ওসমানী হাসপাতালে চারশ শয্যার করোনা ইউনিট ‘শিগগিরই’
এম এ রশীদ সিলেট থেকেঃচারশ শয্যার করোনা ইউনিট চালুর জন্য প্রায় আট মাস আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর কয়েক দফায় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে তাগিদ। কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। চিঠি দিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কিন্তু এখন অবধি ওই করোনা ইউনিট চালুর বিষয়ে অনুমতি মেলেনি, পাওয়া যায়নি কোনো বরাদ্দ। অথচ প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষায় ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজন শুধু অনুমতি আর ৩ কোটি টাকার মতো বরাদ্দ।
তবে ‘খুব শিগগিরই’ এই ইউনিট চালু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীলরা।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, সিলেটে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় সাড়ে আটশ শয্যা আছে করোনাক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য। সবমিলিয়ে আইসিইউ শয্যা আছে ১৩৭টি। তন্মধ্যে ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতালে ১৬টি, ওসমানী হাসপাতালে ১৮টি এবং মৌলভীবাজার হাসপাতালে ৬টি শয্যা রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় আইসিইউ রয়েছে ৯৭টি। বর্তমানে এসব আইসিইউর প্রতিটিতে রোগী ভর্তি রয়েছেন। সাধারণ শয্যাগুলোও খালি নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ চলছে সিলেটে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ হাসপাতালে ঘুরছেন, কিন্তু সিট (শয্যা) খালি না থাকায় তারা ভর্তি হতে পারছেন না। অনেকেই হাসপাতালে আইসিইউ না পেয়ে মারা যাচ্ছেন। এই কঠিন অবস্থায় ওসমানীর চারশ শয্যার ইউনিট চালু থাকলে করোনাক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা অনেকটাই সহজ হতো।
জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে, এমন চিন্তায় প্রায় আট মাস আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠায় ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে চারশ শয্যার একটি করোনা ইউনিট চালুর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ও প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চাওয়া হয়। হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় এই ইউনিট চালু করতে চায় কর্তৃপক্ষ।
সেই প্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে গেল এপ্রিলে ফের প্রস্তাব পাঠানো হয়। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন সিলেট-১ আসনের সাংসদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সর্বশেষ ঈদুল আযহার আগে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও। চিঠিতে বলা হয়, ‘সিলেটে যে হারে সংক্রমণ বেড়েছে তাতে ওসমানীর প্রস্তাবিত করোনা ইউনিট দ্রুত চালু করা প্রয়োজন। অক্সিজেন লাইন দ্রুত স্থাপন করে এটি চালু করলে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আর যদি সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপনে দেরি হয় কিংবা অপরাগতা প্রকাশ করা হয় তাহলে সিলেট সিটি কর্পোরেশন অনুমতি পেলে নিজস্ব খরচে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করে দেবে।’
কিন্তু কাজ হচ্ছে না কিছুতেই। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তহীনতায় আটকে আছে ওসমানী হাসপাতালের করোনা ইউনিট।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা ইউনিট চালু করতে প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন বাকি। এজন্য বরাদ্দ প্রয়োজন ৩ কোটি টাকা। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইউনিট চালুর বিষয়ে কিছুই বলছে না।
জানতে চাইলে সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত প্রতিবেদককে বলেন, ‘ওসমানী হাসপাতালে চারশ শয্যার করোনা ইউনিট চালুর বিষয়ে এখনও ঢাকা থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি, বরাদ্দ মেলেনি।’
সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হিমাংশু লাল রায় প্রতিবেদককে বলেন, ‘এই করোনা ইউনিট চালুর বিষয়ে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। দু-চারদিনের মধ্যে একটা সিদ্ধান্ত পাওয়ার আশায় আছি। খুব শিগগিরই এই ইউনিট চালু হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
Leave a Reply