রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি ঃ
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস উপলক্ষে উপকূলীয় সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলায় আলোচনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল “সুস্থ কৃষির জন্য স্বাস্থ্যকর মাটি”।
শুক্রবার সকালে ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ইতিহাসখ্যাত ধুমঘাটের হাসারচক গ্রামে এগ্রোইকোলজি লার্নিং সেন্টারে বারসিকের সহযোগিতায় স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও গ্রীন কোয়ালিশন এর উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মতবিনিময় সভায় স্থানীয় জনগণ, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিম, গ্রীন কোয়ালিশন, সাংবাদিক ও উন্নয়ন কর্মীরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে ফেস্টুনের মাধ্যমে উপকূলীয় কৃষি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় মাটির ভূমিকা, মাটি নষ্ট হওয়ার কারণ ও করণীয় তুলে ধরা হয়।
সভায় ঈশ্বরীপুর ইউনিয়ন গ্রীন কোয়ালিশন এর সভাপতি মো. জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং বারসিকের কর্মসূচি কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ মন্ডল এর সঞ্চালনায় অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক রণজিৎ বর্মন,উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজীব বাছাড়,বারসিক কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ জোয়ারদার, পুরস্কার প্রাপ্ত কৃষক অল্পনা রানী। স্থানীয় মাটির অবস্থান নিয়ে বক্তব্য রাখেন কৃষানী চম্পা মাঝি, সন্ধ্যা রানী, হাসিনা বেগম, কনিকা রানী, মনিকা পাইক, বরষা গাইন, শাপলা কিশোরী সংগঠনের সদস্য ধৃতিমা মন্ডল ও কৃষাণী মিতা রানী প্রমুখ।
অল্পনা রানী বলেন, মাটি বাঁচলে ফসল উৎপাদন বাড়বে। এজন্য মাটির স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে আমাদের জৈব সার ও বালাইনাশক ব্যবহার করে কৃষি কাজ করতে হবে। আমরা বাড়ির বিভিন্ন উপাদান দিয়ে জৈবসার তৈরী করতে পারি এবং প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে বালাইনাশক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারি। এতে আমরা বিষমুক্ত খাবার পাব, যা আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাবে।
রণজিৎ বর্মন বলেন, মাটি থেকে মানুষসহ প্রাণীকুলের সৃষ্টি। মাটির সাথে আমাদের আচার-আচরণ ভালো না হলে মাটিও আমাদের সাথে আচারণ খারাপ করবে। মাটি নষ্ট হলে মাটির উৎপাদন ক্ষমতা কমবে। এজন্য মাটি সুরক্ষিত করে কৃষি ব্যবস্থা তৈরী করতে হবে। তবেই নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা তৈরী হবে।
বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে মাটির স্বাস্থ্য প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে পড়ছে। কৃষিনির্ভর দেশের টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা, পুষ্টি ও জীবন-জীবিকার মূল ভিত্তি হলো মাটি, অথচ অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও অযত্নের কারণে দিন দিন মাটি বন্ধ্যা হচ্ছে। এক সময় উর্বর এ জীবন্ত মাটি আজ উৎপাদনশীলতা হারাচ্ছে।
বক্তারা আরও জানান, মাটির এই অবক্ষয় রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে, নইলে ভবিষ্যতে বসবাস ও কৃষিকাজ উভয়ই কঠিন হয়ে পড়তে পারে। বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের চেতনাকে ধারণ করে মাটি রক্ষা, দূষণমুক্তকরণ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ পৃথিবী গড়ার আহ্বান জানান বক্তারা।
ছবি- উপকূলীয় শ্যামনগরে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস উদযাপন