রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি ঃ
উপকূলের সাতক্ষীরার শ্যামনগরে চলছে তাপ প্রবাহ। সকালে সূর্য উঠার পর থেকে বিকাল পর্যন্ত চলছে অস্বস্থিকর গরম আবহাওয়া। বর্তমানে শ্যামনগরে কয়েকদিন যাবত দিনে দুপুরে ৩৮, ৩৯ ডিগ্রী তাপমাত্রা চলছে। তাপ প্রবাহের মধ্যে আরাম দায়ক রসাল ফল তরমুজ, ডাব, শসা, আনারস, সবেদা, লেবু, আঙ্গুর সহ অন্যান্য ফলের চাহিদা বেড়েছে। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে চাহিদা বেশি তরমুজের।
শ্যামনগর উপজেলা সদরের তরমুজ বিক্রেতা সুজন জানান দৈনিক ৭০ থেকে ৮০ পিচ তরমুজ বিক্রি করে থাকেন। তিনি বলেন গরম বাড়ার সাথে তরমুজের চাহিদা আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তরমুজ বিক্রেতা আরশাদ আলী বলেন দৈনিক ৫০ থেকে ৬০ পিচ তরমুজ বিক্রী করেন। শ্যামনগর উপজেলায় অবশ্য তরমুজ বিক্রী হয় কেজি দরে। প্রতি কেজি মূল্য ২৫ থেকে ৩০ টাকা। আবার কোন সময় ৩৫ টাকাও দরে প্রতি কেজি বিক্রী হচ্ছে।
উপজেলায় ক্রেতাদের চাহিদা বেশি স্থানীয় তরমুজের। উপজেলার কৈখালী, ধূমঘাট,মুন্সিগঞ্জ,কাশিমাড়ী,খুটিকাটা এলাকার তরমুজের চাহিদা বেশি। বিক্রেতারা জানান বর্তমানে স্থানীয় তরমুজ বিক্রী হচ্ছে। স্থানীয় তরমুজের সংকট হলে পরবর্তীতে জেলার বাহিরে থেকে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে তরমুজ আনা হয়।
নকিপুর বাজারের ফল বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন গরমে লেবু, সবেদা, আঙ্গুর এসব ফলেরও চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাস থাকায় ফলের চাহিদা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ক্রেতারা বলছেন ফলের দাম বেড়েছে।
শ্যামনগর বাজার সহ বিভিন্ন স্থানে ভ্যানে বহন করে ডাব বিক্রী করেন স্থানীয় গোপালপুর গ্রামের আলমগীর । তিনি বলেন গরমে আরাম দায়ক ডাবের পানি। তাই তিনি ভ্যানে বিভিন্ন স্থানে ডাব বিক্রী করেন। বর্তমানে ডাবের বিক্রীও বেড়েছে। এক এক একটি ডাব ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বা তার চেয়েও বেশী দামে বিক্রী করছেন। হাসপাতাল, কিনিকের রোগি, সাধারণ মানুষের মধ্যে ডাবের চাহিদা বেশি। দৈনিক ৭০ থেকে ৮০ পিচ ডাব তিনি একাই বিক্রী করেন বলে জানান।
উপজেলা কৃষি অফিসার এস এম এনামুল ইসলাম জানান, তরমুজ এটি বেশ পুষ্টিকর এবং উপাদেয় ফল। বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে তরমুজ চাষ হচ্ছে। বর্তমানে উপজেলার কৈখালী, ঈশ^রীপুর, কাশিমাড়ী, মুন্সিগঞ্জ, নুরনগর, ভূরুলিয়া ইউনিয়নে তরমুজ চাষ হচ্ছে। তরমুজে পানির পরিমান বেশি থাকায় গরমে মানুষের মধ্যে এই ফলের চাহিদা বেশি।
শ্যামনগর গ্রাম ডাঃ কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি ডাঃ মোঃ আকবর হোসেন বলেন তরমুজে রয়েছে বিভিন্ন উপকারিতা। গরমে রসাল ফল তরমুজের চাহিদা বেশি। তরমুজ ক্রয়ের সময় সঠিক ভাবে দেখে নেওয়ার কথা বলেন। বাজারে গায়ে ডোরা কাটা তরমুজকে ক্রেতা বিক্রেতা বাংলা লিংক তরমুজ বলে থাকেন। এছাড়া সাদা ও কালো রঙের তরমুজ পাওয়া যায়।
তরমুজ ক্রেতা বাদঘাটা গ্রামের অশোক , দূরমুজ খালী গ্রামে মহাদেব মন্ডল বলেন করোনার সময় তরমুজের চাহিদাও বেশি ছিল। তরমুজ উপাদেয় ফল এবং এটি গরমে পানি শূণ্যতা দূর করে।
নকিপুর গ্রামের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম, আবাদচন্ডিপুর গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন রমজানের ইফতারে তরমুজের চাহিদা রয়েছে। প্রচন্ড গরমে ইফতারে প্রায়ই বাড়ীতে তরমুজ রয়েছে বলে জানান।
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ মাহফুজুর রহমান বলেন তরমুজ একটি রসাল ফল। তরমুজে শর্করা রয়েছে ৮০ ভাগ। এছাড়া ভিটামিন বি-১,বি-২ ও বি-৩ রয়েছে। তরমুজ মানুষের শরীরে এনার্জি বৃদ্ধি করে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন এক শ্রেণির অসাদু ব্যবসায়ীরা তরমুজকে লাল করার জন্য এক ধরনের মেডিসিন ব্যবহার করেন যেটি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তিনি ক্রয়ের সময় সঠিক মান সম্পন্ন তরমুজ ক্রয়ের কথা বলেন।
ছবি- রসাল ফল তরমুজ দোকান,ছবি শ্যামনগর উপজেলা সদরের। ছবি- রনজিৎ বর্মন
রনজিৎ বর্মন
তাং-১৫.৪.২৩