২৫শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।রবিবার

উপকূলীয় শ্যামনগরের পদ্মপুকুর প্রসব যন্ত্রণায় কাতর মাকে দোলনায় নিয়ে হাসপাতালের পথে……।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

 

শুক্রবার (৩০ জুলাই) মধ্যরাতে প্রসব যন্ত্রণা ওঠে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর

ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের ইমরান হোসেনের স্ত্রী কেয়ামনির (২০)। দ্বীপ ইউনিয়ন হওয়ায় ইচ্ছা করলেই তাকে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব নয়। সেই সাথে মুষুলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাঘাট কাদা পানিতে টুইটম্বুর। সচরাচার মোটরসাইকেলই একমাত্র যানবাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই ইউনিয়নে। কিন্তু কাদা পানিতে তাও চলার নেই।ওদিকে, প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন মা। পরিবারের পক্ষ থেকে গ্রাম্য

চিকিৎসক ও ধাত্রী দিয়ে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করা হয় শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত। কিন্তু সব চেষ্টা যখন ব্যর্থ হয়, তখন উপায়ন্ত না পেয়ে এবং

অ্যাম্বুলেন্স কিংবা অন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় স্বামী-শ্বশুর মিলে দোলনা করে কাঁথে (ভারী জিনিস ঘাড়ে বহনযোগ্য স্থানীয়ভাবে তৈরি

সরঞ্জাম) কেয়ামনিকে নিয়ে রওনা হন খোলপেটুয়া নদীর পাতাখালি খেয়াঘাটের দিকে। সঙ্গে ছিল ধাত্রীসহ অন্যান্য স্বজনরা। খেয়াঘাটে পৌঁছে নিজেদের ট্রলারে রওনা হন নওয়াবেঁকী ঘাটের উদ্দেশ্যে। সেখানে পৌঁছে সড়ক পথে

শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছুতে যেতে হবে আরও ১২ কিলোমিটার। এরই মধ্যে দুপুর দেড়টার দিকে ট্রলারেই ফুটফুটে একটি সন্তান

প্রসব করেন কেয়ামনি।

কেয়ামনির শ্বশুর ইব্রাহিম হোসেন জানান, বর্তমানে মা ও নবজাতক দু’জনেই সুস্থ আছে। তারপরও তাদের শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া

হয়েছে।

 

শুধু কেয়ামনি নয়, এ যেন উপকূলের দৈনন্দিন চিত্র, জীবন-মৃত্যুর খেলা। একদিকে, প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত, অন্যদিকে গ্রামীণ

অবকাঠামোর অনুন্নয়ন কিংবা কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকা। ইব্রাহিম হোসেন জানান, এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও তাদের কয়েক কিলোমিটার হেঁটে

খেয়াঘাটে পৌঁছে কয়েকঘণ্টা নদী পথ পাড়ি দিয়ে স্থলভাগের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে আরও ১০-১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। চারদিকে নদীবেষ্টিত দ্বীপ হওয়ায় নেই ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা, মেলে না চিকিৎসা সেবা। মাঝে মধ্যেই নদী

পথে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার আগেই ট্রলারে সন্তান জন্ম দেন অনেকে, আবার জীবনহানির ঘটনাও ঘটে প্রসব যন্ত্রণায় কাতর মায়ের। অনেকে বাড়িতে সন্তান

জন্ম দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার সুযোগ থাকে না।

এ অবস্থায় উপকূলীয় বুড়িগোয়ালিনী এলাকায় হাসপাতাল নির্মানে জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

 

ছবি- শ্যামনগর উপকূলের পদ্মপুকুর ইউপির প্রসব যন্ত্রণায় কাতর মা

কেয়ামনিকে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে দোলনায় নিয়ে যাচ্ছেন স্বামী ও শ্বশুর।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।