মাগুরার জেলার প্রতিটি উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামের নারীরা বাড়তি আয়ের সন্ধান পেয়েছে। পাটের আঁশ ছাড়িয়ে বাড়তি আয় করে সোনালী স্বপ্ন দেখছেন তারা। চলতি পাট মৌসুমে পাট কাটা, জাগ দেয়া ও পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানো শুরু হয়েছে। সোনালী আঁশের সঙ্গে মিশে গেছে তাদের জিবিকা। পাট মৌসুমে বাড়তি আয়ের সন্ধানে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজে হাত লাগিয়েছেন নারীরাও।
স্বামীর আয়ের পাশাপাশি নারী হিসেবে তারাও আয় করেন। স্বামীর আয়ের টাকা ও নারীদের আয়ের টাকায় অভাব তাড়িয়েছেন সংসারের। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখছে। সংসারে এসেছে কিছুটা সমৃদ্ধি।
গত বছর বেশি উৎপাদন এবং বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় মাগুরায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার বেশি পাট চাষ করেছেন কৃষকরা। মাগুরা জেলায় পাট কাটা ও আঁশ ছাড়ানোর ধুম পড়েছে। পুরুষের মত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারীরাও পাটের আশ ছাড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জেলা প্রতিটি ইউনিয়নে ইউনিয়নে নারীরা পাট জাঁগ দেওয়ার পর আঁশ ছাড়িয়ে অথনৈতিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছে। বাড়তি আয়ে সংসারের কাজের পাশাপাশি পাট মৌসুমে পাট ছাড়ানোর কাজে যোগ দিচ্ছেন নারীরা। অনেকে আবার পাটকাঠি নেয়ার শর্তে কাজটি করে থাকেন।
জানা গেছে, প্রতি আটি পাটের আঁশ ১ টাকা দরে ছাড়াচ্ছেন। একজন নারী প্রতিদিন প্রায় ১৫০ আটি পাটের আঁশ ছাড়াতে পারেন। বছরের এ সময়টা অর্থনৈতিক ভাবে হয়ে ওঠে স্বাবলম্বী। পুরুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পরির্বতে নারীরা বাড়ির কর্তাদের অর্থনৈতিক ভাবে টাকা দিয়ে সাহায্য করে থাকে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, নারীরা রাস্তার ধারে খালের পাড়ে ও বাড়ির উঠানে বসে পাটের আঁশ ছাড়াচ্ছেন। মনে মনে তারা প্রতিযোগিতা করেন। কে কত আটি পাটের আঁশ ছাড়াতে পারেন। পাটের আঁশ ছাড়ানোর স্থানেই বাড়ি থেকে দুপুরের খাবার এনে খেতে দেখা গেছে।
মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার বাবুখালী গ্রামে পাটের আঁশ ছাড়াতে আসা রহিমা বেগম বলেন, ‘আগে বাচক (ছোট পাট) ৬ টাকা কুড়িঁ ও বড় গাছ পাট ১২ টাকা কুড়ি আঁশ ছাড়াতাম। কিন্তু এখন ১০০ আটি পাটের আঁশ ছাড়ালে ১০০ থেকে ১১০ টাকা দেয় আমাদের।
হরিনাডাঙ্গা গ্রামের গিরিন বেগম বলেন, বছরের এই সময় হাতে কিছু টাকা পয়ঁসা থাকে। ছেলে মেয়েদের খাতা, কলম ও বই কিনতে টাকা চাইলে সময় মত দিতে পারি। পরিবারকেও সাহায্য করি। নিজেও আর্থিক ভাবে হয়েছি স্বচ্ছল।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহম্মদ আব্দুর সোবহান বলেন, চলতি বছরে মহম্মদপুর উপজেলায় ১০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। উপজেলায় অন্য বছরের তুলনায় এ বছর পাটের আশানুরুপ ভালো ফলন হয়েছে। সেই সাথে পাটের আঁশ ছাড়িয়ে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছে নারীরা।
Leave a Reply