নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

ফরিদপুরে সদরপুরে আমিরাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সার্ভিস বুক জালিয়াতি সহ অন্যান্ন দুনীতির অভিযোগ।
ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আজাহার মিয়া-এর বিরুদ্ধে সার্ভিস বুক জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে আজ সোমবার সকাল ১১টার দিকে দৈনিক ঢাকার সময় পত্রিকার একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সরোজমিনে অনুসন্ধান চালায় এবং সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য গ্রহণ করে।
প্রতিবেদক দল বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পৌঁছালে প্রধান শিক্ষক মোঃ আজাহার মিয়া তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন ,সার্ভিস বুক আমার কাছে থাকে না। এটি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের অফিসে সংরক্ষিত থাকে। সার্ভিস বুক জালিয়াতির কোনো সুযোগ নেই।”(তার এই বক্তব্য ভিডিওতে ধারণ করা হয়।)
পরে সদরপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মামুনুর রহমান-এর অফিসে গিয়ে প্রতিনিধি দল কথা বলে এবং অনুসন্ধান করেন । তিনি জানান—
“আপনাদের মাধ্যমে আমরা অভিযোগটি জানতে পেরেছি। বিষয়টি তদন্ত করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রধান শিক্ষকসহ এই জালিয়াতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ করা হবে।”
এরপর সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা অনুসন্ধানী প্রতিনিধি দলকে বলেন—
“এই অভিযোগ সম্পর্কে আপনাদের মাধ্যমে আমি প্রথম জানলাম। উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে। অনিয়ম প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আজাহার মিয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
প্রতিনিধি দলের অনুসন্ধানে বেশ কিছু উদ্বেগজনক তথ্য পাওয়া গেছে—
সার্ভিস বুকের কয়েকটি পৃষ্ঠা নতুন করে সংযুক্ত করা হয়েছে।
নতুন সংযুক্ত পৃষ্ঠার কাগজের রঙ পুরনো পৃষ্ঠাগুলোর সঙ্গে মিল নেই।
প্রধান শিক্ষক মোঃ আজাহার মিয়ার বিরুদ্ধে পূর্বে যেসব বিভাগীয় মামলা ও শাস্তি হয়েছিল, তার কোনো এন্ট্রি সার্ভিস বুকে পাওয়া যায়নি।
সার্ভিস বুকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পূর্বের তথ্য অনুপস্থিত যাহা জালিয়াতি করে পূর্বের পৃষ্ঠা সড়িয়ে নতুন পৃষ্ঠা যুক্ত করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
প্রধান শিক্ষক আজহার মিয়ার বাবুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বালিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি এবং ইনক্রিমেন্ট কর্তনের তথ্য তাহার সার্ভিস বুকের দ্বিতীয় খন্ডের অষ্টম প্রিষ্টায় লাল কালি দিয়ে এন্ট্রি করা হয়েছিল কিন্তু বর্তমানে তার সার্ভিস বুকের অষ্টম পৃষ্ঠায় বালিয়াচর এর বদলি এবং ইনক্রিমেন্ট বর্তমানে কোন রেকর্ড নেই বালিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬/০৮ /২০০৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ০৫/০৭/২০১০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় দুই বছর চাকুরী জীবনের কোন তথ্য তার সার্ভিস বুকে এন্টি নাই। বালিয়াচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামটিও পর্যন্ত নেই।
আজহার মিয়া তার সার্ভিস বুকের পৃষ্ঠা পরিবর্তন করেছে এটা অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে। উক্ত সার্ভিস বুকের পৃষ্ঠা খুলে নতুন পৃষ্ঠা সেলাই করে লাগানোর সময় সে তার সার্ভিস বুকের কভার পেজ পরিবর্তন করেছে এটি প্রমাণ পাওয়া গেছে। একটি রেজিস্টার খাতার কাভার পেজ দিয়ে সার্ভিস বুকের নতুন কাভার পেজ তৈরি করেছে। আগের কাভার পেজে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক প্রথম চাকুরী ঢাকা জেলার দোহার থানার মুকসুদপুর স্কুলের ঠিকানা লেখা থাকলেও পরিবর্তিত কভার পেজে তাহার বর্তমান কর্মস্থল আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নাম্বার শুধু ১৪ নং লেখা পাওয়া গেছে। অনুসন্ধান করে আরো জানা গেছে প্রতিটা সরকারি কর্মকর্তার সার্ভিস বুকের কাভার পেজে প্রথম যোগদানের তারিখ এবং ঠিকানা থাকে যাহা অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের সার্ভিস বুকে পাওয়া যায় নাই। অনুসন্ধানে আরো জানা যায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের সার্ভিস বুকের পৃষ্ঠা বদলের মাধ্যমে আজাহার মিয়া বাবুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বালিয়াচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বদলি ও বিভাগীয় মামলায় শাস্তি ও ইনক্রিমেন্ট কর্তনের তথ্য উক্ত সার্ভিস বুক থেকে সরিয়ে ফেলেছেন। বালিয়াচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েই অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক তাহার সার্ভিস বুক জালিয়াতি করেছে মর্মে অনুসন্ধানে সত্যতা পাওয়া গেছে।
এছাড়াও তাহার অতীতের এবং বর্তমান চাকরি জীবনের বিভিন্ন দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া যায় যা অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।
কিছু অংশে এন্ট্রি সম্পূর্ণ নতুন করে লেখা হয়েছে বলে সন্দেহের উদ্রেক হয়।
এ সমস্ত তথ্য সার্ভিস বুক জালিয়াতির অভিযোগকে আরও জোরালো করে তুলেছে।
সংবাদ প্রকাশিত হলে তদন্তে নামবে শিক্ষা বিভাগ-
সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে নথিপত্র সংগ্রহ করে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া হবে। যেহেতু অফিসিয়াল ভাবে কোন অভিযোগ এখনো পাওয়া যায়নি। উপজেলা শিক্ষা অফিস এবং উপজেলা প্রশাসন সমন্বিতভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলেও আশ্বাস প্রদান করেন।
সত্যতা প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ছাড়াও সংশ্লিষ্ট সকলকে বিভাগীয় আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানা গেছে।
Leave a Reply