১৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।বৃহস্পতিবার

কুড়িগ্রামে বাচ্চু মিয়ার অভিমানেই কেটে গেল ২৭ বছর।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

 

 

নয়ন দাস,কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ

 

গল্প কাহিনীর মত ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়েছে লোকজনের মুখে মুখে। চারপাশের মানুষসহ দূর-দূরান্তের মানুষও আগ্রহ ভরে আসছেন তাকে দেখতে। ঘটনাটি কুড়িগ্রাম শহরের পলাশবাড়ী এলাকার। এই গ্রামের ৩৬ বছর বয়সের টগবগে যুবক বাচ্চু মিয়া অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন আড়াই যুগ আগে। তাকে ফিরে পাওয়া গেল দীর্ঘ ২৭ বছর পর। অসুস্থ বাচ্চু মিয়া এখন আছেন ভাতিজা শফিকুলের কাছে।

 

জানা গেছে, কুড়িগ্রাম পৌরসভার পলাশবাড়ী গ্রামের মৃত কান্দুরাম মামুদের পুত্র জহর উদ্দিন বাচ্চু (৬৫) ১৯৯১ সালে পার্শ্ববর্তী কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের আগমনী গ্রামের জাহেদা বেগম (৫০)কে বিয়ে করেন। ১৯৯৪ সালে তাদের ঘরে পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। ৬ মাস বয়সী পুত্র ও স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যান বাচ্চু মিয়া। সেখানে স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য হওয়ায় রাগ করে বেরিয়ে পড়েন। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর করেও তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। ফলে তাকে মৃত ভেবে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন পরিবারের লোকজন।

 

বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী জাহেদা বেগম জানান, লোকটার বুদ্ধিসুদ্ধি কম ছিল। কিন্তু রাগলে হিতাহিত জ্ঞান থাকতো না। সামান্যতেই তুলকালাম কাণ্ড বাঁধিয়ে ফেলত। এর আগেও একবার নিরুদ্দেশ হয়ে কিছুদিন পর আবার ফিরে আসে। কিন্তু দ্বিতীয়বার চলে যাওয়ার পর আর কোনো যোগাযোগ করেনি। পরে আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না পেয়ে ৬ মাসের বাচ্চাকে নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে আসি। সেখানেই কষ্টেসৃষ্টে ছেলেকে মানুষ করি।

 

বাচ্চু মিয়ার ভাতিজা বাস ড্রাইভার শফিকুল জানান, আমার চাচা ১৯৯৪ সালে শ্বশুরবাড়ি থেকে অভিমান করে বাসে উঠে চলে যান যশোরের অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত গোবিন্দপুর গ্রামে। সেখানেই চিরকুমার হিসেবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে কেটেছে তার জীবনের দীর্ঘ ২৭টি বছর। প্রথমে তিনি সুন্দলী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত মুকুন্দ মল্লিকের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এখানে কেটে যায় বেশ কয়েকটি বছর। কেউ তার ঠিকানা না জানলেও তাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নেন। ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিকাশ মল্লিক জীবন-জীবিকার জন্য তাকে একটি ভ্যানগাড়ি কিনে দিয়েছিলেন। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের দোতলায় একটি কক্ষে তার থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। সেখানেই কেটেছে তার সুদীর্ঘ ২০টি বছর। চাকরি না করেও পরিষদের আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা­ থেকে শুরু করে সার্বিক দেখা-শোনার কাজ করতেন তিনি। এর পাশাপাশি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সৎকার, বিয়েসহ যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে ছিল তার অবাধ পদচারণা। আচার-আচরণে তিনি পরিষদের চেয়ারম্যান, সচিব, মেম্বারসহ স্থানীয়দের সবার কাছেই আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।

 

দীর্ঘ ২৭ বছর পর আকস্মিকভাবে গত ৩০ সেপ্টেম্বর নিজ জন্মস্থানে ফিরে আসেন জহির উদ্দিন বাচ্চু মিয়া। তাকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তার পরিবার ও প্রতিবেশিরা। বর্তমানে ভাতিজা শফিকুলের বাসায় অবস্থান করছেন তিনি। একমাত্র ছেলে জাহিদুল ইসলাম (২৭) ঢাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। বাবার ফিরে আসার কথা শুনে ঢাকা থেকে মাকে নিয়ে শফিকুলের বাড়িতে দেখতে এসেছিল। কয়েকদিন থাকার পর কর্মস্থলে চলে গেছে সে। জাহিদুল বাবার তিরোধানের পর জায়গাজমি বিক্রি করে নানাবাড়ি আগমনীতে বাড়ি করেছে। সেখানেই মাকে নিয়ে থাকে সে।

 

এদিকে বয়স বেড়ে যাওয়ায় নানা রোগ-ব্যাধিতে ভুগছিলেন বাচ্চু মিয়া। তার সবচেয়ে কাছের লোক সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের চৌকাদার শেখর এবং তার স্ত্রী তাকে বুঝিয়েছেন ‘তোমার বয়স হয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকো। কখন কী হয়, কে দেখবে? এখন সময় হয়েছে, পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার। জন্মস্থানে গিয়ে দেখো, পরিবারের কেউ আছে নাকি। তাদের সাথে সাক্ষাৎ করো। যদি গ্রামে গিয়ে দেখো তার অন্যত্র বিয়ে হয়ে চলে গেছে তাহলে গ্রামের একটু মাটি নিয়ে আসো। সেই মাটি দিয়ে যাতে এখানকার মানুষ কবর দিতে পারে।’ এমন অনেক কথাবার্তা বলে বাচ্চু মিয়াকে বুঝিয়ে কুড়িগ্রামে ফেরৎ পাঠানো হয়। বর্তমানে তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ভালো নেই। তিনি বারাবার ফিরে যেতে চান সুন্দলী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে। সেখানকার মায়া কাটতে পারছেন না তিনি।

 

বাচ্চু মিয়ার প্রতিবেশী ইউসুফ আলী জানান, গ্রামবাসী মনে করেছিল বাচ্চু মিয়া মারা গেছেন। দীর্ঘ ২৭ বছর পর সে ফেরত আসায় প্রতিবেশী ও তার পরিবারের লোকজন খুব খুশি হয়েছে।

 

এ ব্যাপারে সুন্দলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল মুঠোফোনে জানান, ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষ তাকে ভালোবাসে। গাছের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল, অনেক গাছ সে লাগিয়েছে। তার ব্যবহার ভালো ছিল। মুসলিম হলেও তিনি হিন্দু মানুষ মারা গেলে সৎকারে অংশ নিতেন। ইউনিয়নে কারো বাড়িতে ভালো রান্না হলে তাকে দাওয়াত দেওয়া হতো। এককথায় সবার সাথে তার সুসস্পর্ক ছিল। তার পরিবারের লোকের কাছে তাকে ফেরত পাঠাতে পেরে একদিকে আমাদের দুঃখ হলেও বড় আনন্দ, তিনি তার পরিবার পেয়েছেন।

 

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।