১৬ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।শুক্রবার

দেবর-ভাবীর দ্বন্দ্বে অশান্ত দিঘলীয়ার সেনহাটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

খুলনা প্রতিনিধি।

 

সদ্য স্থগিত হওয়া ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত এবং বিদ্রোহী প্রার্থী দেবর ভাবীর দ্বন্দ্বের কারণে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি ইউনিয়ন ক্রমান্বয়ে অশান্ত হয়ে উঠছে। দেবর হচ্ছে ঐ ইউনিয়নের চন্দনীমহল গ্রামের প্রভাবশালী গাজী বংশের সন্তান। প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবীও একই বংশের পুত্রবধূ। দু’জনেই বসবাস করছেন চন্দনীমহল গাজী পাড়ায়। দু’ জনেই বসবাস করছেন মাত্র দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ গজের মধ্যে।

 

দেবর হচ্ছে বর্তমান সেনহাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত ও স্থগিত হওয়া ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী গাজী জিয়াউর রহমান ওরফে জিয়া গাজী। ভাবী হচ্ছে চন্দনীমহল গাজী বংশের প্রাণপুরুষ দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা, দুর্বৃত্তের হাতে নিহত প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হালিমের সহধর্মিনী ফারহানা হালিম। যিনি খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ও স্থগিত হওয়া ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী।

 

ওই ইউনিয়নের পথের বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও চন্দনীমহল ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ইয়াসিন শেখ (৪২) গত ২৫ জুলাই রাতে খুন হন । তিনি ফারহানা হালিমের সমর্থক ছিলেন। আর এ হত্যা মামলায় গাজী জিয়াউর রহমানকে আসামী করা হয়েছে।

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজী জিয়াউর রহমান ওরফে জিয়া গাজী স্টার জুট মিলের শ্রমিক ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে স্টার জুট মিলের শ্রমিক নেতৃত্ব নিয়ন্ত্রণ করে আসছে চন্দনীমহলের প্রভাবশালী গাজী বংশ। সর্বশেষ গাজী বংশের নেতৃত্বদানকারী গাজী আব্দুল হালিমের মৃত্যুর পর জিয়া গাজী লাইম লাইটে চলে আসেন এবং স্টার জুট মিল শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী রাজনীতির মেরুকরণের কারণে গত ইউপি নির্বাচনে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার আশীর্বাদ লাভ করেন। তাঁর বদৌন্নতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অপরিচিত মুখ গাজী জিয়াউর রহমান ওরফে জিয়া গাজী বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতাকে পিছনে ফেলে সেনহাটী ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন এবং চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

 

ঐ নির্বাচনে ফারহানা হালিম দলীয় মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ হয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি সন্মান দেখিয়ে মনোনীত প্রার্থী দেবর জিয়া গাজীকে সমর্থন দেন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর জিয়া গাজী নিজ বংশ এবং এলাকার সর্বত্র প্রভাব বিস্তার শুরু করে। এ সময় তিনি তাঁর ভাবীকে ভবিষ্যতে ইউপি নির্বাচনের শক্তিশালী প্রার্থী এবং প্রতিপক্ষ মনে করে তাঁর অনুগত সমর্থকদের নানাভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেন।

 

এদিকে, ৫ বছর চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিতর্কিত অনেক কর্মকান্ডের অভিযোগ ওঠে। এমনকি তার বিরুদ্ধে সরকারি চাল আত্নসাতের অভিযোগও ওঠে। এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগের মামলা তাঁর বিরুদ্ধে দুদকে চলমান আছে।

 

সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই রাতে পথেরবাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও চন্দনীমহল ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ইয়াসিন শেখকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার পরিকল্পায় তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। ইতিমধ্যে গত ২৭ জুলাই দায়ের করা এ হত্যা মামলায় তাকে আসামী করা হয়েছে।

 

নিজ বংশ এবং এলাকায় কিছুটা প্রভাব বিস্তারে সফল হলেও দলে তিনি কোন ভালো অবস্থান বা পদে ছিলেন না। দলে তার অবস্থান ছিলো ওয়ার্ড কমিটির একজন কার্যকরী সদস্য হিসেবে। স্থগিত হওয়া ইউপি নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে প্রার্থী হওয়ার গত ২১ মার্চ চন্দনীমহল সাংগঠনিক ইউনিয়ন শাখার এক বিশেষ বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে তাকে এবং তার দুই সহযোগী ঐ সাংগঠনিক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিল্লাল মল্লিক, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মাহামুদুল হাসানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য গত দুইদিন ধরে তাঁর ব্যবহৃত ০১৭১৭২৮৪৬৬২ মোবাইল নং এ কল করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

 

এদিকে ফারহানা হালিমের স্বামী প্রয়াত খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রাক্তন চেয়ারম্যান গাজী আঃ হালিমের মৃত্যুর পর তার জনপ্রিয়তাকে পূঁজি করে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হন। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য এবং জেলা পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। এছাড়া স্বামী গাজী আঃ হালিম সেনহাটী ইউপির চেয়ারম্যান থাকাকালীন ২০১১ সালের ২৮ অক্টোবর দুর্বৃত্তের হাতে গুলিবিদ্ধ এবং ২ নভেম্বর সন্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত হন। তার মৃত্যুর পর শূন্য হওয়া সেনহাটী ইউপির উপ-নির্বাচনে তিনি এ ইউনিয়নের বিএনপির প্রার্থী ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান আঃ রকিব মল্লিককে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তিনি নানা চড়াই উৎরাই অতিক্রম করে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। স্থগিত হওয়া ইউপি নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন। ফারহানা হালিম দলীয় মনোনয়ন পেলেও জিয়া গাজী বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বহাল থাকেন। ইতিপূর্বে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বাঁধা দু’জনের পরোক্ষ বিরোধ এরপর থেকে প্রকাশ্য রুপ লাভ করে।

 

গত ১৫ এপ্রিল রাতে দু’গ্রুপের সমর্থকরা বড় ধরণের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঐ সংর্ষের ঘটনায় উত্তর চন্দনীহল (বোগদিয়া) এবং চন্দনীমহল গ্রামের জিয়া গাজীর সমর্থক বেশ কয়েকজন মারাত্মক আহত হন। অভিযোগ রয়েছে এ ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবেই গত ২৫ জুলাই রাতে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয় হয় ফারহানা হালিমের সমর্থক ইয়াসিন শেখকে।

 

দু’পক্ষের বিরোধ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আলোর মিছিলের উপদেষ্টা, প্রাক্তন জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ও প্রাক্তন সেনহাটী ইউপি সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখ আব্দুস সালামের কাছে। তিনি বলেন, “দেবর ভাবীর ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণে এলাকার শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেক নিরীহ মানুষ হামলা, মামলা এবং পুলিশী হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন। দু’জনের এ বিরোধকে কাজে লাগিয়ে তৃতীয় একটি পক্ষ তাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল নিয়েছে। তাদের দু’জনের বিরোধ দ্রুত মেটানো সম্ভব না হলে ভবিষ্যতে এলাকায় বড় ক্ষয়ক্ষতির আশংকা প্রকাশ করেন”।

 

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় অফিসার ইনচার্জ (দিঘলিয়া) মোঃ আহসান উল্লাহ চৌধুরীর সংগে। তিনি বলেন, ‘‘এলাকার আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যিনিই ঘটাক তিনি যে কোন দলেরই হোক, যত বড়ই শক্তিশালী হোক, আমরা কাউকে ছাড় দিবো না। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মহাদয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে”।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।