপাসা মেটায় বিভিন্ন প্রজাতির রসালো ফল দিয়ে।

খুব বেশিদিন স্থায়ী হয় না বাঙালির রসনাতৃপ্তির মিষ্টি ফল আম-কাঁঠালের এই মাস। মূলত গ্রীষ্ম ঋতুর খরতপ্ত বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ দুই মাসই মিষ্টি ফলের মাস। তবে তা জমে ওঠে জ্যৈষ্ঠেই। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুতে ভরে ওঠে দেশের সব ফলের দোকানগুলো। জ্যৈষ্ঠ মাস বাংলার গ্রামীণ সমাজের ঐতিহ্যেরও অনিবার্য অংশ। গ্রামের মানুষ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আম-কাঁঠালের উপহার পাঠিয়ে থাকে এই জ্যৈষ্ঠেই। শহরেও ফলের উৎসব এখন। গ্রাম কিংবা শহরের ফুটপাতে এবং ফলের দোকানগুলোয় নজর কাড়ছে এখন গ্রীষ্মের মৌসুমি ফল।

সাম্প্রতিককালে ফল বেচা-বিক্রির ধরনও পাল্টে গেছে। রিকশাভ্যানে নানা রূপ-বৈচিত্রের রসালো ফলের পসরা সাজিয়ে বিক্রেতারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরে বেড়ায় শহর বাজার গ্রাম মহল্লায় মহল্লায়। আম, লিচু, কাঁঠাল, জাম, জামরুল, গাব, লটকন, পেয়ারা, আমড়া, আতা, আনারস আরও নানারকম দেশি-বিদেশি ফল পাওয়া যায় এ সময় । তবে দাম কিন্তু চড়া। নতুন নতুন সব বাহারী ফলের চড়া দামের ভারে সাধারণ ক্রেতারা তাদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খায় রিতিমতো।

বাংলাদেশে চাষকৃত ফলের ৯০ ভাগই আম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজও নারকেল। আমের কথাই ধরা যাক। প্রায় ৬ হাজার বছর ধরে আমের চাষ শুরু হলেও বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় আঠারো শতকের দিকে। বর্তমানে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ আমের প্রায় ৩ হাজার বুনো ও চাষকৃত প্রজাতি রয়েছে। আম বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল হওয়ায় আমকে বলা হয় ফলের রাজা। রাজশাহী অঞ্চল আম উৎপাদনে অন্য জেলাগুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে।

গুণগত মানের কারণেও আমের রয়েছে বিভিন্ন নাম, যেমন- মোহনভোগ, ল্যাংড়া, ক্ষীরসাপাত, রসগোল্লা, রাজভোগ, মিশ্রিদানা, কালোপাহাড়, হাজারি, গুটুলে, বুলবুলি, রসখাজা, মনোহরা, বিশ্বনাথ, গৌরজিত, হাঁড়িভাঙা, কুয়াপাহাড়ি, সাটিয়ারপরা, সিঁদুরে, বউভুলানি ইত্যাদি। এসব আম ছাড়াও নতুন উদ্ভাবিত আ¤্রপালি, মল্লিকা, সিন্ধু, রতœা, পুপিতো, মহানন্দা, আলফানসো, চৌষা ইত্যাদি আম মধুমাসে দেশের সব জায়গাতে পাওয়া যায়।

এবার রসে ভরা জামের কথা। থোকায় থোকায় গাছের শাখায় কি সুন্দর দোল খায় কালো জাম। দেখে মন ভরে যায়। খেয়েও মন ভরে। আমাদের দেশে দুই জাতের জাম পাওয়া যায়। ক্ষুদিজাম ও মহিষে জাম।

বাংলাদেশের জাতীয় ফল হিসেবে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ কাঁঠাল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফল। বাংলাদেশ ও তার আশপাশের দেশ যেমন- আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণ ভারত, বিহার, মিয়ানমার, মালয়, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশ ছাড়া বিশ্বের আর কোনো দেশে কাঁঠালের ব্যাপক চাষ দেখা যায় না। কাঁঠালের গালা ও খাজা এ দুটি জাত ছাড়াও মাঝামাঝি বৈশিষ্ট্যের রয়েছে ‘রসখাজা’।

মধুমাসের ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম স্থান দখল করে আছে লিচু। ফলটি গন্ধ ও স্বাদের জন্য সবার কাছে খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশে বৃহত্তর রাজশাহী, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি লিচু উৎপাদন হয়। দেশের পুরনো উচ্চফলনশীল লিচু হল বোম্বাই। এছাড়া রয়েছে রাজশাহী, মাদ্রাজি, মঙ্গলবাড়িয়া, কদমী, কালীপুরী, মুজাফফরপুরী, বেদানা এবং চায়না-৩ উল্লেখযোগ্য। তবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট বারি লিচু-১, ২ ও ৩ নামে তিনটি লিচুর জাত অবমুক্ত করেছে।

