শেখ আবদুল্লাহ আনোয়ারা,প্রতিনিধি ।
এ দেশে এক সময় হাজার হাজার রকম দেশি ধান জাতের আবাদ করা হতো। গত শতাব্দীর পাঁচ বা ছয়ের দশকেও এ দেশে এদের সংখ্যা ছিল বেশ কয়েক হাজার। এখন থেকে আশি বছর আগে বিশিষ্ট ধান বিজ্ঞানী ড. পি হেক্টর এ দেশে বিভিন্ন মৌসুমে আবাদী ধানের স্থানীয় জাতের সংখ্যা ১৮,০০০ বলে উল্লেখ করেছেন।
আধুনিক কৃষিব্যবস্থার কারণে দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে দেশী প্রজাতির ধান। হাইব্রিড ও উচ্চ ফলনশীলের (উফশী) সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে আনোয়ারায় চাষাবাদ থেকে প্রায় বিলুপ্তির পথে ৪০ প্রজাতির মত দেশীয় ধান।
কৃষি অধিদপ্তরের সূত্রে মতে, ২০১০ এর পূর্বে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় প্রায় ৭০ প্রজাতির স্থানীয় ধানের চাষ হতো, সেখানে এখন হয় মাত্র ২০-২৫ প্রজাতির ধান।
খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা, ফসলি জমি ভরাট এবং কলকারখানার ফলে কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাওয়া, জমির উর্বরতা হ্রাসের কারণে কৃষক এখন চান্দিনা, মালা, ব্রিশাইল, ব্রি বালাম, আশা, সুফলা, প্রগতি, মুক্তা, ময়না, এই ধরণের দেশীয় বীজের পরিবর্তে হাইব্রিড কিংবা উফশী জাতের ধান আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। কারণ স্থানীয় জাতের ধানের তুলনায় হাইব্রিডের উৎপাদন অনেক বেশি।
কৃষি কর্মকর্তারা মনে করেন, নতুন নতুন উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন প্রজাতির ধান বাজারে আসতেছে। ফলে কৃষকরা আগের দেশীয় ধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নতুন ধানের দিকে ধাবিত হচ্ছে। কারণ কোনো একটা জমিতে একনাগারে ৪-৫ বছর একই ধানের চাষ করা হলে এর পরবর্তীতে গিয়ে জমিটাতে ফলন কমে আসে। যার কারণে কৃষকরা এক জমিতে একই বীজ বার বার রোপন না করে বরং ২-৩ বছর পর পর অধিক ফলনের আশায় বীজ পরিবর্তন করে ফেলে। আর তাছাড়াও আগের দেশীয় ধানে কানি প্রতি পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ টন অর্থাৎ ৮০-৯০ আড়ি ধান হতো পক্ষান্তরে এখন হাইব্রিড ধানের বীজ রোপন করলে কানি প্রতি ছয় থেকে সাড়ে ছয় টন অর্থাৎ, ১০০-১২০ আড়ি ধান পাওয়া যায়। যা দেশীয় বীজের তুলনায় অনেক বেশি।
এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, উচ্চ ফলনশীল, উন্নত মানের বিভিন্ন ধানের বীজ বাজারে আসতেছে। যেসব বীজে দেশীয় বীজের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি ফলন পাওয়া যায়। কৃষকরা তাদের খরচ পুষিয়ে অধিক ফলনের আশায় দেশীয় বীজ পরিহার করে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিডের প্রতি ঝুঁকছে। আর এসব দেশীয় বীজ যাতে একেবারেই হারিয়ে না যায় সেজন্য এসমস্ত বীজগুলো সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply