নুরুল বশর (মহেশখালী) কক্সবাজার,
ধুসর শেওলা জমে আছে দালানের এর চারপাশে। কোথাও লজ্জাবতি গাছ আবার কোথাও বা জন্মেছে সাইকাস।আবার কেউ লিখেছেন কাউকে উদ্দেশ্য করে চিরকুট। দীর্ঘ ২৩বছর ধরে অবহেলায় পড়ে থাকা মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের বর্তমান পরিষদের পশ্চিমে খাদ্য গুদামের চিত্র এটি।
মহেশখালী উপজেলার দু’টির একটি খাদ্য গুদাম পৌরসভার রাখাইন পাড়ায়,অন্যটি উপজেলার মধ্যবস্হিত ইউনিয়ন কালারমারছড়ায়।পৌরসভা,কুতুবজুম,বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী ইউনিয়নে যথাযথভাবে সেবা দেওয়া গেলেও ভোগান্তিতে রয়েছে মাতারবাড়ি,ধলঘাটা,শাপলাপুর,হোয়ানক ও কালারমারছড়ার স্হানীয় জনগণ। উত্তরপ্রান্ত থেকে প্রায় ১৭-১৮ কি.মি দূরে অবস্হিত খাদ্য গুদাম থেকে খাদ্য বন্টনে অনেকটা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে দরিদ্র মানুষের। তাছাড়া ধলঘাটা,মাতারবাড়ি দ্বীপাঞ্চল হওয়ায় যথাযথ সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
কালারমারছড়ার বিশালাকৃতির খাদ্য গুদামটি প্রায় ১একর ৪২শতক জায়গার উপরে গড়ে উঠেছিল। ১৯৯৮ সালের পর থেকে কোন কারণ ছাড়ায় এ খাদ্য গুদামের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়! অন্যদিকে দীর্ঘদিন থেকে অরক্ষিত পড়ে থাকায় খাদ্যগুদামের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক “সারাদেশে পুরাতন খাদ্য গুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদির মেরামত এবং নতুন অবকাঠামো নির্মাণ” শীর্ষক প্রকল্পটি ৩১৬৮৭.৫৭ লক্ষ টাকা (সম্পূর্ণ জিওবি) ব্যয়ে জুলাই ২০১৮ হতে জুন ২০২১ মেয়াদে বাস্তবায়নাধীন ছিল। প্রকল্পের আওতায় খাদ্য অধিদপ্তরের স্থাপনাসমূহে ৫৫০টি পুরাতন খাদ্য গুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদির মেরামত এবং অবকাঠামো নির্মাণ করার জন্যও বলা হয়েছিল।এখন এ অর্থবছরে কতটুকু কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক !
এই বিষয়ে উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর কর্মকর্তা তপন কুমারের জানান, দায়িত্বরত থাকাকালীন তিনি স্হানীয় চেয়ারম্যানের সাথে মালামাল মজুদ বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। তবে বদলির কারণে তা আর সম্ভব হয়ে উঠেনি।
এ বিষয়ে কালারমারছড়া খাদ্যগুদামের দায়িত্বরত নৈশ প্রহরী আবুল কালাম জানান, কোহেলীয়া নদী ভারাট হয়ে গভীরতা কমে যাওয়া বড় বড় মালবাহী নৌকা ঘাটে ভিড়তে পারেনা। এতে মালবাহী নৌকা চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। তাছাড়া খাদ্য গুদামস্হ স্হল সড়কটি টেকসই না হওয়ায় মালামাল মজুদকরণ বন্ধ হয়ে যায়।তবে স্হানীয়দের দাবী, বর্তমানে খাদ্য গুদাম সংলগ্ন এডিবি নির্মিতব্য সড়কটি টেকসই হওয়ায় মালামাল পরিবহন করা খুবই সহজ। উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর যদি এই বিষয়টি আমলে নেয় তাহলে দুঃখ দূর্দশা ও ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবে এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।
কালারমারছড়া ইউনিয়নের একজন ডিলারের সাথে কথা বললে হতাশাব্যঞ্জকভাবে জানান, মালামাল নিয়ে আসতে পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় তারা লাভের অংশটুকুও পাচ্ছে না। এছাড়াও দূরবর্তী স্থান থেকে পরিবহনযোগে মাল আনতে ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের।
কালারমারছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আমিন টিপু বলেন, তখনকার সময়ে নির্মাণ করা এই খাদ্যগুদামটি এখন ভূতুড়ে ঘর হিসেবেই পড়ে আছে। বর্তমানে এরকম একটি গুদাম নির্মাণ করতে হলে কয়েক কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। আমার মনে হয়, এই দালানটি কিছুটা মেরামত করলেই পুনরায় চালু করা যেতে পারে। এতে করে মহেশখালীর উত্তর প্রান্তের এলাকার হাজারো মানুষ এর সেবা নিতে পারবে।
এ ব্যাপারে কালারমারছড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ জানান, মহেশখালী উপজেলার অধীনে এই খাদ্যগুদামটি নির্মাণ করা হয়েছিল।পরে কোন কারণ ছাড়ায় এ গুদামঘরের আর কোন ব্যবহার করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইলে পুনঃসংস্কার করে এটি চালু করা যেতে পারে। আর যে কারণগুলো দেখাচ্ছে কর্তৃপক্ষ তা সরেজমিনে এসে দেখে বিবেচনা করতে পারবে গুদামটি ব্যবহারের উপযুক্ত কিনা! এ গুদামটি চালু করলে সরকারের অনেকটা ব্যয় কমে আসবে। কারণ যে খাদ্যগুদাম থেকে মালামাল আনা হয় তা কালারমারছড়া খাদ্যগুদাম থেকে ১৮-১৮ কিমি দূরে।
Leave a Reply