৩রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।২০শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।সোমবার

খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিলঃ বিদেশী মিডিয়ায় মন্তব্য।।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

জসিম মাহমুদ/রফিক চৌধুরীঃ—————-সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। দুইটি আলাদা মামলায় দুই বছরের অধিক সাজা পাওয়ার কারণ দেখিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে কার্যত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়লো।

কিন্তু মনোনয়নপত্র বাতিল করার মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করাকে কিভাবে দেখছে আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো। ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া নিয়ে বিদেশি মিডিয়াগুলোয় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মধ্যে বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি গভীরভাবে বিভক্ত। আগামী ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে খালেদা জিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না বলে ঘোষণা করেছে সরকার। কারণ, দুর্নীতির দুটি মামলায় তিনি বর্তমানে কারাবন্দী। আল জাজিরা, লন্ডনের ডেইলি মেইল, বার্তা সংস্থা পিটিআই, সাউথ ক্যারোলাইনার দ্য স্টেট পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে এসব কথা বলা হয়েছে।
পিটিআই লিখেছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। কিন্তু দুটি দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় নির্বাচন কমিশন রোববার তার প্রার্থিতা বাতিল করে দেয়।

এর চারদিন আগে হাইকোর্ট রুল দেয়, কোন ব্যক্তিকে যদি দুই বছরের বেশি জেল দেয়া হয় তাহলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না।

এতে ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে খালেদা জিয়ার সুযোগ কার্যত শেষ হয়ে গেছে। তার স্বামী, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত দাতব্য সংস্থা নিয়ে দুটি দুর্নীতির অভিযোগে বর্তমানে জেলে রয়েছেন ৭৩ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

খালেদা জিয়া তিনটি সংসদীয় আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে দুটি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বগুড়া থেকে এবং অন্যটি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ফেনীর একটি আসন থেকে। কিন্তু দুটি জেলার রিটার্নিং অফিসাররা তার শাস্তিভোগের কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছেন।

নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, একজন প্রার্থীকে যদি অযোগ্য ঘোষণা করা হয় তাহলে তিনি নির্বাচন কমিশনের ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে পারেন। তিনি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারেন অথবা কমিশনের সিদ্ধান্তকে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। খালেদা জিয়া ছাড়াও উচ্চপর্যায়ের ১৫ জন প্রার্থীকেও বিভিন্ন অজুহাতে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট্রের দুর্নীতির মামলায় ঢাকার বিশেষ আদালত খালেদা জিয়াকে অভিযুক্ত করে জেল দেয়। তারপর ৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। ওই মামলায় তাকে ৫ বছরের জেল দেয়া হয়। ৩০শে অক্টোবর হাইকোর্ট ওই শাস্তিকে দ্বিগুন করে ১০ বছর করে। ২৯শে অক্টোবর একটি বিচারিক আদালত জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে অভিযুক্ত করে ৭ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে।

স্বামী জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর ১৯৮৩ সালের মার্চে বিএনপির ভাইস চেয়ারপারসন করা হয় খালেদা জিয়াকে। ১৯৮৪ সালের ১০ই মে তাকে বানানো হয় দলের চেয়ারপারসন। এখন পর্যন্ত তিনি সেই পদে আছেন। তার ৩৫ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে অনেকবার জেল খেটেছেন। ২০০৭-০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দুর্নীতির অভিযোগে তিনি এক বছরের মতো কারাগারে ছিলেন। ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি এবার প্রসিদ্ধ আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

আল জাজিরা লিখেছে, এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রোববার ঢাকায় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি অভিযুক্ত হন এবং দুই বছর বা তারও বেশি শাস্তি হিসেবে তাকে জেল দেয়া হয় তাহলে তিনি বৈধ প্রার্থী হতে পারেন না। খালেদা জিয়া ৩ টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও তার প্রার্থিতা বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। এমন ঘোষণাকে তার দল প্রত্যাখ্যান করেছে রোববার। তারা বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বার্তা সংস্থা এপির রিপোর্ট উদ্ধৃত করে লন্ডনের অনলাইন ডেইলি মেইল লিখেছে, মনোনয়নপত্র বাতিলের এমন সিদ্ধান্ত অশুভ উদ্দেশ্যমূলক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভী। তার ভাষায়, মনোনয়নপত্র বাতিল হলো সরকারের নীলনকশার অংশ। এর মধ্য দিয়ে তারা খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবার নির্বাচন। তিনি টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরতে চান। তবে বিরোধীরা অভিযোগ করে বলেছেন, তিনি ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠছেন এবং বিরোধীদের শক্তহাতে দমন করছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, অভিযুক্ত হওয়ার কারণে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা তা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রয়েছে আরো ৩০টি অভিযোগ। এর মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি থেকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা পর্যন্ত। তবে তার দল দাবি করে, এগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অবশ্য বিরোধীদের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।