শেখ আবদুল্লাহ আনোয়ারা(চট্রগ্রাম) প্রতিনিধি।
দেশে একসময় ব্যানার ও সাইনবোর্ড লেখার কাজ করতেন শৌখিন বা পেশাদার শিল্পীরাই। গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই চোখে পড়তো তাদের দোকান। কখনো দোকান আবার কখনো বা অন্য কোনো দেয়ালে কাপড় টাঙিয়ে রংতুলি দিয়ে ব্যানার লেখার দৃশ্য নিয়মিতই দেখা যেত। কিন্তু এখন আর তা দেখা যায় না। বরং বিভিন্ন স্থানে সর্বত্রই আর্টের দোকানের পরিবর্তে গড়ে উঠেছে ডিজিটাল প্রিন্টিং সেন্টার। আর এভাবেই এখন বিলুপ্তির পথে রংতুলিতে ব্যানার লেখার চর্চা।চট্রগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা বিভিন্ন ব্যানার লেখার দোকানে গিয়ে দেখা গেল এমন দৃশ্য।
একটি স্কুলের দেয়ালে রংতুলি দিয়ে লিখছেন আর্টিস্ট শিবু পদ দাস(আপন) । একসময় রংতুলির ব্যানার ও সাইনবোর্ড লিখতেন তিনি। পরে অন্য ব্যানার লেখার কাজ শুরু করেছিলেন। অর্ডারও আসতো অনেক। কিন্তু এখন ব্যানার বা সাইনবোর্ড আর হাতে লেখার খুব একটা সুযোগ মেলে না তার। ১২ বছরের অভ্যাসবশত দোকান বসেন আর মাঝে মধ্যে অর্ডার পেলে রংতুলি হাতে নিয়ে ব্যানার লেখার কাজ করেন। সাথে রোজগারের জন্যে শুরু করেছেন প্রিন্টের কাজ।
শিবু পদ দাস(আপন) বলছিলেন একটি সাধারণ মাপের ব্যানার হাতে লিখতে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। আর তার দোকানের পাশের দোকানটির নাম কালার টাচ। তার সামনেই লেখা আছে ২৫ মিনিটেই ডিজিটাল ব্যানার প্রিন্ট করা হয়। আগের একটা ব্যানার লিখে পাঁচ শ টাকা পেতাম। এখনো লিখে তিন’শ টাকা খরচের বেশি দিতে চাই না। বরং আগের চেয়ে বেশি রংয়ের ব্যবহার করে কাজ করছে ডিজিটাল ব্যানারে।নয়ন দোকানের ভেতরে দেখা গেল অনেকগুলো কম্পিউটারে কাজ করছেন অনেকে। কোনোটিতে ব্যানার, কোনোটিতে পোস্টার আবার কোনোটিতে ঈদ কার্ডের ডিজাইন করা হচ্ছে।
তিনি বলছেন, একসময় বিশাল দেয়াল ধরে প্রতিদিন বহু শিল্পীর তুলিতে লেখা হতো অন্তত শত শত ব্যানার। আর এখন দুইটি ব্যানারও লেখা হয় না একদিনে।
আবার বিভিন্ন মার্কেটে মার্কেটে রীতিমত জেঁকে বসেছে ডিজিটাল ব্যানার সাইনবোর্ডের দোকান আর কারখানার পসরা। তেমনি একটি কারখানার একজন সত্ত্বাধিকারী আশিকু রহমন নয়ন বলছেন, আগে যেসব কাজ পেশাদার বা সৌখিন আর্টিস্টরা করতো সেগুলোই তারা এখন কম্পিউটার আর প্রিন্টিং মেশিনের সাহায্যে করছেন। তিনি বলেন, ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড, ফেস্টুন সবই করছি। ডিজাইন করে প্রিন্ট করতে হয়। একই খরচে আরও ভালো জিনিস হয়। আর এভাবেই কম্পিউটার, প্রিন্টিং মেশিন, ডিজাইনের মতো ডিজিটাল শব্দগুলোর মধ্যে ক্রমাগত হারিয়ে ব্যানার বা সাইনবোর্ড হাতে লেখার বিষয়টি এখন বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে।
চাতরী হাসেমী প্রিন্ট মিডিয়া -এর সত্ত্বাধিকারী আশিকুর রহমান নয়ন বলছেন, আমরা হাতের কাজ জানি। কিন্তু এর চাহিদা কমছে। আগে প্রতিদিন ৫/৭ টা পেতাম। আর এখন দুই দিনেও হয়তো একটা আসে না। পরিস্থিতি বুঝে হাসেমী স্ক্রিন প্রিন্ট সহ ডিজিটাল ব্যানারেও কাজেও হাত দিয়েছে হাতে লেখার পাশাপাশি।