নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনাঃ
খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৯ কিলোমিটার সহ উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কাটাটা থেকে পদ্মপুকুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থায় রয়েছে, ঐ এলাকার মানুষের চলাচলে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
কয়রা উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নে যেতে একটি মাত্র রাস্তা। রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। রাস্তাটির কাটকাটা থেকে পদ্মপুকুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার সড়কের বেহালদশা। প্রায় ৫টি স্হানে ইট উঠে ৪০০ মিটার জায়গা ন্যাড়া হয়ে পড়ে রয়েছে। এই ৪০০ মিটার জায়গা কর্দমাক্ত অবস্থায় রয়েছে। গাড়ি চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। একপ্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এমনি অবস্হা খুলনার কয়রা উপজেলার কাটকাটা-ঘড়িলাল বাজার সড়কের।
এই রাস্তা দিয়ে উপজেলার দুইটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের চলাচল। রাস্তাটি সংস্কার না হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্হানীয়দের। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সড়ক সংস্কারের জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে বার বার দাবী জানানো হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছেন না কেউই। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে এ পথে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের।
জানা গেছে, সড়কের এ সাড়ে ৫ কিলেমিটার অংশ পড়েছে উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের মধ্যে। এ ইউনিয়নের ৫টি গ্রামসহ দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের মানুষ উপজেলা সদরে যাতায়াত করেন এ সড়ক দিয়ে। সড়কটি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার সড়ক এলজিইডির আওতায় হলেও সড়কের ঐ অংশটুকু পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ইটের সোলিং করা সড়কের দুই পাশ ভেঙে সরু হয়ে গেছে। মাঝখানে যে অংশে ইট রয়েছে তা উঠে এবড়ো-থেবড়ো হয়ে পড়েছে। সড়কের দুই পাশের অংশে মাটি না থাকায় কোন যান-বাহন চলাচলও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হয় এলাকাবাসীর। বর্ষা মৌসুমে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।
হরিহরপুর গ্রামের বাসিন্দা আনন্দ চক্রবর্তী বলেন, এক বছর আগে ইট বালি দিয়ে সড়কটি সংস্কার করা হয়েছিল। এক মাস যেতে না যেতেই ফের বেহাল হয়ে পড়েছে। এ মুহুর্তে সড়কের ইট উঠে রাস্তার দুই পাশে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় রাতে চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ বিষয়ে জনপ্রতিধিদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোন লাভ হয় না।
দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ঘড়িলাল গ্রামের বিপ্রদাস মণ্ডল বলেন, সড়কের ভাঙা অংশের কারণে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলেও উঠতে চায় না কেউ। প্রতিনিয়ত সেখানে দুর্ঘটনা ঘটছে। তবুও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে না। দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চরামুখা এলাকার চিংড়ি ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, ব্যবসায়িক মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে সড়কের ঐ অংশটুকু প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে নদী পথে মালামাল পরিবহন করতে হয় ব্যবসায়ীদের। এতে খরচ এবং সময় ব্যয় হয় কয়েকগুন বেশি।
উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান সরদার নূরুল ইসলাম বলেন, সড়কটি দীর্ঘ দিন ধরে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। মাঝে মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট দিয়ে ঠিক করা হলেও তা বেশিদিন টেকে না। আগের বছর স্থানীয় সংসদ সদস্যের উদ্যোগে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করে মেরামত কাজ করা হয়েছিল। কিন্তু তা-ও টিকলো না। আরো তিনি জানান, সড়কের মাটির কাজ করার দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের। তারা আগে উদ্যোগ না নিলে সেখানে পাকার কাজ করলেও টিকে থাকে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা হলেও কোন উদ্যোগ নেওয়া হয় না।
দক্ষিণ বেদকাশী ইউপি চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল বলেন, সড়কের ঐ অংশের কারণে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো অবস্থা। সংস্কারের বিষয়ে পাউবো ও এলজিইডি’র কর্মকর্তারা একে অন্যকে দোষারোপ করেন। কাজের কাজ কিছুই হয় না। সর্বশেষ গত সপ্তাহে সংসদ সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি উপজেলা প্রকৌশলী অফিসে গিয়ে ফোন ধরিয়ে দিতে বলেছেন।
জানতে চাইলে পাউবো খুলনা-২ বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন বলেন, কাটকাটা থেকে হরিহরপুর পর্যন্ত শাকবাড়ীয়া নদী তীরবর্তী সড়কটির মাটির কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে। মাটির কাজ শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ এলজিইডি থেকে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
কয়রা উপজেলা প্রকৌশলী দারুল হুদা বলেন, সড়কের ঐ অংশে কাজ করার জন্য এর আগে একাধিকবার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পাউবো’র অসহযোগীতার কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
Leave a Reply