১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।৩রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।মঙ্গলবার

হারিছ চৌধুরী লন্ডনে নয় ঢাকায় মারা গেছেন বলে জানালেন কন্যা সামিরা!

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

এম এ রশীদ বিশেষ প্রতিনিধি শঃঃ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী লন্ডনে নয়, ঢাকায় মারা গেছেন। এটা নিশ্চিত করলেন হারিছ চৌধুরীর বিলেত প্রবাসী কন্যা সরকারি চাকরিজীবী ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী। যদিও বাবার খবর জেনে সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। কবে মারা গেলেন হারিছ চৌধুরী? দিন, তারিখও জানা গেল তার কাছ থেকে। করোনাসহ একাধিক রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৩রা সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও লোকপ্রশাসন বিভাগের মেধাবী ছাত্র ১/১১-এর পর থেকে টানা ১৪ বছর আত্মগোপনে ছিলেন। এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে সামিরা জানালেন, আব্বু আসামে কিংবা লন্ডনেও যাননি। বাংলাদেশেই আত্মগোপনে ছিলেন।
তবে কোথায় ছিলেন, কীভাবে ছিলেন তা তিনি খোলাসা করলেন না। তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, চাচা আশিক চৌধুরী বলেছেন- লন্ডনে মারা গেছেন। সামিরার সোজাসাপ্টা জবাব, কেন তিনি বলেছেন সেটা আমি বলতে পারবো না। তিনিই ভালো বলতে পারবেন। দাফন হলো কোথায়? সামিরা তখন কাঁদছেন। কয়েক সেকেন্ড পর কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললেন, ঢাকায়। কোন গোরস্থানে? দূরে, অনেক দূরে। ঢাকার বাইরে। যেখানে যেতে এক-দেড় ঘণ্টা গাড়ি চালাতে হয়। আত্মগোপনে থাকার সময় কি তার সঙ্গে কথা হতো? না, আমি কখনো কথা বলতে পারিনি। আমার ভাই ইঞ্জিনিয়ার নায়েম শাফি চৌধুরীর সঙ্গে কথা হতো। সে এখন সুইজারল্যান্ডে সিনিয়র এনার্জি অ্যানালিস্ট হিসেবে কর্মরত। শুনেছি তার সঙ্গে দু’-একবার কথা হয়েছে। চাচা আশিক চৌধুরী জানতেন বলে শুনেছি। গ্রামের বাড়িতে দাফন হলো না কেন? চাচা আশিক চৌধুরী সাহস করতে পারেননি। তিনি তখন আমাদের বলেছেন- কোনো অবস্থাতেই গ্রামে নিয়ে এসো না। বারবার তিনি নিরাপত্তার কথা বলেছেন। তখন ভয় পেয়ে যাই। বাস্তব অবস্থা এমনই। কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। উপায় কি! বন্ধু-বান্ধবদের পরামর্শে বাবার লাশ গ্রামে নেয়া থেকে বিরত থাকলাম। সামিরা তখন কান্নায় ভেঙে পড়লেন। স্বাভাবিক হতে সময় লাগলো। এসব প্রশ্ন না করলেই কি নয়! কি আর বলবো। একা একা বাবাকে গোসল করাতে নিয়ে গেলাম। কাউকে জানাইনি।

বাবার সঙ্গে কবে শেষ কথা হয়? ২৪শে আগস্ট লন্ডন থেকে ফোনে আব্বুর সঙ্গে কথা হয়। কথাবার্তা ছিল অগোছালো, অস্পষ্ট। কথা বলতে পারছিলেন না। হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছিলেন। কি বললেন? কাউকে বলো না মা, চলে এসো। তোমাকে দেখার বড় ইচ্ছে। তোমার বাবুটাকেও নিয়ে এসো। ২৬শে আগস্ট ঢাকায় পৌঁছার পর হাসপাতালে প্রথম দেখা। তখন তার স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। শুনেছি এর আগে তাকে একটি ছোটখাটো হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। কারা নিয়ে গিয়েছিল সেটা সামিরা জানেন না। যাইহোক, এক পর্যায়ে নেয়া হলো তাকে লাইফ সাপোর্টে। মাত্র ৬ দিন বেঁচে ছিলেন। প্রতিদিন হাসপাতালে যেতাম ঝুঁকি নিয়ে। করোনার ভয়ে চিকিৎসকরা নিষেধ করতেন। ২রা সেপ্টেম্বর চিকিৎসক বললেন, আর আশা নেই। লাইফ সাপোর্টে রাখতে পারেন, কিন্তু কোনো লাভ হবে না। জোর করে আরও একদিন রাখলাম। তখন আব্বুর কপালে লিখে দিলাম, ‘আল্লাহু’, যেটা দাদুর কপালেও লিখে দিয়েছিলাম। এরপর কি হলো? নিথর একটি মৃতদেহ পেলাম। রাজনীতিক, মুক্তিযোদ্ধা হারিছ চৌধুরী তখন চলে গেছেন অন্য জগতে। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। এম্বুলেন্সে করে লাশ নিয়ে ছুটে গেলাম দূরের এক ঠিকানায়। যেটা আগেই উল্লেখ করেছি। সামিরা অনেক কিছুই বললেন। তবে আমার মনে হলো, সবটা বললেন না। কিছুটা সেন্সর করেই বললেন। এক পর্যায়ে বললেন, বাবার সম্পত্তি গ্রামে রয়েছে। ঢাকায় কোনো সম্পত্তি নেই। গ্রামে স্কুল, মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। যা দেখভাল করেন আশিক চৌধুরী। সিলেটের কানাইঘাটের বুনিয়াদি পরিবারের সন্তান হারিছ চৌধুরী এসেছিলেন সরবে। চলে গেলেন নীরবে। এটাই বোধ করি নিয়তি।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।