মধুমাসের ছোট ও মাঝারি আকারের পেয়ারা সবার কাছেই বেশ জনপ্রিয়। পেয়ারা সাধারণত সবুজ রঙের হলেও অন্য রঙের পেয়ারাও দেখা যায়। বর্তমানে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির পেয়ার চাষ হচ্ছে আমাদের দেশে। প্রাচ্যের আপেল বলে খ্যাত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ পেয়ারা মধুমাসের শেষের দিকে বাজার দখল করে রাখে।

সাদা, লালচে সাদা দেশী জাতের জামরুল জ্যৈষ্ঠের তৃষ্ণা মেটায়। গাঢ় সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে বাতাসে দোল খাওয়া থোকায় থোকায় জামরুল দেখলেই মনটা ভরে যায়। দেশী জাতের জামরুল কিছুটা পানসে হলেও বিদেশী উন্নত জাতের জামরুল বেশ সুস্বাদু। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে বিদেশী জাতের জামরুলের চাষ হচ্ছে।

বাঙালির চিরায়ত রীতি অনুযায়ী জ্যৈষ্ঠ মাসেই মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনিকে ফল দিয়ে আদর-আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে থাকেন গ্রামে বাস করা বাবা-মায়েরা। লেখাপড়া, চাকরি কিংবা ব্যবসার কারণে যারা শহরে থাকেন তারাও গ্রামে ফেরে মধুমাসের মধুর রসে মুখকে রাঙিয়ে তুলতে। আবার অনেক সময় দেখা যায় মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনি না আসতে পারলেও তাদের জন্য ফল পাঠিয়ে দেয়া হয়।

বিভিন্ন প্রজাতির ফলের সমারোহ থাকে বলেই হয়তো জ্যৈষ্ঠ মাসে আয়োজন করা হয় জামাই ষষ্ঠীর। গ্রাম ও শহরে জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষে ষষ্ঠী তিথিতে সনাতন ধর্মের নারীরা ষষ্ঠী পূজা করেন। ঘর ও মন্দিরের বাইরে বট, করমচার ডাল পুঁতে প্রতীকী অর্থে অরণ্য তৈরি করে এ পূজা করা হয়। এজন্য জামাই ষষ্ঠীকে অরণ্য ষষ্ঠীও বলা হয়।

জ্যৈষ্ঠ মাস মধুমাস, ফলের উৎসবের মাস। এ সময় দেশী ফলের উৎপাদন অনেক বেড়ে যায়। কমবেশি সবার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে। ফল পচে অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে এ আশংকায় অনেক অসাধু বিক্রেতা ফলকে তাজা দেখাতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করে, যা মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ অপতৎপরতা বন্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি শরীর গঠনে দেশী ফল পুষ্টিমানের দিক দিয়ে বিদেশী ফলের চেয়ে অনেক ভালো। অনেকে অসচেতনতার কারণে বিদেশী ফলকে প্রাধান্য দিলেও তাদের এ ধারণা ভুল। সব শেষে এ কথাটিও মনে রাখতে হবে, আমাদের বিভিন্ন কর্মকান্ডের ফলে দেশের অনেক অপ্রচলিত ফল হারিয়ে যেতে বসেছে। দেশী জাতের ফল সংরক্ষণের মাধ্যমে দেশীয় ঐতিহ্য ধরে রাখাও আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব।

ফলের দোকানগুলেতে থরে থরে সাজানো নানা জাতের মৌসুমি ফল। জিভে জলতোলা চকচকে বর্ণিল এসব ফল পথচারীদের সহজেই দৃষ্টি কাড়ে। তবে এসব চকচকে সব ফলই কিন্তু নিরাপদ নয়। এসব ফলের বেশিরভাগই কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো। বিক্রেতারা অবশ্য তা মানতে নারাজ। এখনও ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম চোখে পড়েনি। কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো বা কেমিক্যাল মেশানো আম সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য হচ্ছে, ‘ক্যালসিয়াম কার্বাইডযুক্ত বিষাক্ত আম খেলে ডায়রিয়া, জন্ডিস, বিশেষ করে শিশুদের ক্যান্সার ও ব্লাড ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কাজেই ফল কেনার সময় কেমিক্যালের বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। চকচকে রঙের টসটসে ফল হলেই তা নিরাপদ নয় কিন্তু! এ বিষয়টি যেমন সকলের জানা উচিৎ তেমনি মানব দেহে সঠিক পুষ্টির ব্যবহার যাতে নিরাপদে পাওয়া যায় সেদিকে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের বিষয়টি আমলে নিয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ বলে মনে করেন সচেতন মহল।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।

অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনাঃ

খুলনার কয়রায় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৬ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খুলনা জেলার আয়োজনে ও কয়রা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় এ সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সচেতনতামূলক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম মোহসিন রেজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আলম।
এসময় আরও উপস্হিত ছিলেন, কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানি, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল, মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী, বাঙ্গালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী, আমাদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জুয়েল সহ সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ।

নিরাপদ খাদ্যের মূল প্রবন্ধ উপস্হাপন করেন খুলনা জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোঃ মোকলেছুর রহমান।

কয়রায় নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত।