৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।বুধবার

নতুন ভ্যাট আইনের সুফল মিলছে না

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

নতুন আইনে মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) আওতা বাড়ানো হলেও এর সুফল মিলছে না। এরই মধ্যে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করতে রাজধানীর বাইরে জেলায় জেলায় অভিযান চালাচ্ছে ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগ। তারপরও কাঙ্ক্ষিত হারে ভ্যাট আদায় সম্ভব হচ্ছে না। এনবিআরের বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, সব মিলিয়ে ৯৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা ভ্যাট আদায় হয়েছে। ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছর শেষে সার্বিক ভ্যাট খাতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। নতুন আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে (ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস) ইএফডি মেশিনের ব্যবহার নিশ্চিত করা। আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুড, মিষ্টান্ন ভান্ডার, বিউটি পার্লার, তৈরি পোশাকের দোকান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরসহ ২৪ ধরনের ব্যবসায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব বাধ্যতামূলক করা। এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, দুই বছর হলো দেশে নতুন ভ্যাট আইন চালু হয়েছে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাট আদায়ের জন্য ইএফডি বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও গত দুই বছরে মাত্র তিন হাজার দোকানে এই যন্ত্র বসেছে। ২০১৯ সালে ভ্যাট আইন চালুর আগেই প্রথম দফায় এক লাখ ইএফডি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে মেশিনটি ব্যবহারের ফলে ভ্যাটের টাকার হিসাব স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনবিআরের মূল সার্ভারে চলে যাবে। তখন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান শুধু রিটার্ন জমা দিয়ে ভ্যাট পরিশোধ করবে। আইনটি চালুর প্রথম এক বছরে কোনো ইএফডি আমদানি করতে পারেনি এনবিআর। গত বছরের আগস্ট থেকে পরীক্ষামূলক ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১০০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইএফডি বসিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করা হয়। সর্বশেষ হিসাবমতে, এ পর্যন্ত মাত্র তিন হাজার প্রতিষ্ঠানে ইএফডি বসেছে। অথচ এনবিআর প্রথম বছরে, অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরেই ১০ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইএফডি বসানোর লক্ষ্য ঠিক ছিল। প্রথম বছরে ইএফডি আমদানি করা সম্ভব না হওয়ায় দ্বিতীয় বছরেও একই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এ বছরেও লক্ষ্যের ধারে-কাছে যেতে পারেনি এনবিআর। ইএফডি আনার কার্যাদেশ পাওয়ার এক বছর পর চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালের মার্চে প্রথম চালানে ১০০টি ইএফডি সরবরাহ করে। পরে বাকিগুলো আনা হয়। এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, করোনার কারণে ইএফডি বসানোর কাজ স্স্নথগতিতে চলছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন যায়যায়দিনকে বলেন, প্রথমে বলা হয়েছিল, ভ্যাট নিবন্ধন নিলেই ইএফডি দেওয়া হবে। কিন্তু নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের ১ শতাংশের মতো প্রতিষ্ঠানে ইএফডি বসানো হয়েছে। এতে সমস্যা হলো একটি বিপণিবিতানের ১০০ দোকানের মধ্যে হয়তো ১০টি দোকানে ইএফডি বসানো হয়েছে। ভ্যাটের কারণে দাম বেশি পড়ায় ক্রেতারা ইএফডি আছে, এমন দোকানে যেতে চান না। এনবিআর ভ্যাটের হিসাব বুঝে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে না পারলে ব্যবসায়ীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। নতুন ভ্যাট আইনের সুফল পেতে ভ্যাটের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করার জন্য ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০১৮ সালে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যথাসময় কাজ শেষ না হওয়ায় দুই দফা সময় বাড়ানো হয়। ৬৯০ কোটি টাকার এই প্রকল্প চলতি জুন মাসে শেষ হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ছোট ছোট শহরে অনেক প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকা না হওয়া সত্ত্বেও জোর করে ভ্যাট নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে। এতে নিবন্ধিত ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু ভ্যাটদাতার সংখ্যা বাড়েনি। ২০১২ সালে দেশে নতুন ভ্যাট আইন করা হয়। ২০১৭ সালে আইনটি চালুর কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে তা দুই বছর পেছানো হয়। অভিন্ন ১৫ শতাংশ ভ্যাটহারের পরিবর্তে একাধিক ভ্যাটহার করে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে নতুন আইন চালু হয়। আইনটি ঘষামাজা করে অনেকটা পুরনো আইনের মতোই বাস্তবায়ন করা হয়। নতুন আইনে নানামুখী ছাড়ের কারণে বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় করা যাচ্ছে না বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে। জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ যায়যায়দিনকে বলেন, নতুন ভ্যাট আইন কেন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না, তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। রাজস্ব প্রশাসনে সুশাসন নিশ্চিত এবং তদারকি কর্মকান্ড আরও জোরদার করতে হবে। তিনি বলেন, এনবিআর অনেক সংস্কার কর্মসূচি নিলেও বাস্তবায়নে তেমন কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। সেবার মান বাড়াতে হলে ভবিষ্যতে সংস্কার এজেন্ডার ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। সামগ্রিকভাবে মানুষের আয় এখনো আগের জায়গায় ফিরে যায়নি। করোনায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছে। অনেকে শহর থেকে গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে অনেকের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েছে সরকারের রাজস্ব আদায়। এ অবস্থায় ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।

অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনাঃ

খুলনার কয়রায় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৬ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খুলনা জেলার আয়োজনে ও কয়রা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় এ সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সচেতনতামূলক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম মোহসিন রেজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আলম।
এসময় আরও উপস্হিত ছিলেন, কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানি, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল, মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী, বাঙ্গালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী, আমাদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জুয়েল সহ সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ।

নিরাপদ খাদ্যের মূল প্রবন্ধ উপস্হাপন করেন খুলনা জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোঃ মোকলেছুর রহমান।

কয়রায় নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত।