[english_date]।[bangla_date]।[bangla_day]

ডুমুরিয়ায় সরকারি জমি উদ্ধারে ইটভাটায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

সরদার বাদশা
নিজস্ব প্রতিনিধি।

মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা ও হরি নদী তীরের সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখল করে পরিচালিত ১৪টি ইটভাটার সকল স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম আবারও শুরু হয়েছে। আজ( ৩মার্চ বৃহস্পতিবার) সকাল ১১ টা থেকে বেলা ৩ টা পর্যন্ত বরাতিয়া ও খর্ণিয়া এলাকায় অবস্থিত ৭টি ইট ভাটায় এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মামুনুর রশীদ এর নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমান আদালত এ অভিযান পরিচালনা করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে গত ২০ ফেব্রুয়ারী ডুমুরিয়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বরাতিয়া ও খর্ণিয়া এলাকায় অবস্থিত ইটভাটা সমুহ উচ্ছেদের লক্ষে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হয়। ওই অভিযানে আটলিয়ার বরাতিয়া এলাকায় অবস্থিত শাহাজান জমাদ্দারের মালিকানাধীন নুরজাহান ব্রিক্স-২ ইট ভাটা লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং নদীর মাটি কেঁটে ইট প্রস্তুুত করার অপরাধে ২ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য্য অনদায়ে ৬ মাসের কারাদন্ডাদেশ, খর্ণিয়া এলাকায় সোহরাব হোসেনের মালিকানাধীন এ,এফ,এম,ব্রিক্স লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদন্ডাদেশ কারাদন্ডাদেশ, মোঃ ইসমাইল হোসেন বিশ্বাসের মালিকানাধীন আল্লার দান ব্রিক্সকে ১ লাখ টাকা এবং জনৈক মশিউর রহমানের মালিকানাধীন মেরী ব্রিক্সকে ১ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য্য করে আদায় করা হয়।
এ ছাড়া উল্লেখিত ইটভাটাসহ গাজী এজাজ আহমেদ’র মালিকানাধীন সেতু ব্রিক্স,মোঃ ফজলুর রহমানের মালিকানাধীন এস,বি ব্রিক্স ও মোঃ সালেহ আখতার মাহির মালিকানাধীন কে,বি-২ ব্রিক্স কে নদীর জায়গায় স্থাপিত সকল স্থাপনা, স্তুুপকৃত ইট ও মাটি পরবর্তি ৩ দিনের মধ্যে সরিয়ে নিতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
কিন্ত উল্লেখিত ভাটা কর্তৃপক্ষ ভ্রাম্যমান আদালতের আদেশ অম্যান করে সরকারি জায়গা থেকে ইট,মাটি ও স্থাপনা সরিয়া না নেয়ায় বৃহস্পতিবার আবারও অভিযান পরিচালনা করে প্রস্তুুতকৃত কাঁচা ইটে ডুমুরিয়া ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে দিয়ে ট্রাকের তলায় পিষ্ট করা হয়। অভিযান পরিচালনা বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন, ইতোপূর্বে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা কালে কয়েকটি ইটভাটা আইন লংঘন করায় জরিমানা ধার্য্য করে আদায় করা হয়েছিলো। তাছাড়া ওই সকল ইটভাটাসহ মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশিত ১৪টি ইটভাটার মধ্যে অবৈধ ভাবে দখলে রাখা সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে ইট,মাটিসহ সমস্ত স্থাপনা তিন দিনের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। কিন্ত ইটভাটা কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা মেনে জায়গা খালি না করায় আবারও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে’। আগামি শনিবার থেকে বুলডোজার,স্কেবেটর ও ফায়ার সার্ভিসের পানির গাড়ির সহায়তায় জোরালো অভিযান পরিচালনা করবেন বলে আরো জানান তিনি।
আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার এস,ডি মোঃমিজানুররহমান, এ,আর,ও মেহেদী হাসান,ডুমুরিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার মোঃ শরিফুল ইসলাম ডুমুরিয়া থানা পুলিশ,উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তা,কর্মচারীবৃন্দ। প্রসঙ্গত, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া,খর্ণিয়া ও রুদাঘরা ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ভদ্রা ও হরি নদীর তীরের চর ভরাটিয়া জমি এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ ভাবে দখল করে ইট ভাটা পরিচালনা করে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে গত বছর ২২ ফেব্রুয়ারী মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) হরি ও ভদ্রা নদীর জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা উচ্ছেদের জন্য জনস্বার্থে সংগঠনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়ার আইনজীবী মনজিল মোরশেদ একটি রীট পিটিশন দায়ের করেন। এক পর্যায়ে গত বছর ১৪ ডিসেম্বর মহামান্য হাইকোর্ট রীট পিটিশনটি শুনানীআন্তে পরবর্তি ৬০ দিনের মধ্যে ১৪টি ইটভাটার দখলে থাকা সরকারি জায়গার মধ্যে স্থাপিত সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। বিচারপতি মোঃ মজিবর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি কামরুল হোসেন মোল্যার বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন। উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়া ইট ভাটা গুলো হচ্ছে-ডুমুরিয়া কুলবাড়িয়া, বরাতিয়া ও ভদ্রাদিয়া মৌজার ভদ্রা নদীর তীরবর্তী তে স্থাপিত জনৈক ফজলুর রহমানের মালিকানাধীন এসবি ব্রিক্স, একই মৌজা ও নদীর তীরে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি’র মালিকানাধীন কে.পি.বি ব্রিকস, কুলবাড়িয়া বরাতিয়া ও খর্ণিয়া মৌজার ভদ্রা তীরের এজাজ আহমেদের সেতু-১ ব্রিকস, শাহজাহান জমাদ্দারের নূরজাহান-১ ব্রিকস, হুমায়ুন কবির বুলুর কে.বি-২ ব্রিকস, কুলবাড়িয়া বরাতিয়া ভদ্রা নদী তীরে শাহজাহান জমাদ্দারের শান ব্রিকস, রানাই মৌজার ভদ্রা নদীর তীরে মোঃ সোবাহান সানার এফএম ব্রিকস, রানাই মৌজার হরি নদী তীরের জাহিদুল ইসলামের কে.বি ব্রিকস, ইসমাইল হোসেন বিশ্বাসের আল-মদিনা ব্রিকস, মশিউর রহমানের মেরি ব্রিকস, আব্দুল লতিফ জমাদ্দারের জে.বি ব্রিকস, আমিনুর রশিদের লুইন ব্রিকস, চহেড়া মৌজার হরি নদী তীরে গাজী আব্দুল হকের সেতু-৪ ব্রিকস এবং রুদাঘরা মৌজার হরি নদী তীরের গাজী ইমরানুল করিরের টিএম.বি ব্রিকস।
আরো জানা যায়, এর আগে হাইকোর্ট রুল জারি করে হরি ও ভদ্রা নদীর সীমানায় সিএস, আরএস রেকর্ড অনুসারে জরিপ করে দখলদারদের তালিকাসহ ৯০দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে খুলনা জেলা প্রশাসন ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটিতে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা খুলনা পওর বিভাগ-১, পাউবো খুলনাকে আহবায়ক এবং সার্ভেয়ার, খুলনা পওর বিভাগ-১, ডুমুরিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার এবং বটিয়াঘাটা উপজেলা ভুমি অফিসের সার্ভেয়ারকে সদস্য করা হয়। কমিটিকে যৌথভাবে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দেন আদালত। জেলা প্রশাসন গত অক্টোবরে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করে।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *