সোনাই ডেক্স: জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর- বিখ্যাত এ উদ্ধৃতিটি যিনি লিখেছিলেন তিনি স্বামী বিবেকানন্দ। বিশ্লেষকরা ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে বিভিন্ন ধর্মমতের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক স্থাপনের কৃতিত্ব বিবেকানন্দকে দিয়ে থাকেন। বিবেকানন্দ এর পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। ডাকনাম ছিল বীরেশ্বর এবং নরেন্দ্র বা নরেন। আজ তার শুভ জন্মদিন। স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি ভারতের উত্তর কলকাতার ৩ নম্বর গৌরমোহন মুখোপাধ্যায় স্ট্রিটের এক উচ্চবিত্ত কায়েস্ত দত্ত হিন্দু বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিবেকানন্দ ছিলেন বহুগুণে গুণান্বিত। তিনি ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী, দার্শনিক, লেখক, সংগীতজ্ঞ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় অতীন্দ্রিয়বাদী রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য। প্রচণ্ড রকম মেধার অধিকারী স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৭১ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশনে ভর্তি হন। পরে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। সেই বছর তিনিই ছিলেন ওই পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ একমাত্র ছাত্র। এ ছাড়া তিনি জেনেরেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশনে পড়েছেন। ১৮৮১ সালে তিনি চারুকলা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। স্বামী বিবেকানন্দ প্রচুর বই পড়তেন। দর্শন, ধর্ম, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, শিল্পকলা ও সাহিত্য বিষয়ে বইপড়ায় তার বিশেষ আগ্রহ ছিল । বেদ, উপনিষদ, ভাগবদগীতা, রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ প্রভৃতি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পাঠেও তার আগ্রহ ছিল। এ ছাড়া তিনি হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নিতেন। এবং নিয়মিত অনুশীলন, খেলাধুলা ও সমাজসেবামূলক কাজকর্মে অংশ নিতেন। স্বামী বিবেকানন্দ ব্রিটিশ ভারতে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ধারণাটি প্রবর্তন করেন। তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। গুরু রামকৃষ্ণ দেবের মৃত্যুর পর বিবেকানন্দ ভারতীয় উপমহাদেশ ভালোভাবে ঘুরে দেখেন এবং ব্রিটিশ ভারতের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞানার্জন করেন। তার রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চিকাগো বক্তৃতা, কর্মযোগ, রাজযোগ, জ্ঞানযোগ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বেদান্ত, ভারতে বিবেকানন্দ, ভাববার কথা, পরিব্রাজক, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, বর্তমান ভারত, বীরবাণী (কবিতা-সংকলন), মদীয় আচার্যদেব ইত্যাদি। বিবেকানন্দ সংগীতজ্ঞ ও গায়কও ছিলেন। তার রচিত দুটি বিখ্যাত গান হল খণ্ডন-ভব-বন্ধন ও নাহি সূর্য নাহি জ্যোতি। এ ছাড়া নাচুক তাহাতে শ্যামা, ৪ জুলাইয়ের প্রতি, সন্ন্যাসীর গীতি ও সখার প্রতি তার রচিত কয়েকটি বিখ্যাত কবিতা। ১৯০২ সালের ৪ জুলাই এ জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব মৃত্যুবরণ করেন। ভারতে বিবেকানন্দকে ‘বীর সন্ন্যাসী’ নামে অভিহিত করা হয় এবং তার জন্মদিনটি ভারতে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালিত হয়।