[english_date]।[bangla_date]।[bangla_day]

বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের আজ ১৬০তম জন্মবার্ষিকী ।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রাকেশ সরকার, পাইকগাছা, খুলনা থেকে।

বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের ১৬০তম জন্মবার্ষিকী সোমবার (২ আগস্ট)। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের এদিনে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বাড়ুলী গ্রামে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (যিনি স্যার পিসি রায় নামে সমধিক পরিচিত) জন্মগ্রহণ করেন।বহু প্রতিভার অধিকারী ছিলেন এ প্রখ্যাত বিজ্ঞানী। তিনি ছিলেন বাঙালি রসায়নবিদ, শিক্ষক, দার্শনিক ও কবি।

 

তিনি বেঙ্গল কেমিক্যালসের প্রতিষ্ঠাতা এবং মার্কারি (ও) নাইট্রেটের আবিষ্কারক। তার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা, খুলনা ও গ্রামের বাড়ি বাড়ুলীতে শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে।গুণীজন স্মৃতি পরিষদের পক্ষ থেকে সোমবার বিকেল ৩টায় খুলনার বিএমএ মিলনায়তনে পিসি রায়ে প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও রাত সাড়ে ৮টায় অনলাইন আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

 

পিসি রায়ের বাবা হরিশ চন্দ্র ও মা ভুবনমোহিনী দেবী।তার ব‍াবা স্থানীয় প্রসিদ্ধ জমিদার ছিলেন। ছেলেবেলা থেকেই পিসি রায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তার পড়াশোনা শুরু হয় তারই পিতার প্রতিষ্ঠিত এমই স্কুলে।১৮৭২ সালে তিনি কলকাতার হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন, কিন্তু রক্ত আমাশয়ের কারণে তার পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটে।

 

বাধ্য হয়ে তিনি নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রামে থাকার সময় তার জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে। তিনি বাড়ির গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত নানা বিষয়ে প্রচুর বই পড়েন।

 

ওই সময় কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন অলেকজান্ডার পেডলার। খ্যাতিমান এ অধ্যাপকের সান্নিধ্যে এসে রসায়নের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায় তার। কলেজের পাঠ্যবই ছাড়াও বিভিন্ন পাঠাগার থেকে রসায়নের বই সংগ্রহ করে পড়তেন। নিজের চেষ্টায় বাড়িতে পরীক্ষাগার স্থাপন করে রসায়ন সম্পর্কে নানারকম পরীক্ষাও চালাতেন।

 

দেশের গর্ব এই বিজ্ঞানী ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন কলেজে (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ) ভর্তি হন। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে সেখান থেকে এফ এ পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাস করে তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজে বিএ ক্লাসে ভর্তি হন। প্রেসিডেন্সী থেকে গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যান। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বিএসসি পাস করেন।

 

তিনি গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। এখান থেকে তিনি বিএসসি এবং ডিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ওই সময় তিনি শ্রেষ্ঠ গবেষণাপত্রের জন্য ‘হোপ প্রাইজ’এ ভূষিত হন।

 

ইউরোপের নানা দেশ ঘুরে ১৮৮৮ সালে প্রফুল্ল রায় দেশে ফিরে আসেন। সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন প্রেসিডেন্সি কলেজে।

 

১৮৯৫ সালে তিনি মারকিউরাস নাইট্রাইট [HgNO2] আবিষ্কার করেন যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। সমগ্র জীবনে মোট ১২টি যৌগিক লবণ এবং পাঁচটি থায়এস্টার আবিষ্কার করেন তিনি।

 

১৯০৩ সালে চারটি গ্রামের নাম মিলে বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায় দক্ষিণ বাংলায় প্রথম আর.কে.বি.কে হরিশচন্দ্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেন। একইস্থানে স্যার পিসি রায়ের পিতা উপমহাদেশে নারী শিক্ষা উন্নয়নকল্পে ভূবনমোহিনীর নামে ১৮৫০ সালে রাড়ুলী গ্রামে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

 

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যখন বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন গোপনে অস্ত্র ক্রয়ের জন্য তিনি বিপ্লবীদের সাহায্য করেন।

 

১৯০৯ সালে নিজ জন্মভূমিতে কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ১৯১৬ সালে কলকাতায় তিনিই প্রথমবারের মত মহাত্মা গান্ধীর জনসভা আয়োজন করেছিলেন।

 

১৯৩৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতবর্ষের মহিশুর ও বেনারশ বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।

 

এছাড়া মৃত্যুর আগে তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি ও নাইট উপাধি অর্জন করেন।

 

১৯৪৪ সালে ১৬ জুন জীবনাবসান ঘটে চিরকুমার বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের। এই বিজ্ঞানী তার জীবনের অর্জিত সমস্ত সম্পত্তি মানব কল্যাণে দান করে গেছেন।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *