৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।শুক্রবার

চুনারুঘাটে নালুয়া চা বাগানে মহাবিপন্ন প্রজাতির বন রুই উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

সোনাই নিউজ: হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার নালুয়া চা বাগান মহাবিপন্ন প্রজাতির বনরুই পাওয়া গেছে।

৪ মার্চ বুধবার সকাল ৮টায় ওই বাগানের গোলটিলা এলাকার রিক্সাচালক উসমান আলী ঘুম থেকে উঠে ঘর থেকে বের হয়ে যখন হাত মুখ ধোয়ার জন্য নলকূপে যান তখন পাশেই থাকা কুয়ার মাঝে নড়াচড়ার শব্দ শোনেন। কিছুটা ভয় আর কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে যান কুয়ার কাছে। গিয়ে দেখেন একটি অপরিচিত প্রাণী কুয়ার ভেতর নড়াচড়া করছে। এরপর সবাইকে নিয়ে খুন্তি দিয়ে মাটি খুড়ে কুয়ার ভেতর থেকে উপরে নিয়ে আসেন প্রাণীটি। এই প্রাণীটি হলো মহাবিপন্ন প্রাণী বনরুই।

কিছু ভণ্ড কবিরাজ বনরুই মেরে দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে তথাকথিত ওষুধ তৈরির নাম করে ব্যবসা ফাঁদছে। যদিও এসব ওষুধের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল।

পরে সেটির কোমরে রশি বেঁধে বাড়ীর আঙ্গিনায় আটকে রাখেন তিনি। মুহূর্তেই খবরটি রটে গেলে তার বাড়ীতে শত শত লোকজন এসে ভিড় জমায় প্রাণীটিকে এক নজর দেখার জন্য। তবে শিশুদের মাঝে ছিল ব্যাপক উৎসাহ।

রিক্সা চালক উসমান আলী বলেন ‘আমি কুয়ার মাঝে শব্দ ও নড়াচড়া দেখে প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু পরে দেখি এটি আক্রমণ না করে মাথা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। সবাইকে নিয়ে মাটি খুঁড়ে এটিকে ওপরে নিয়ে আসি। এটি দেখতে খুবই সুন্দর। লোকজন দেখে অনেক আনন্দ পেয়েছে। এর ওজন ৫ কেজি এবং ৪ ফুট লম্বা হবে।’

নালুয়া চা বাগানের শ্রমিক নেতা ও আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের মেম্বার নটবর রুদ্র পাল বলেন ‘এই প্রাণী আমার জীবনেও দেখিনি। আমি জানার পর সবাইকে বলেছি যাতে কেউ এটিকে আঘাত না করে। এটিকে সুস্থ অবস্থায় বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

এদিকে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে নালুয়া চা বাগানে উপস্থিত হয়ে বনরুইটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পরে সেটিকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু এমপি, হবিগঞ্জ বন বিভাগের ডেপুটি ফরেস্টার রেহান মাহমুদ, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ অফিসার আব্দুল মোতালেব ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান কো-ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সভাপতি আবুল কালাম।

হবিগঞ্জ বন বিভাগের ডেপুটি ফরেস্টার রেহান মাহমুদ জানান, সুস্থ অবস্থায় বনরুইটিকে উদ্ধার করে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের গভীর জঙ্গলে অবমুক্ত করা হয়েছে। মুহূর্তের মাঝেই এটি গভীর জঙ্গলে হারিয়ে যায়। প্রাণীটি বিপন্ন। এক সময় চুনারুঘাট উপজেলার পাহাড় ও বনাঞ্চলে এটি প্রচুর পরিমাণ দেখা যেত।

হবিগঞ্জ সরকারী বৃন্দাবন কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড, সুভাষ চন্দ্র দেব জানান, হবিগঞ্জের বনাঞ্চলে এই প্রাণিটির আবাস ছিল। বিশেষ করে ছন ও ঝোপ-জঙ্গলে এগুলো দেখা যেত। এটি প্রাণিকূলে একমাত্র আঁশযুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণি। সারা শরীরে মাছের মতো আঁশের ফাঁকে ফাঁকে থাকে শক্ত লোম। স্বভাবেও অতি অদ্ভুত। কুঁজো হয়ে দুলতে দুলতে চলে, লম্বা লেজ গাছের ডালে জড়িয়ে ঝুলেও থাকতে পারে। বিপদ বুঝলে সামনের দুই পায়ের ভেতর মাথা ঢুকিয়ে লেজ দিয়ে পুরো দেহ ঢেকে বলের মতো করে নেয়। সামনের পা দিয়ে কোনো কিছু আঁকড়ে ধরতে পারলে শক্তিশালী প্রাণিও সহজে এদের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। আর এভাবেই এ নিরীহ প্রাণিটি শত্রুর হাত থেকে আত্মরক্ষা করে থাকে। সারাদিন গর্তে ঘুমিয়ে কাটায় আর রাতে খাবারের খোঁজে বের হয়ে মাটি শুঁকতে থাকে। পিঁপড়ার বাসা বা উঁইপোকার ঢিবির খোঁজ পেলে শক্তিশালী নখের থাবা দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে ফেলে। এরা মাটির নিচে প্রায় ছয় মিটার গর্ত করে বাসা বাঁধে। শীতকাল প্রজনন মৌসুম। সাধারণত একটি বা দুইটি বাচ্চা দেয়।

তিনি জানান, বিশ্বে ৮ প্রজাতির বনরুইয়ের দেখা মেলে। তারমধ্যে বাংলাদেশে মালয়, ভারতীয় ও চায়না বনরুই ছিল। বর্তমানে চায়না বনরুই ছাড়া অন্য প্রজাতির বনরুইয়ের দেখা মিলছে না। কেননা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণী হচ্ছে বনরুই।

তিনি আরও বলেন, বনরুইয়ের ইংরেজি নাম ‘Pangolin’ চায়না বনরুইয়ের বৈজ্ঞানিক নাম ‘Manis pentadactyla’। দাঁত নেই বলে আগে দন্তহীন স্তন্যপায়ী প্রাণির দলে অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে বর্তমানে এদের আলাদা একটি দল ফোলিডাটার (Pholidata) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার সদস্য একমাত্র বনরুই। হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট ও চট্টগ্রামে এক সময় প্রচুর পরিমাণ বনরুই থাকলেও এখন তেমন একটা দেখা মিলে না। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ পরিষদ (আইইউসিএন) এই প্রাণীকে মহাবিপন্ন প্রাণী হিসাবে চিহ্ণিত করেছে।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।

অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনাঃ

খুলনার কয়রায় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৬ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খুলনা জেলার আয়োজনে ও কয়রা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় এ সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সচেতনতামূলক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম মোহসিন রেজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আলম।
এসময় আরও উপস্হিত ছিলেন, কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানি, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল, মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী, বাঙ্গালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী, আমাদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জুয়েল সহ সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ।

নিরাপদ খাদ্যের মূল প্রবন্ধ উপস্হাপন করেন খুলনা জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোঃ মোকলেছুর রহমান।

কয়রায় নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত।