আজিজুর রহমান,কেশবপুর (যশোর)প্রতিনিধি:
করোনাকালে প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কেশবপুরে বেড়েছে বাল্য বিয়ে। অনেক দরিদ্র পরিবারের ছাত্রীরা বাল্য বিয়ের শিকার হচ্ছেন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ছাত্রীদের বাল্য বিয়ে বন্ধ করে ওইসব অভিভাবকদের কাছ থেকে মুচলেকা নিলেও থামানো যাচ্ছে না।
সোমবার দুপুরেও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে কেশবপুরে এক স্কুল ছাত্রীর বাল্য বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। এমনকি সম্প্রতি এক ব্যক্তি তার ভাগ্নিকে বাল্য বিয়ে পড়ানোর বিষয়ে এক কাজীর কাছে জানতে চাইলে তিনি ওই ব্যক্তিকে মারধর করেছেন।ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বরণডালী গ্রামের এক ব্যক্তি তার অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের (১৫) বাল্য বিয়ের আয়োজন করে। বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইরুফা সুলতানা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে হাজির হন। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া মেয়ের বাবার কাছ থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত মেয়েকে বিয়ে দিবে না মর্মে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ১৩ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আরাফাত হোসেন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে উপজেলার হাড়িয়াঘোপ এলাকার এক ছাত্রীর বাল্য বিয়ে বন্ধ করে তার বাবার কাছ থেকে মুচলেকা নেন। একই সাথে বাল্যবিয়ে করতে আসার দায়ে বরকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।এদিকে, গত ২৭ জুলাই অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ে পড়ানোর কথা জিজ্ঞাসা করায় তালেব গাজী নামে এক কাজী ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়ের মামা উপজেলার বেতিখোলা গ্রামের আব্দুল হামিদকে মারপিট করে। এ ঘটনায় তিনি কেশবপুর থানা ও নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ৭২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫২টি মাদ্রাসা ও ১১টি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৮ হাজার ২৮৮ জন, মাদ্রাসায় ৭ হাজার ৫৮৭ জন ও কলেজে ৪ হাজার ৭৪৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে করোনার কারণে ২০২০ সালের বছরের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশের মতো এ উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।কেশবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি এবং কানাইডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ব্যাপকহারে বাল্য বিয়ে বেড়েছে। এখন যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়, অনেক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে ছাত্রী পাওয়া যাবে না। আমার স্কুলের কয়েকজন ছাত্রীও বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। যেটা পরে জানতে পেরেছি।’ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে বাল্য বিয়ের প্রবণতা কমে যাবে।
Leave a Reply