সরদার বাদশা
নিজস্ব প্রতিনিধি।
বার বার ধারের টাকা ফেরত চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় ইন্স্যুরেন্সকর্মী সৌরভী মণ্ডলকে (৪৫) শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। হত্যার পর দিনও হত্যাকারী লাশের পাশে ঘোরাঘুরি করেন। ঘটনার চার দিন পর তিনি ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করেন। ঘটনার দীর্ঘ আড়াই বছর পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই ক্লু-লেস এই হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঘটনার একমাত্র মাস্টারমাইন্ড প্রণব কুমার মণ্ডলকে (৩৯)। আদালতে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন। জবানবন্দি রেকর্ড করেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এর বিচারক মো. আজহারুল ইসলাম।
আজ বুধবার (০১ জুন) দুপুরে পিবিআই খুলনা কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়। লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ড ঘটে ডুমুরিয়া উপজেলার পশ্চিম বলাবুনিয়া গ্রামে।
নিহত সৌরভী মণ্ডল বলাবুনিয়া গ্রামের স্বপন মণ্ডলের স্ত্রী। তিনি পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি সুদের ব্যবসা করতেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার প্রণব মণ্ডল বলাবুনিয়া পূর্বপাড়া গ্রামের দিলীপ চন্দ্র মণ্ডলের ছেলে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান জানান, আসামি প্রণব মণ্ডল সৌরভী মণ্ডলের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ধার নেয়। একাধিকবার টাকা ফেরত দিতে চেয়ে ওয়াদা ভঙ্গ করেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২ জুলাই সকালে সৌরভী মণ্ডল টাকা ফেরত চাইতে প্রণবের বাড়িতে যায়। টাকা না দিলে মামলা করার হুমকি দেন সৌরভী। ওই দিন রাতে প্রণব স্থানীয় অনুষ্ঠানে ছিলেন। বাড়ি ফিরে যাওয়ার পথে রাত পৌনে ১টার দিকে সৌরভী মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়িতে যায়। ঘুমন্ত সৌরভীকে ডেকে তুলে বলেন— টাকা দিতে তার আরও সময় লাগবে। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে প্রণব গলা চেপে ধরলে সৌরভীর মৃত্যু হয়। নড়াচড়া করতে না দেখে সৌরভীর গলায় গামছা পেচিয়ে প্রণব পালিয়ে যায়। তাকে যেন কেউ সন্দেহ না করে সেজন্য সকালে গ্রামের মানুষের সঙ্গে সৌরভীর লাশ দেখতে তাদের বাড়িতেও যায় প্রণব। হত্যার চার দিন পর পালিয়ে ভারতে চলে যায় প্রণব।
এ ঘটনায় নিহতের স্বামী ৭ জনকে আসামি করে ডুমুরিয়া থানায় মামলা করে। আসামিরা সকলে নিহতের প্রতিবেশী। তাদের সঙ্গে পূর্ব শত্রুতা ছিল। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছে।
পুলিশ সুপার বলেন, সৌরভী হত্যা মামলা ছিল ক্লু-লেস মামলা। প্রথমে ডুমুরিয়া থানার পুলিশ মামলার তদন্ত করে। কিন্তু তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর মামলা পিবিআইতে হস্তান্তর করেন। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা জানতে পারেন প্রণব নিহতের কাছ থেকে নগদ ১৫ হাজার টাকা সুদে নিয়েছে এবং হত্যার তিন দিন পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছে। তখনই পিবিআই নিশ্চিত হয় এ হত্যার সঙ্গে প্রণব জড়িত রয়েছে। দীর্ঘ আড়াই বছর পর প্রণব ডুমুরিয়ায় ফিরে আসে। গ্রামের বাড়িতে না গিয়ে ডুমুরিয়ার কুলটি গ্রামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকে। বিভিন্ন সোর্স মারফত ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গত ৩০ মে রাতে ডুমুরিয়ার কুলটি গ্রাম থেকে প্রণবকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই খুলনার পরিদর্শক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, প্রণব হত্যাকাণ্ডে একাই জড়িত ছিলেন- মর্মে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক বর্ণনা দিয়েছেন। দ্রুতই এ মামলার চার্জশিট দাখিল করা হবে বলেও জানান তিনি।